নারকেল, চৌডলের বিক্রিতে চাঙ্গা বাজার
জেলার গা ছুঁয়ে যাওয়া সুবর্ণরেখাই হোক বা বুক চিরে বয়ে চলা কংসাবতী। দ্বারকেশ্বর কিংবা কুমারী হোক, অথবা শিলাবতীর উৎপত্তিস্থল শিলাই। পুরুলিয়ার সব নদীতীরেই রং লাগল পৌষ সংক্রান্তির দিনে।
সংক্রান্তি উপলক্ষে এ দিন এক দিকে অলস মেজাজে ছুটি কাটিয়েছে পুরুলিয়া। আর এক দিকে, ভোর থেকেই টুসু গানের কথায়-সুরে আন্দোলিত হয়েছে বিভিন্ন নদী অভিমুখী মেঠো পথঘাট। মঙ্গলবার তাপমাত্রার পারদও নেমে আসে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। কনকনে ঠান্ডা উপেক্ষা করে এ দিন সুবর্ণরেখার তীরে ঝালদার তুলিন, বাঘমুণ্ডির সুইসা, কাঁসাই-পাড়ের দেউলঘাটা কিংবা পুরুলিয়া শহরের উপকন্ঠে শিমুলিয়া ঘাট, মহাদেববেড়া, পুঞ্চার কোণাপাড়া, মানবাজারের বুধপুর, দ্বারকেশ্বরের তীরে কাশীপুরের কাপিষ্টা, কুমারীর তীরে মানবাজার-২ ব্লকের দুয়ারসিনি, খড়িদুয়ারা কিংবা টটকোর পাড়ে বান্দোয়ানের যমুনা সব নদীতীরই ছিল এ দিন টুসুর চৌডলের রঙে রঙিন।
মকর পরবের মেলায় মানুষের ঢল নেমেছে পুরুলিয়ায় কাঁসাই নদীর তীরে। ছবিটি তুলেছেন সুজিত মাহাতো।
শেষ পৌষের ঠান্ডা বাতাস উপেক্ষা করে কাকভোর থেকেই টুসু গানের অনুষঙ্গে স্নানে মেতেছেন বিভিন্ন বয়সের মানুষ। বাঘমুণ্ডির শশীপ্রসাদ মাহাতোর কথায়, “আমি ভোরে উঠে সুবর্ণরেখায় ডুব দিয়েছি। পরব বলে কথা!” একই ভাবে সাতসকালে মকর স্নান সেরেছেন জেলা পরিষদের সভাধিপতি, বলরামপুরের বাসিন্দা সৃষ্টিধর মাহাতো স্নানের পরে শীতের রোদে পিঠ দিয়ে খেজুর গুড় ও পিঠে সহযোগে প্রাতরাশ সেরেছেন প্রায় গোটা জেলার মানুষ। এই সময়টা জেলার মানুষের ফসল ঘরে তোলার মাস। তাই এই মকর পরব বা উৎসব পুরুলিয়া-সহ তাবত মানভূমের মানুষের খুব কাছের। জেলার লোকগবেষক সুভাষ রায় বলেন, “এই জেলায় সেচের পরিকাঠামো হয়তো তেমন নেই। কিন্তু, এখনও পুরুলিয়ার মানুষ মূলত কৃষিকাজের উপরই নির্ভরশীল। এ সময়ে তাঁরা ফসল ঘরে তোলেন। আর টুসুকে ফসলের দেবী বলেই মানেন তাঁরা। দুর্গাপুজো জেলার সব জায়গায় তো হয় না। ফসল ঘরে ওঠার পরে মকর পরব তাঁদের কাছে অন্যরকম মাত্রা পায়।”
যে কোনও উৎসবের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগ থাকে স্থানীয় অর্থনীতির। মকর পরবও তার ব্যতিক্রম নয়। নতুন জামাকাপড় কেনা বা পিঠের জন্য নারকেল-গুড় বানানো, এটা পুরুলিয়ার অনেক দিনের রীতি। ফলে, বাজারে বিক্রিবাটা এই সময়টা যথেষ্টই বাড়ে। বিশেষ করে উৎসবের আগে নারকেলের চাহিদা থাকে তুঙ্গে। পুরুলিয়া শহরের বি বি দাস রোডের পাইকারি নারকেল ব্যবসায়ী সুধাংশু কুণ্ডু বলছিলেন, “অন্য সময় গোটা মাসে নারকেলের চাহিদা থাকে ২৫-৩০ হাজার, সেখানে এই পরবে নারকেলের চাহিদা দুই থেকে আড়াই লক্ষে উঠে যায়।” তাঁর মতো জেলার পাইকারি ব্যবসায়ীরা এ সময়ে চাহিদার সঙ্গে তাল মেলাতে ভিন্ রাজ্য থেকে মাল নিয়ে আসেন। সুধাংশুবাবুর কথায়, “আমরা তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে নারকেল নিয়ে আসি। এ বার নারকেলের দাম একটু বাড়লেও মকর বলে চাহিদা রয়েইছে।” কাশীপুরের খুচরো ব্যবসায়ী আশিস চেল বলেন, “অন্য সময় আমার কাছে যা বিক্রি হয়, এ সময় অন্তত দশগুণ বেড়ে যায়। পরব বলে নারকেলের দামও বেড়ে যাচ্ছে।”
নারকেলের সঙ্গে আছে টুসু ভাসানের রঙিন চৌডল বা ভেলা। হুড়ার লায়েকডি গ্রামের চৌডল শিল্পী মিতন যোগী, গৌতম যোগীরা বলেন, “আমাদের পেশা ঠাকুরের ডাকের সাজ করা। এ সময়টা চৌডলের বিক্রি বাড়ে। অনেক চৌডল তৈরি করতে হয়। বাড়ির সকলকেই কাজে লাগাই। বাজার পাওয়া যায় সত্যি, তবে যে ভাবে কাঁচামালের দাম বাড়ছে তাতে যে দামে ক্রেতা চান, সেই দামে দেওয়া যায় না। তবু গরিব মানুষের মুখ চেয়ে দিয়ে দিতে হয়।” শিহলি গ্রামের ভক্তিপদ মাহাতো, খুদিবাঁধ গ্রামের শক্তিপদ মাহাতোরা বললেন, “এ বার ধান ভাল হয়েছে। বাড়ির ছেলে-মেয়ের জন্য জামাকাপড় কিনেছি। পুজোর সময়েও কিনেছি। কিন্তু মকর পরবে তো কিনতেই হবে।” কেন্দার জামবাদ গ্রামের বাসিন্দা সুশীল মাহাতোর কথায়, “ধান বিক্রি করে পরবে দুই মেয়ের জন্য সোয়েটার কিনেছি।”
পুরুলিয়া শহরের বরাকর রোডের বস্ত্র ব্যবসায়ী অশোক সারাওগি জানালেন, পুজোর পরে মকর সংক্রান্তি উপলক্ষেই তাঁদের মোটামুটি ব্যবসা হয়। জেলার সব এলাকার মিষ্টি ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, এ সময় তাঁদের দোকানে ক্ষীর বা চাঁছির চাহিদা প্রচণ্ড বেড়ে যায়। পুরুলিয়া শহরের ভবতারণ সরকার রোডের মিষ্টি ব্যবসায়ী সুজিত মুখোপাধ্যায় বলেন, “এ সময় ক্ষীরের চাহিদা যত থাকে, ততটা এক সঙ্গে জোগান দেওয়া মুশকিল বলে প্রায় পনেরো দিন আগে থেকে আমরা প্রস্তুতি নিই।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.