দূষণ কমাতে গাড়িতে জ্বালানি ব্যবহারে নয়া মাপকাঠি কেন্দ্রের
দূষণ কমাতে এ বার গাড়িতে কিলোমিটার পিছু জ্বালানি ব্যবহার কমাতে চাইছে কেন্দ্রীয় সরকার। সেই লক্ষ্যে ২০১৬-র ১ এপ্রিল থেকে এ দেশে নতুন বিক্রি হওয়া গাড়ির জ্বালানি ব্যবহারের নতুন মাপকাঠি বেঁধে দিল তারা।
কেন্দ্রীয় বিদ্যুত্‌ মন্ত্রকের সাম্প্রতিক নির্দেশ অনুযায়ী, আগামী দিনে এক কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে এখনকার চেয়ে জ্বালানি ব্যবহার কমাতে হবে দেশের গাড়িগুলিকে। ফলে জ্বালানি খরচ কমলে কিছুটা লাভবান হবেন গাড়ির মালিকেরা। তেমনই সরকারের জ্বালানি আমদানিও কমবে।
ওই নির্দেশ মেনে ভবিষ্যতের গাড়ি তৈরি করতে আপত্তি নেই গাড়ি শিল্পের। কিন্তু গাড়ি শিল্পের সংগঠন সোসাইটি অব ইন্ডিয়ান অটোমোবাইল ম্যানুফ্যাকচারার্স (সিয়াম)-এর অভিযোগ, ওই নির্দেশ কার্যকর করতে আরও সময় প্রয়োজন।
ইউরোপ-সহ উন্নত দুনিয়ার বহু দেশেই দূষণের জন্য গাড়ির মানোন্নয়নে নিত্য নতুন উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহারের উপর জোর দেওয়া হয়। ভারতও সেই পথে হাঁটতে চাইছে। গাড়ি সংস্থাগুলি অবশ্য ক্রেতা টানতে ইতিমধ্যেই কম জ্বালানিতে বেশি পথ চলার (চলতি কথায় যা মাইলেজ বলেই পরিচিত) সুযোগ দিতে প্রযুক্তিগত উন্নয়নের উপর জোর দিচ্ছে। কারণ তেল ও গ্যাসের ক্রমবর্ধমান মূল্যবৃদ্ধির জেরে কমছে গাড়ির বিক্রি। জ্বালানির ব্যবহার কমাতে পারলে (বা মাইলেজ বাড়াতে পারলে) তাঁদের অনেককে শো-রুমে টেনে আনা সহজ হবে বলেই মনে করে সংস্থাগুলি।
সম্প্রতি কেন্দ্র গাড়ির জ্বালানি ব্যবহার সংক্রান্ত মাপকাঠির ওই বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। দু’টি পর্যায়ে তা কার্যকর হবে। প্রথম পর্যায় হল ২০১৬-’১৭ থেকে ২০২০-’২১ পর্যন্ত। অর্থাত্‌, ওই সময়ে যে-সব নতুন গাড়ি বিক্রি হবে, এক কিলোমিটার যেতে তাতে কতটা জ্বালানি ব্যবহার করা যাবে, তা স্পষ্ট করে বলা আছে ওই নির্দেশে। দ্বিতীয় পর্যায় শুরু হবে ২০২১-’২২ থেকে। সেই সময়ে জ্বালানি ব্যবহারের মাত্রা আরও আঁটোসাঁটো করা হবে। অর্থাত্‌, ২০১৬-’১৭ সালে এক কিলোমিটার যেতে একটি গাড়ির যতটা জ্বালানি লাগবে, ২০২১-’২২ সালে তার মাত্রা আরও কমবে।
গাড়ি শিল্প সূত্রের খবর, এখন দেশে এক লিটার তেলে একটি গাড়ি গড়ে প্রায় ১৬.৫ কিলোমিটার পথ যায়। সেটাই ২০১৬-’১৭ সালে বেড়ে দাঁড়াবে ১৮.২ কিলোমিটার। ২০২১-’২২-এ তা আরও বেড়ে হবে ২১ কিলোমিটার।
ওই মাপকাঠি কার্যকর হলে গাড়ি থেকে দূষণ কমবে অনেকটা। গাড়ি শিল্পের হিসেবে, এখন প্রতি কিলোমিটার পথ যেতে গড়ে একটি গাড়ি ১৪১-১৪২ গ্রাম কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমন করে। ২০১৬ সালে জ্বালানি ব্যবহার কমলে এই দূষণও কমে হবে ১৩০ গ্রাম। এবং ২০২১ থেকে তা আরও কমে হবে ১১৩ গ্রাম।
জ্বালানি ব্যবহারের ওই মাত্রা অবশ্য প্রতিটি গাড়ির জন্য আলাদা ভাবে স্থির করা হবে না। বরং একটি গাড়ি সংস্থার ভাঁড়ারে ছোট-বড় মিলিয়ে যত গাড়ি থাকবে, সবগুলি ধরে সেই সংস্থার জন্য ওই মাপকাঠির অঙ্ক কষেছে ‘ব্যুরো অব এনার্জি এফিশিয়েন্সি’। তবে সংশ্লিষ্ট মহলের যুক্তি, সে ক্ষেত্রে সংস্থার সব গাড়ির জ্বালানি ব্যবহারই কমাতে হবে। সাধারণ ভাবে বড় গাড়ির ক্ষেত্রে একই পথ যেতে ছোট গাড়ির তুলনায় বেশি তেল বা গ্যাস লাগে। ফলে সব গাড়িরই জ্বালানি ব্যবহার বিভিন্ন হারে না-কমালে সার্বিক ভাবে তাদের জন্য নির্দিষ্ট মাপকাঠি মেনে চলতে পারবে না সংস্থাটি।
উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার করে জ্বালানির খরচ কমাতে হলে গাড়ি তৈরির খরচও বাড়বে। ফলে দাম বাড়তে পারে গাড়িরও। তবে উন্নত গাড়ি তৈরির জন্য বাড়তি খরচে নারাজ নয় গাড়ি শিল্প। সিয়ামের ডিরেক্টর জেনারেল বিষ্ণু মাথুরের দাবি, গাড়ি শিল্প কখনওই আন্তর্জাতিক মাপকাঠির বিরোধী নয়। তিনি বলেন, “খরচ বাড়তেই পারে। কিন্তু প্রশ্নটা খরচের নয়। বাস্তবে প্রযুক্তিগত উন্নয়নের গবেষণা ব্যবসায়িক ভাবে কাজে লাগাতে হবে। ফলে গাড়ি সংস্থার পাশাপাশি গোটা যন্ত্রাংশ শিল্পকেও সেই গতিতে উন্নত করতে হবে।”
কিন্তু ইতিমধ্যেই যদি গাড়ি সংস্থাগুলি ক্রেতা টানতে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের কাজে যুক্ত থাকে, তা হলে কেন তারা দ্রুত এই মাপকাঠি মেনে চলার মতো জায়গায় পৌঁছতে পারেব না? মাথুর বলেন, “এই মাপকাঠির বিজ্ঞপ্তি ২০১০-এ জারি করার কথা ছিল। তখন বলা হয়, ২০১৫ থেকে তা কার্যকর হবে। ফলে সরকারি নির্দেশ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আগে পাঁচ বছর সময় দেওয়ার কথা বলা হলেও এখন সময় মিলছে মাত্র বছর দুয়েক। এর মধ্যে গোটা ব্যবস্থা গড়ে তোলা সহজ নয়। আমরা এ নিয়ে কেন্দ্রের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকগুলির সঙ্গে শীঘ্রই কথা বলব।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.