আপনার সাহায্যে...
প্র: বাড়ির পোষ্য কুকুরটি মারা যাওয়ার পর বাড়ি জুড়ে শোকস্তব্ধ পরিবেশ। যেন সন্তানশোক। কী করে সামলে ওঠা যায়?
উ: আসলে পোষ্যটি চলে যাওয়ায় যে শূন্যতা তৈরি হয়েছিল, সেটা রয়েই গেছে।

প্র: বাড়ির সবাই বেরিয়ে গেলে যিনি বাড়িতে একা থাকেন তাঁর তো আরও কষ্ট।
উ: তার মানে সেই পোষ্যটিই ওঁর সব সময়ের সঙ্গী ছিল। কুকুরটিকে ঘিরেই উনি নিজের একটা জগৎ তৈরি করে নিয়েছিলেন।

প্র: তাই বলে পোষা কুকুরের জন্য এ রকম কষ্ট? শোক তো আস্তে আস্তে কমে আসে শুনেছি...
উ: পোষ্যরা নির্ভেজাল আনন্দ দিতে পারে। দুই পক্ষেই থাকে শর্তহীন ভালবাসা। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পোষ্যরা হয়ে যায় সন্তানের মতো। ব্যাপারটা অনেকটা সন্তান শোকের মতো বলতে পারেন। অনেক সময় দেখবেন নিকটাত্মীয় চলে গেলেও তেমন কষ্ট হয় না, যতখানি পোষ্য চলে গেলে হয়!

প্র: তাই!
উ: দেখুন সম্পর্ক যত কাছেরই হোক না কেন, তা কখনওই একশো ভাগ মধুর হয় না। দুটো মানুষের মধ্যে রাগ, দুঃখ থেকেই যায়। কিন্তু পোষ্যরা যেহেতু কথা বলে না, ওদের সঙ্গে সম্পর্কটা পুরোপুরি মধুরই হয়ে থাকে। তাই পোষ্য চলে যাওয়াটা অপূরণীয় ক্ষতি বলতে পারেন।
প্র: এতে তো ব্যক্তিগত জীবন ভীষণ ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়?
উ: তা তো বটেই। বিশেষ করে যাঁরা শোকটা কাটিয়ে উঠতে পারেন না। চার দিক শূন্য মনে হয়। কিছু ভাল লাগে না, বিষণ্ণতা গ্রাস করে। স্বাভাবিক জীবন থেকে অনেকখানি সরে যান।

প্র: কিন্তু এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে গেলে কী করতে হবে? নতুন আরও একটি পুষ্যি নেবেন?
উ: একদমই না। তাতে উল্টে ক্ষতি হতে পারে।

প্র: কী রকম?
উ: এক জনের দুঃখ যে অন্য জন ভোলাতে পারবে তার কোনও কথা নেই। আগের পোষ্যটির আচার-আচরণ যেমন ছিল, সে রকম নতুন পোষ্যটির না-ও হতে পারে। অফিস থেকে আসার পর আগের পোষ্যটি যে ভাবে ছুটে আসত বা গা চাটত, সে রকম নতুন পোষ্যটি না-ও করতে পারে। তাতে মন ভেঙে যেতে পারে। তা ছাড়া এদের আয়ুষ্কাল কম থাকে। নতুন পোষ্যটিও যদি মরে যায়, তবে তো আবার ধাক্কা। তাই এক বারের শোক ধাতস্থ হওয়ার আগে নতুন করে আর পুষ্যি না নেওয়াই উচিত। জোর করে শোক চাপা দিয়ে রাখার চেষ্টা করা মোটেই স্বাস্থ্যকর নয়।

প্র: জোর করে কেন? এ তো শোক ভোলার চেষ্টা। অসুবিধে কোথায়?
উ: অনেক সময় দেখবেন খুব কাছের কেউ মারা গেলে অনেকে মরা মুখ দেখতে চান না। আগের মুখটাই স্মৃতিতে রেখে দিতে চান। এটা আসলে জোর করে শোকটা চেপে রাখা। শোক স্বাভাবিক। তাকে জোর করে আটকে রাখলে সেটা কোথাও জমা হয়ে থাকে। পরবর্তীতে ডিপ্রেশনের মতো সমস্যা বা নানা ধরনের জটিলতা আসতে পারে।
প্র: কিন্তু শোক কাটিয়ে বেরোব কী করে?
উ: প্রথমত নিজেকে কিছুটা সময় দিতে হবে। আর শোকটা কাটানোর জন্য নিজেই উদ্যোগী হতে হবে। নিজেকে বোঝান, পোষ্যর আয়ুষ্কাল কম। সেটা জেনেই এগিয়েছি। শোক জমতে দেবেন না।

প্র: কী ভাবে?
উ: কান্নাকাটি করে মনকে হাল্কা করুন। ইচ্ছে হলে পোষ্যর সঙ্গে ভাল লাগার মুহূর্তগুলো কারও সঙ্গে ভাগ করে নিতে পারেন। ওর ছবি থাকলে দেখতে পারেন। কিন্তু এমন কাউকে পোষ্যর কথা বলবেন না, যিনি এ সব নিয়ে মজা করবেন।

প্র: তাতে সমস্যা হবে?
উ: যাঁরা পোষ্য রাখেন না, তাঁদের অনেকেই এই কষ্টটা উপলব্ধি করতে পারবে না। সে সময় এমন একটা মানসিক অবস্থা থাকে যে এ ধরনের কথার প্রতিবাদ করারও ক্ষমতা থাকে না। শুধু ভেতরে ভেতরে গুমরোনো। তাই এ রকম কারও কাছে আপনার পোষ্য নিয়ে কথা না বলাই ভাল।

প্র: এই ভাবেই কি শোক সামলে ওঠা যাবে?
উ: হ্যাঁ। আর সময় সব ক্ষতই সারিয়ে দেয়। কষ্টও আস্তে আস্তে ফিকে হয়ে আসবে। তবে যদি দেখেন বছর খানেক পরও ব্যাপারটা চলছে, রোজই মনখারাপ হচ্ছে, তবে ডাক্তার দেখাতে হবে।

মন খারাপ হলেই টিভি চালিয়ে দিন

পোষ্য মারা গেলে মন খারাপ হওয়াটাই স্বাভাবিক। তার থেকে বেরোবার রাস্তা নিজেকেই খুঁজতে হবে। সবার প্রথমে আগেকার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার চেষ্টা করুন। যেমন বিকেলে চা খাওয়া বা সন্ধেবেলা টিভির সামনে বসা। জানি কষ্ট হবে, তবুও করবেন। স্বাভাবিক জীবনযাপনের চেনা ছন্দে ফিরতে দরকারে নোটবুকে লিখে রাখুন সারা দিনে কখন কী করবেন। সেই মতো দিন পনেরো চললে তাতেই অভ্যস্ত হয়ে উঠবেন। আগের ভাল লাগাগুলোকে ফিরিয়ে আনতে হবে। সিনেমা দেখা বা রেস্তোরাঁয় খেতে যাওয়া। অনেককেই বলতে শুনেছি, এত শোকেও অমুকে বাড়িতে বসে টিভি দেখছেন। এ সব কথায় কান দেবেন না। কারণ এগুলিই মানুষকে স্বাভাবিক জীবনে ফেরায়। দিনের যে সময়টা পোষ্যর সঙ্গে সময় কাটাতেন, সে সময়টায় সবচেয়ে বেশি কষ্ট হয়। শূন্যতা গ্রাস করে। তখন অন্য কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখুন। অনেকে গান শোনেন। কিন্তু গান শুনলেও মন ফাঁকা থাকায় বার বার পোষ্যর কথা মনে আসতে পারে। আর করুণ গান শুনলে তো কথাই নেই। বরং সিনেমা দেখুন বা বই পড়ুন। যাতে মনও ব্যস্ত থাকে। সামাজিক অনুষ্ঠানগুলোতে যাওয়ার চেষ্টা করুন। ভাল না লাগলেও জোর করেই যাবেন। সবার সঙ্গে মিশলে বিষণ্ণতা কাটাবে।
মনকে বোঝান, যে চলে গেছে, সে আর ফিরবে না। এটাই বাস্তব। তাকে বাদ দিয়েই জীবনকে ভাবতে হবে। অতীতের দিকে আর ফিরে তাকানো নয়। একা লাগলে প্রতিবেশি বা কোনও বন্ধুকে জানান আপনার মনের অবস্থা। তাঁদের সাহায্য চান। নিজেকে ঘরবন্দি করে রাখবেন না। যে কোনও কাজে বাইরে বেরোন। তবে মাস খানেক পরও যদি দেখেন, ঘুমোতে পারছেন না বা বেশি ঘুমোচ্ছেন, খেতে ইচ্ছে করছে না বা বেশি খাচ্ছেন, মাথা ব্যথা, দ্রুত ওজন কমা বা বেড়ে যাওয়া, খিটখিটে মেজাজ, পিরিয়ডের গণ্ডোগোলের মতো কিছু সমস্যা হচ্ছে, তবে অবশ্যই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।
যোগাযোগ- ৯০৫১০৩৮১৩৮

যোগাযোগ- ২৪৬৩৩৫০৫
সাক্ষাৎকার: রুমি গঙ্গোপাধ্যায়


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.