অজয়ে স্নানে এসে বালি তোলার গর্তে
করসংক্রান্তি উপলক্ষে স্নান করতে এসেছিলেন তিনি। কিন্তু, জানা ছিল না বেআইনি বালি তোলার ফলে হাঁটুজলের অজয় নদে হয়ে রয়েছে মারণ গর্ত। এমনই এক গর্তে পড়ে প্রাণ গেল প্রশান্ত গরাই (২২) নামে এক যুবকের।
ঘটনাস্থল, বীরভূমের ইলামবাজার থানার জয়দেব-কেঁদুলি ঘেঁষা অজয় নদের টিকরবেতা ঘাট। দুর্গাপুর শহরের শ্রীপল্লি আড়াশিবতলা এলাকার বাসিন্দা প্রশান্ত তিন বন্ধুর সঙ্গে এখানে এসেছিলেন অজয়ে ডুব দিয়ে জয়দেব মেলা দেখতে। সকাল ৮টা নাগাদ চার বন্ধুই স্নান করতে নামেন। তখনই ঘটে ওই দুর্ঘটনা। গোটা ঘটনায় অবৈধ বালি উত্তোলন রুখতে প্রশাসনিক ব্যর্থতার দিকটিই প্রকট হয়েছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, প্রশাসন জয়দেব-কেঁদুলি মেলায় আসা পুণ্যার্থীদের মকর স্নানের সময় নিরাপত্তা দিতেও ব্যর্থ।
তখনও দেহ মেলেনি। অজয় নদের পাড়ে ভিড়। ছবি: দয়াল সেনগুপ্ত।
ঘটনার দায় ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের ঘাড়েই চাপিয়েছেন জেলার পুলিশ সুপার সি সুধাকর। তাঁর মন্তব্য, “বিষয়টি দেখার কথা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের। দুর্ঘটনার পরে যা করণীয়, পুলিশ তা করেছে।” অবৈধ ভাবে বালি তোলার জন্যই যে এই দুর্ঘটনা, তা মেনেছেন জয়দেব-কেঁদুলি মেলা কমিটির সম্পাদক তথা বোলপুরের মহকুমাশাসক মলয় হালদার। তিনি বলেন, “বিষয়টি ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের অন্তর্গত। জেলাশাসককে জানানো হয়েছে।” জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক শ্যামাশিস রায় বলেন, “কোনও একটি বিশেষ দফতরের দিকে আঙুল তোলা ঠিক নয়। দুর্ঘটনা দুর্ঘটনাই। বালি মাফিয়াদের দৌরাত্ম্য সর্বত্রই রয়েছে। তা রুখতে নিয়মিত অভিযান চলে।”
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, স্নানের সময় অন্য বন্ধুদের তুলনায় একটু এগিয়েই গিয়েছিলেন প্রশান্ত। আচমকা তিনি তলিয়ে যেতে থাকেন। বন্ধুরা গামছা বাড়িয়ে তাঁকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু, তিনি সেটা ধরতে পারেননি। বিপদ বুঝে বন্ধুরা চিৎকার করলেও ততক্ষণে দেরি হয়ে গিয়েছে। বেশ কিছুক্ষণ পরে পুলিশ আসে। তারও পরে আসেন প্রশাসনিক কর্তারা। আসে ‘ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট টিম’ও। কিন্তু তারা জলে নামেনি। প্রশান্তর বন্ধু দেবাশিস গরাই, সোমনাথ গরাই ও রবি গরাইদের অভিযোগ, “ঘটনার সময় পুলিশ বা প্রশাসনের কেউ-ই ধারেকাছে ছিলেন না। চিৎকার করেও সাহায্য পাইনি।”
ঘটনার আড়াই ঘণ্টা পরে পুলিশের অনুরোধে স্থানীয় কয়েক জন জেলে নদীতে জাল টেনে দেহ উদ্ধারের একটা বিফল চেষ্টা করেন। ইতিমধ্যেই ঘটনাস্থলে পৌঁছন প্রশান্তর বাবা লক্ষ্মণ গরাই। প্রশাসনিক গড়িমসিতে ধৈর্যের বাঁধ ভাঙে জনতার। ঘটনাস্থলে হাজির ইলামবাজারের বিডিও অনিরুদ্ধ নন্দী, বোলপুরের মহকুমাশাসক মলয় হালদারের উপরে তাঁরা ক্ষোভ উগরে দেন। দুপুর আড়াইটে পর্যন্ত ডুবুরির দেখাও মেলেনি। বেলা তিনটে নাগাদ পুলিশ স্থানীয় মৎস্যজীবীদের দিয়ে ফের চেষ্টা করতেই দেহ উদ্ধার হয়।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, অজয়ের বুকে জেসিবি মেশিন বা নৌকায় পাম্প লাগিয়ে বালি তোলার অবৈধ কারবার ফুলে ফেঁপে উঠেছে। এমনিতে এই সময় অজয়ে জল থাকে না। কিন্তু, মকর-স্নানের জন্য স্থানীয় হিংলো জলাধার থেকে জল ছাড়া হয়। সেই জলে বালি তোলার ফলে তৈরি হওয়া গর্ত ঢেকে যায়। প্রত্যক্ষদর্শী প্রতাপ সামন্তের প্রশ্ন, “এমন সব মরণ-ফাঁদের কথা প্রশাসন তো জানত। তারা কেন পুণ্যার্থীদের সতর্ক করেনি?” এ দিন মকর-স্নান ঘিরে তেমন কোনও প্রশাসনিক ব্যবস্থাও নজরে পড়েনি। ছিল না নৌকা বা উদ্ধারকারী দল।
ইলামবাজারের বিডিও অনিরুদ্ধ নন্দীর দাবি, “এ দিনের ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতে সতর্ক থাকব।”
কিন্তু, প্রশান্ত থাকবেন না!



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.