একুশে জাঁক বেড়েছে, প্রশ্ন আবেগ নিয়েই
শুরুটা হয়েছিল ২০০২ সালে। উত্তর ২৪ পরগনার সীমান্ত শহর বনগাঁর কিছু সাংস্কৃতিক কর্মী, শিক্ষক, কবি-সাহিত্যিকদের হাত ধরে।
ভাষা শহিদদের স্মরণে ঐতিহাসিক সব গানের সঙ্গে গলা মেলাতেন কবি, সাহিত্যিক, ছাত্র, শিক্ষক, চাকুরিজীবী সকলেই। ‘নো ম্যানস ল্যান্ড’-এ তৈরি হত এক আবেগময় মূহূর্ত। অস্থায়ী বেদি ফুলের মেলায় ভরিয়ে দিতেন ভাষাপ্রেমীরা। আজকের মতো এত মানুষ জড়ো না হলেও দুই বাংলার সেই বাঁধনহারা আবেগের কাছে হার মেনেছিল সীমান্তের কঠোর নিরাপত্তার চোখরাঙানি। একুশে উদযাপন কমিটির ব্যানারে সেই শহিদ স্মরণ অনুষ্ঠানে ক্রমে থাবা বসান রাজনীতির কারবারিরা। প্রথমে সিপিএম এবং পরে তৃণমূল। আর এই রাজনীতির আবর্তে ব্রাত্য হতে-হতে শুরুর সেই মুখগুলি প্রায় হারিয়ে গিয়েছে। আবেগের জায়গা নিয়েছে জাঁকজমক। অনুষ্ঠানের ব্যাপকতা বেড়েছে, কমেছে মূল উদ্দেশ্য।
অমর একুশে। শুক্রবার পেট্রাপোলে নো-ম্যানস ল্যান্ডে নির্মাল্য প্রামাণিকের তোলা ছবি।
বাম আমলে একুশে জুলাই উদযাপন কমিটিকে সরিয়ে অনুষ্ঠানের দখল নিয়েছিল সিপিএম সাংসদ অমিতাভ নন্দীর নেতৃত্বাধীন গঙ্গা-পদ্মা মৈত্রী সমিতি। সিপিএম নেতা শ্যামল চক্রবর্তীও অনুষ্ঠানে এসেছেন। বামপন্থী বুদ্ধিজীবী, সংস্কৃতি কর্মীদেরই মঞ্চে দেখা যেত। গত লোকসভা নির্বাচনের পর থেকে বামেদের সরিয়ে ক্রমে ‘ভাষার অধিকার’ ছিনিয়ে নিতে থাকে তৃণমূল। এমনও দেখা গিয়েছে, একই দিনে সিপিএম-তৃণমূল আলাদা অনুষ্ঠান করছে। তৃণমূলের পাল্টা হিসাবে শ্যামল চক্রবর্তীরা বহু মানুষ এনে জড়ো করার হুমকিও দিয়েছিলেন। গত কয়েক বছর অবশ্য সিপিএম আসরে নেই। খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের নেতৃত্বে তৃণমূল গোটা অনুষ্ঠানের ব্যবস্থাপনায় রয়েছে।
কী বলছেন প্রায় হারিয়ে যাওয়া একুশে উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক পার্থসারথি দে?
পার্থবাবুর মতে, “সংস্কৃতির মধ্যে রাজনীতি ঢুকে পড়লে মূল উদ্দেশ্য গৌণ হয়ে যায়। আবেগের অনুষ্ঠান এখন উৎসবে পরিণত হয়েছে।” বনগাঁর এক কবির কথায়, “এই অনুষ্ঠান করলে সংবাদমাধ্যমে প্রচার পাওয়ার সুযোগ থাকে। রাজনীতির কারবারিরা সেই সুযোগ ছাড়তে চান না। কোনও বছর ইন্দ্রনীল সেন, কোনও বার ইন্দ্রানী সেন, কখনও ‘ভূমি’-কে নিয়ে এসে চমক দেওয়া হচ্ছে।” যদিও এ সব যুক্তি মানতে নারাজ খাদ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “২০০০ সাল থেকে আমরা অনুষ্ঠান করতে চেয়েছিলাম। তখন আমাদের পেট্রাপোলে যেতে দেওয়া হত না। গাইঘাটার চাঁদপাড়ায় অনুষ্ঠান করতাম। এখন রাজ্যে আমরা ক্ষমতায়। ও পার বাংলার মানুষ আশা করেন, আমরা তাঁদের সুখ-দুঃখ-আনন্দে পাশে থাকি। সে জন্যই এই অনুষ্ঠানের আয়োজন। আবেগ কমেনি, বরং বেড়েছে।”
স্থানীয় বাসিন্দারা জানালেন, বছর তেরো আগে ভাষা দিবস নিয়ে বনগাঁর মানুষ বিশেষ মাথা ঘামাতেন না। সীমান্তে অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার পর থেকেই ভাষা নিয়ে বেশি করে আবেগ এখনকার মানুষের মধ্যে তৈরি হয়। ’৫২-র ভাষা আন্দোলন নিয়ে চর্চাও বেড়েছে। পত্রিকা প্রকাশ, আলোচনা সভার মাধ্যমে মানুষের আগ্রহ বেড়েছিল, যা আজ সত্যিকারের ভাষা স্মরণের অনুষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। এ পার বাংলার মানুষের সঙ্গে তাঁদের আবেগকে গুলিয়ে ফেলা ঠিক হবে না বলে জানালেন বাংলাদেশি শিক্ষক সাহাবুদ্দিন। তাঁর কথায়, “ভাষা দিবসে আমাদের যা ফুল বিক্রি হয়, সারা বছর তা আপনাদের হয় না। তবে ধীরে-ধীরে আপনাদের মধ্যেও যে ভাষা দিবস নিয়ে আগ্রহ তৈরি হয়েছে তা দেখে ভাল লাগছে।”





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.