|
|
|
|
|
|
|
পুস্তক পরিচয় ৩... |
|
আড্ডা, চাট, দিব্য বিরাজমান |
আশিস পাঠক |
আমি বালক-মনোরঞ্জক গল্প লিখিবার জন্য কলম ধরি নাই। আমি এই সত্যটাই বুঝাইতে চাহিয়াছিলাম যে, সততা ও সুনীতি মানুষের একমাত্র রক্ষাকবচ, সংসারে ও সমাজে বাস করিয়া নিষ্ঠার সঙ্গে নিজের দৈনন্দিন কর্তব্য পালন করিতে করিতে যে সাধ্যমত পরের উপকার করিবে, তাহার মার নাই...আমি নিছক ভূতুড়ে গল্প বলিবার জন্য ‘বঙ্গবাসী’ ও ‘জন্মভূমি’র শরণাপন্ন হই নাই। তোমরা ভুল করিয়া আমাকে শিশু সাহিত্যিকের পর্যায়েই ফেলিয়া রাখিলে, আমার জীবন দর্শনকে জীবনে কাজে লাগাইলে না।’ ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায়ই লিখেছিলেন কথাগুলো, কিন্তু সরাসরি সশরীরে নয়, এ আসলে স্বপ্নলোকে আসা ত্রৈলোক্যনাথের কল্পিত বয়ান। ভুতুড়ে গল্পের গল্পকার তিনি, কিন্তু নিছক তাতেই তাঁকে সীমাবদ্ধ রাখলে তা হবে সেই অন্ধকারেরই সামিল যে অন্ধকার জমিয়া জমিয়া ভূত হয়!
ইংরেজিতে ত্রৈলোক্যনাথ এমনিতেই দুর্লভ। তার মধ্যে শিবরাত্রির সলতের মতো যে দু-একটি চোখে পড়ে তাদের সম্পর্কেও বেশ সতর্ক থাকতে হয়, এই বুঝি বারো ভূতের খপ্পরে পড়ে ফের ত্রৈলোক্য নিছক লুল্লুভূতের গপ্পোকার হয়ে গেলেন। অর্ণব ভট্টাচার্যের অনুবাদে ত্রৈলোক্যনাথের সাতটি গল্পের সংকলন অব গোস্টস অ্যান্ড আদার পেরিলস (ওরিয়েন্ট ব্ল্যাকসোয়ান, ৪২৫.০০) সেই অবনমন থেকে বাঁচিয়েছে ত্রৈলোক্যনাথকে, এইটেই আপাতত স্বস্তির কথা। সাতটি গল্প আছে এই বইয়ে। তিনটি আদতেই গল্প— বীরবালা, লুল্লু ও নয়নচাঁদের ব্যবসা। বাকি চারটির দুটি মুক্তামালা থেকে এবং দুটি ডমরুচরিত থেকে। এই নির্বাচনে স্পষ্ট, কেবল ক’টি ভূতের গল্প নয়, ত্রৈলোক্যনাথকেই অনুবাদ করতে চাওয়া হয়েছে। বইয়ের শুরুতেই তাই দশ পৃষ্ঠার না-ইংরেজি শব্দের গ্লসারি। আড্ডা, বাপধন, বাদশা, আতর, চাট, বামুন, দাওয়া, চাষা, গাড়ু, ঘটি, খোট্টা, ক্রোশ, যক, খুড়ি, কদমবুসি-র মতো শব্দ সেখানে দিব্য বিরাজমান। তাদের অনুবাদ করা হয়নি। করলে যে ডমরুধর-স্রষ্টার গল্পগুলোকে বৈঠক ছাড়িয়ে ঘাড়ধাক্কা দিয়ে ড্রয়িংরুমে পাঠিয়ে দেওয়া হয় সেই চেতনাটি এ বইয়ের সর্বত্র বিলক্ষণ বিদ্যমান। মূলের প্রতি এই সরস বিশ্বস্ততাই অর্ণবের অনুবাদগুলিকে ব্যতিক্রমী করেছে। তার সঙ্গে ত্রৈলোক্যনাথের সংক্ষিপ্ত জীবনী এবং অনুবাদকের উত্তরকথনে ম্যাজিক রিয়্যালিজম, গল্প বলার নিজস্ব ধরন নিয়ে আলোচনা বুঝিয়ে দেয়, ভুল করেও এ অনুবাদ ত্রৈলোক্যনাথকে শিশুসাহিত্যিকের পর্যায়ে ফেলে রাখেনি। |
|
|
|
|
|