কবিরাজখানা
রাজ্যশাসনের সঙ্গে সঙ্গে কোচবিহারের মহারাজারা নানা জনহিতকর কাজও করে গেছেন প্রজাদের জন্য। রাস্তাঘাট, স্কুল-কলেজের সঙ্গেই প্রজাদের স্বাস্থ্য, চিকিৎসা, পানীয় জল সরবরাহএ সবের ব্যবস্থায় ব্যাপৃত থেকেছেন। চিকিৎসার জন্য আধুনিক হাসপাতাল ও অ্যালোপ্যাথ চিকিৎসার পাশাপাশি গ্রামাঞ্চলে ইউনানি চিকিৎসার ব্যবস্থাও করে গিয়ে ছেন। এ ভাবে আয়ুর্বেদ চিকিৎসার জন্য আয়ুর্বেদ চিকিৎসালয় গড়ে বিখ্যাত কবিরাজদের নিযুক্ত করেন। এখানে শুধু প্রজারাই নয়, রাজ পরিবারের সদস্য চিকিৎসা করাতেন।
কোচবিহার রাজপ্রাসাদের কাছে এক সময় বেশ খানিকটা জায়গা নিয়ে তৈরি হয়েছিল আয়ুর্বেদ চিকিৎসালয়বলা হত ‘কবিরাজখানা’। এখানে ছিল নানা ঔষধির গাছগাছড়া। এক সময় এই কবিরাজখানায় রাজবৈদ্য হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন বিরজাচরণ গুপ্ত, যাঁর লেখা আয়ুর্বেদিক গ্রন্থ ‘বনৌষধি দর্পণ’ (প্রকাশ কাল: ১৯০৮)।
ছবি নির্মলেন্দু চক্রবর্তী।
চিকিৎসার পাশাপাশি উনি এখানে নানা কবিরাজি ওষুধ তৈরিও করাতেন। ওষুধ তৈরির জন্য বিভিন্ন গাছগাছড়ার প্রয়োজনে মহারাজ দেশবিদেশ থেকে নানা গাছ গাছড়া, কবিরাজি লতাপাতা আনিয়ে শহরের উত্তর প্রান্তে এক বাগান তৈরি করেছিলেন, যা ‘কবিরাজবাগান’ নামে পরিচিত ছিল। বাগান ধ্বংসের পথে।
কবিরাজখানার পুরনো ভবন আর নেই, কোচবিহার দেবত্তোর ট্রাস্ট এক ছোটখাটো বাড়ি তৈরি করেছে। তাতে আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক ও অন্য কর্মী নিয়োগ করে চিকিৎসা ব্যবস্থা জারি রেখে রাজ-ঐতিহ্য বজায় রাখা হচ্ছে। রোজ প্রচুর রোগী এখানে চিকিৎসা করাতে আসেন ও তাঁদের ওষুধ দেওয়া হয় দাতব্য কবিরাজখানা থেকে।

সঙ্গীত-সন্ধ্যা
বিজ্ঞাপনে ‘শাস্ত্রীয় সঙ্গীতসন্ধ্যা’-র কথা থাকলেও বালুরঘাটবাসী মূলত শুনল রাগাশ্রয়ী গান। পরিবেশক আর কেউ ননসুগত মারজিত। শিক্ষা সংক্রান্ত নানা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব কিংবা অর্থনীতির গবেষণালব্ধ প্রবন্ধের মাধ্যমে তাঁর অবিসংবাদী পরিচয় বালুরঘাটবাসী পেলেও এই প্রথম পেল তাঁর সাঙ্গীতিক পরিচয়। যখন তিনি কলমের বদলে হারমোনিয়াম ধরলেন এবং পরিবেশন করলেন পর পররাগপ্রধান গান।
সরস্বতী-বন্দনা দিয়ে শুরু হয়েছিল বালুরঘাট নাট্যতীর্থের সেই অনুষ্ঠান। একেকটি রাগের বন্দিশ আর তার পর সেই রাগের বাংলা গান। এ ভাবেই পরিবেশিত হল পুরিয়া কল্যাণ ও ছায়া নট, সাযুজ্য রেখে নজরুলগীতি ‘শূন্য এ বুকে পাখি মোর ফিরে আয়’। আর ভীষ্মদেব চট্টোপাধ্যায়ের গান। শেষে ভৈরবী ‘যদি মনে পড়ে সে দিনের কথা’। সুগত মারজিতের এই ভিন্ন পরিচয়ের সাক্ষী থাকার জন্য সঙ্গীত-রসিকদের আগ্রহ ছিল চোখে পড়ার মতো। শাস্ত্রীয় সঙ্গীতশিল্পী রাজর্ষি সাহা রায়ের কথায়, “সুগত মারজিতের নাম শুনে এসেছিলাম। রাগাশ্রয়ী ভাল গান শুনলাম।” সুগত বলেন, “এই জায়গা সাহিত্য, সঙ্গীত ও সংস্কৃতির প্রকৃত সমঝদার।” সুগতবাবুর সঙ্গে তবলায় ছিলেন শিল্পী উজ্জ্বল পাল।
এ মঞ্চে পরিবেশিত হয় কুশীলব প্রযোজিত ‘নাটকের মতো দেখতে’ শিরোনামের নাটকযার নির্দেশনায় ছিলেন বৈশাখী মারজিত। নাটকটিতে মূলত শহর ও তার সংস্কৃতির বহুবর্ণ স্তর বোনা হয়েছে সুচারু দক্ষতায়।

প্রবাদ-প্রবচন
“প্রাচীনকাল থেকে উত্তরবঙ্গের রাজবংশী সমাজের মানুষের মুখে মুখে প্রবাদ প্রবচন প্রচলিত ছিল। প্রবাদ প্রবচনগুলি অলিখিত অবস্থায় প্রবাহমান। লোকশিক্ষায় প্রবাদ প্রবচন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শিক্ষার যত অগ্রগতি ঘটেছে এবং যতই বিভিন্ন সংস্কৃতির মিলন ঘটেছে, ততই লোকসাহিত্য হারিয়ে যেতে বসেছে।” অরবিন্দ ডাকুয়ার ‘রাজবংশী সমাজের প্রবাদ প্রবচন’ হারিয়ে যাওয়া লোক সাহিত্য দু’মলাটে বন্দি করেছে। স্থান পেয়েছে ৩১৪১ প্রবাদ প্রবচন এবং বাংলা অর্থ। প্রবাদ প্রবাদ প্রবচনের নান্দনিক ও নৈতিকদু’দিকে সমান গুরুত্ব দিয়েছেন লেখক। প্রবাদ সম্পর্কে জার্মানিতে বলা হয় ‘অ্যাজ দ্য কান্ট্রি সো দ্য প্রোভার্বস’। আর স্কটল্যান্ডে বলা হয় ‘অ্যাজ দি পিপল সো দি প্রোভার্বস’। সুতরাং ‘প্রবাদে দেশের ও জাতির জীবনের নানা চিত্র পাওয়া যায়। আলোচ্য গ্রন্থটিও তার ব্যতিক্রম নয়। সমাজের টুকরো টুকরো বহু ছবি ধরা আছে গ্রন্থটিতে।

গান কর্মশালা
সম্প্রতি তিন দিনের পাঁচালি গানের কর্মশালা সম্প্রতি বসে ফাঁসিদেওয়ার রুইধাসায়। খড়িবাড়ি, শিবমন্দির, মানিকগঞ্জ, রামীডাঙ্গা থেকে আসা ১৫টি দলের সাড়ে তিনশো শিল্পী এই কর্মশালায় অংশ নেন। আধুনিকতায় ছোঁয়ায় হারাচ্ছে পাঁচালি গানের সুর, তাল, লয়, কলার স্বকীয় বৈশিষ্ট্যগুলি। উত্তরের নিজস্ব সম্পদ পাঁচালি গান বাঁচিয়ে রাখার জন্য কী কী পদক্ষেপ করা উচিত, সে উদ্দেশ্য সামনে রেখে কর্মশালার আয়োজন হয়। মহকুমা পরিষদের সভাধিপতি জ্যোতি তিরকি, লোক সংস্কৃতির বিশেষজ্ঞ দীপককুমার রায়, পরেশ রায়, উদাস রায় উপস্থিত ছিলেন। আয়োজক তরাই লোকসংস্কৃতি মঞ্চ। সহযোগিতায় জেলা তথ্যসংস্কৃতি বিভাগ। তরাই লোকসংস্কৃতি মঞ্চের কর্ণধার দেবলাল সিংহ জানান, লোক সঙ্গীতকে বাঁচাতে শিল্পীদের সরকারি অনুষ্ঠানে সুযোগ দেওয়া এবং মাসিক ভাতার ব্যবস্থা করা দরকার।





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.