মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ, কাটল অ্যাডমিট জট
মাধ্যমিকের পরীক্ষার্থীদের অ্যাডমিট কার্ড নিয়ে বিভ্রাট কাটল মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে। অ্যাডমিট কার্ডের অভাবে এক জন পরীক্ষার্থীও মাধ্যমিকে বসার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবে না বলে আশ্বাস দেন তিনি। মধ্যশিক্ষা পর্ষদ জানিয়েছে, আজ, রবিবারও আবেদনপত্র পূরণ করে সল্টলেকে পর্ষদের সদর দফতর থেকে অ্যাডমিট কার্ড সংগ্রহ করতে পারবে পরীক্ষার্থীরা। কাল, সোমবার শুরু হচ্ছে এ বারের মাধ্যমিক।
গত বছর উচ্চ মাধ্যমিক শুরুর একদিন আগে, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশেই অ্যাডমিট কার্ড দেওয়া হয়। যে প্রক্রিয়া শেষ হতে মধ্যরাত পেরিয়ে যায়। অনেক পরীক্ষার্থী শেষ মুহূর্তে অ্যাডমিট কার্ড পেলেও সময়মতো বাড়ি ফিরে পরীক্ষায় বসতে পারেনি।
পরীক্ষা দিতে পারবে সকলেই। মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পর উচ্ছ্বাস মাধ্যমিক
পরীক্ষার্থীদের। সল্টলেকে শৌভিক দে-র তোলা ছবি।
অ্যাডমিট কার্ড না পেয়ে শনিবার দিনভর শহরের বিভিন্ন জায়গায় পথ অবরোধ, বিক্ষোভ করেন মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের অনেকে। সল্টলেকে পর্ষদের দফতরের সামনেও চলে অবস্থান। এদের কাঁকিনাড়া হাইস্কুলের মাধ্যমে পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শুক্রবার হাইকোর্টের রায়ে এই পড়ুয়াদের পরীক্ষায় বসা অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। শনিবার বিকেলে নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করে দেন, ছাত্রছাত্রীদের কোনও দোষ নেই। তাই তাদের পরীক্ষায় বসা থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। রবিবার আবেদনপত্র পূরণ করে অ্যাডমিট কার্ড সংগ্রহ করে সোমবার পরীক্ষা দেবে ওই পড়ুয়ারা। মৌখিক পরীক্ষা না হওয়ায় তারা কত নম্বরে পরীক্ষা দেবে, তাদের পরীক্ষাকেন্দ্র কোথায় হবে, সে সবও ঘোষণা করেন তিনি।
মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণায় ওই ছাত্রছাত্রীরা আশ্বস্ত হলেও প্রশ্ন উঠেছে, যে স্কুলের দোষে এমন গোলমাল হল, তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে? যদিও সরকার এবং মধ্যশিক্ষা পর্ষদ জানিয়েছে, আপাতত পরীক্ষার্থীদের মাধ্যমিকে বসার সুযোগ করে দেওয়াটাই তাঁদের প্রাথমিক লক্ষ্য।
তাদের স্কুলের ৪১৩ জন পরীক্ষার্থী অ্যাডমিট কার্ড না পাওয়ায় কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করে কাঁকিনাড়া হাইস্কুলের পরিচালন সমিতি। এই পরীক্ষার্থীরা কাশীপুর সনাতন ধর্মীয় বিদ্যালয়, তারাতলার শ্রী শম্ভু সদন বিদ্যালয়, বাঁশদ্রোণীর বিদ্যানিকেতন, পিকনিক গার্ডেন এলাকার নিউ এরা ইত্যাদি স্কুলের ছাত্রছাত্রী। কাঁকিনাড়া হাইস্কুলের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন করে পরীক্ষা দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল তাদের। কিন্তু তারা রেজিস্ট্রেশন নম্বরই পায়নি। ফলে পরীক্ষায় বসার আবেদনপত্র পূরণ করতে পারেনি এবং এদের অ্যাডমিট কার্ডও আসেনি। হাইকোর্ট শুক্রবার রায় দিয়ে জানায়, ছাত্রছাত্রীদের হয়ে পরিচালন সমিতি এ ব্যাপারে মামলা করতে পারে না। মামলা করতে পারত পড়ুয়ারাই। তা ছাড়া, যথেষ্ট সময় পাওয়া সত্ত্বেও পর্ষদের কাছে ওই স্কুল দরবার করেনি। তাই ৪১৩ জনের পরীক্ষায় বসার আবেদন খারিজ করে দেয় হাইকোর্ট।
রায়ের বিরোধিতা করে বিক্ষুব্ধ পড়ুয়ারা ওই দিনই বিচারপতির এজলাসের বাইরে এবং পরে আদালতের গেটে বিক্ষোভ দেখায়। শনিবার সকাল থেকে ফের শুরু হয় গোলমাল। সকাল সাড়ে ১১টা থেকে ২টো পর্যন্ত কাশীপুর সনাতন ধর্মীয় বিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা, তাদের অভিভাবক এবং স্থানীয় বাসিন্দারা কাশীপুর রোড অবরোধ করেন। অবরোধের জেরে বিটি রোড, গিরিশ অ্যাভিনিউ, যতীন্দ্রমোহন অ্যাভিনিউয়ে যানজটে নাকাল হন মানুষ। অ্যাডমিট কার্ড না পাওয়ায় তারাতলার শ্রী শম্ভু সদন বিদ্যালয়ে এ দিন ভাঙচুর করে একদল পড়ুয়া। একই অভিযোগে অবরোধ হয় পিকনিক গার্ডেন এবং কুষ্ঠিয়া রোডের সংযোগস্থলেও।
মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সামনে অবস্থানে বসে বাঁশদ্রোণীর বিদ্যানিকেতন স্কুলের কিছু পড়ুয়া। সেখানেই বইপত্র খুলে পড়াশোনা করতে শুরু করে তারা। কিন্তু অ্যাডমিট কার্ড না পাওয়ায় পরীক্ষায় বসার অনিশ্চয়তার ফলে এদের অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ে বলে অভিযোগ। পর্ষদ কর্তৃপক্ষের থেকে কোনও আশ্বাস না পেয়ে শুরু হয় কান্নাকাটি। বিকেলে মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাসে হাসি ফেরে তাদের মুখে।
নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “খোঁজ নিয়ে দেখেছি, কাঁকিনাড়া হাইস্কুল প্রথম দফায় যে পড়ুয়াদের নামের তালিকা পাঠিয়েছিল, তাদের রেজিস্ট্রেশন করে অ্যাডমিট কার্ড পাঠানো হয়েছে। কিন্তু ৪১০ জনেরই রেজিস্ট্রেশনই হয়নি। এটা সরকার বা মধ্যশিক্ষা পর্ষদের দোষ নয়।” তিনি জানান, বাচ্চারা পড়াশোনা করছে। এ সবে তাদের দোষ নেই। তাই কার গাফিলতিতে এই ঘটনা, তা না ভেবে পড়ুয়াদের কথা ভেবেই পরীক্ষায় বসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য। এ জন্য অন্যান্য কাজ সেরে তিনি নবান্নে ফিরেছেন বলেও জানান মমতা। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “শিক্ষা দফতরের সচিব এবং মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সঙ্গে কথা বলি। তাঁদের বলি এটা মানবিকতার সঙ্গে দেখতে হবে। ছাত্রদের ভবিষ্যৎ যাতে নষ্ট না হয় এবং তারা যেন পরীক্ষা দিতে পারে। তাই ৪১০ জনকে বিশেষ সুযোগ দিচ্ছি। রবিবার সকাল থেকে তারা মধ্যশিক্ষা পর্ষদে গিয়ে আবেদনপত্র পূরণ করবে।” তিনি জানান, বিধাননগর মিউনিসিপ্যাল স্কুলে বসে পরীক্ষা দেবে ছাত্রছাত্রীরা। তবে রেজিস্ট্রেশন হয়নি বলে এদের মৌখিক পরীক্ষা হয়নি, তাই নিয়মিত পড়ুয়াদের মতো ৯০ নম্বরে নয়, এরা পরীক্ষা দেবে ১০০-য়। তাদের জন্য অন্য ব্যবস্থা হবে কী ভাবে? পর্ষদের ব্যাখ্যা, বহিরাগত পরীক্ষার্থী হিসেবে পরীক্ষা দেবে ছাত্রছাত্রীরা। প্রশ্ন ১০০ নম্বরের।
মধ্যশিক্ষা পর্ষদের প্রশাসক কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায় বৃহস্পতিবার জানিয়েছিলেন, স্কুলের দোষে কোথাও কোথাও অ্যাডমিট কার্ড যায়নি। এতে পর্ষদের হাত নেই। এই পরীক্ষার্থীদের জন্য উদ্যোগী হয়ে শেষ লগ্নে অ্যাডমিট কার্ড দেওয়ার কথাও শুক্রবারও দেননি তিনি। মমতার হস্তক্ষেপের পরেই শুরু হয় তৎপরতা। শনিবার প্রশাসক বলেন, “শিক্ষামন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে। নির্দেশ এসেছে, কোনও পরীক্ষার্থী পরীক্ষা দিতে পারছে না এমন ঘটনা যেন না ঘটে।” শনিবারই বিক্ষোভকারীদের অনেকে অ্যাডমিট কার্ড নিয়েছে বলে জানান তিনি। অ্যাডমিট কার্ড দেওয়ার জন্য ২৪ ঘণ্টা কাজ চলবে বলে আশ্বাস দেন তিনি।
হাইকোর্টের রায়ের পরেও ওই পরীক্ষার্থীদের অ্যাডমিট কার্ড দেওয়া হল কী করে? কল্যাণময়বাবু বলেন, “কোর্টের রায়ে কাঁকিনাড়া স্কুল থেকে পরীক্ষা দিতে পারবে না পরীক্ষার্থীরা। কিন্তু অন্য স্কুল থেকে তো পরীক্ষা দেওয়ায় বাধা নেই।” প্রশাসক জানান, যারা এখনও আবেদন পূরণ করতে পারেনি, তারা আজ, রবিবার সকাল আটটা থেকে দশটার মধ্যে পর্ষদের দফতরে এলে দু’টোর মধ্যে অ্যাডমিট কার্ড পাবেন। তাঁর কথায়, “প্রস্তুতি নিয়েও কোনও পরীক্ষার্থী পরীক্ষা দিতে পারছে না, তা আমরা চাই না।”
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.