রবিবাসরীয় প্রবন্ধ ৪...
মুঘল সাম্রাজ্য তখন মধ্যগগনে। ১৫ বছর বয়সের শাহজাদার বাগদান হল ১৪ বছর বয়সের এক ডাকসাইটে সুন্দরী কিশোরীর সঙ্গে। কিন্তু রাজনীতির কূটকচালিতে বিয়ে আরও পাঁচ বছর পিছিয়ে যায়। ২০ বছর বয়সে বিয়ে হয়েছিল শাজাহানের। কিন্তু শাজাহান এতটাই পত্নীনিষ্ঠ হয়েছিলেন এই সাময়িক বিচ্ছেদের পর, যুদ্ধক্ষেত্রে অবধি স্ত্রীকে নিয়ে যেতেন।
বেগম মুমতাজ মহল এক বার সৈন্য-ব্যারাক পরিদর্শনে গিয়ে দেখেন সৈন্যরা সাংঘাতিক অপুষ্টিতে ভুগছে। অতগুলো মানুষকে চিকিত্‌সা করতে যে সময়, পরিকাঠামো আর যত হাকিম লাগবে, তা যুদ্ধক্ষেত্রে সম্ভব নয় বেগম প্রধান বাবুর্চিকে এক বিশেষ সুষম পুষ্টিবর্ধক পদ রান্নার হদিশ আর নির্দেশ দেন তা খেয়ে সৈন্যরা চাঙা হয়ে ওঠে। ১৯ বছরের বিবাহিত জীবনে ১৪ সন্তানের জন্ম দেওয়া মুমতাজ জানতেন কোন খাবারে ধকল কাটিয়ে ওঠা যায় এবং পুষ্টিও পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকে। তাঁর নির্দেশিত সে দিনের পদই ছিল আজকের বিরিয়ানি।
এই লোককথাকে নস্যাত্‌ করে আর এক মত বলে, বিরিয়ানি তৈরি হয়েছিল ভারতের সনাতন খাবার খিচুড়ির অনুপ্রেরণায়। মুঘলরা যখন ভারতে এসেছিল, এই দেশের সাধারণ মানুষের খুব পরিচিত, জনপ্রিয় আর ঝঞ্ঝাটহীন খাবার ছিল খিচুড়ি চাল, ডাল আর সবজি একসঙ্গে সেদ্ধ করে তৈরি হত। এতে রান্না আর খাওয়ার সময়ও বাঁচত, পুষ্টিও মিলত। মুঘল রসুইকররা তাঁদের খানদানি পোলাওয়ের সঙ্গে খিচুড়ির রন্ধনপ্রণালী মিশিয়ে যে জগাখিচুড়িটা বানালেন, সেটাই বিরিয়ানি। হিন্দুরা সেই জমানায় তাঁদের মর্জিমাফিক কখনও ভাত আর ডাল আলাদা রান্না করে খেতেন, আর কখনও চাল ডাল মিশিয়ে খিচুড়ি রান্না করে। এই নবলব্ধ বিরিয়ানি পেয়ে প্রাচ্য দেশের আগন্তুকরা এবং তাঁদের সম্প্রদায়ের মানুষজন কখনও পোলাও মাংস আলাদা খেতেন, কখনও একসঙ্গে বিরিয়ানি বানিয়েও খেতে শুরু করলেন।
ফারসি শব্দ ‘বিরিয়ান’ থেকে বিরিয়ানি কথাটার উত্‌পত্তি অর্থ ‘ভেজে নিয়ে রান্না’ তাই মধ্যপ্রাচ্যেরও একটা হক আছে বিরিয়ানির পিতৃভূমি হিসেবে নিজেকে কায়েম করার। রান্নার কায়দা আর মশলা ব্যবহার থেকে মনে হয়, সেই দাবি অমূলক নয়। আরব মুলুকের যাযাবর জাতি নাকি মাটিতে গর্ত করে হাজার বছর আগে হাঁড়িতে চাল, মাংস আর মশলা মিশিয়ে রান্না করত, তা থেকেই এ যুগের বিরিয়ানি। যাযাবর জাতির হাত ধরে সে দিনের বিরিয়ানি ছড়িয়ে পড়ে মধ্যপ্রাচ্যে। তার পর তৈমুর লঙ-এর সঙ্গে কাজাখস্তান থেকে আফগানিস্তান হয়ে তার ভারত প্রবেশ। তৈমুর ভারতে এসে নাকি ধনদৌলত নিয়ে গেছেন, বিরিয়ানি দিয়ে গেছেন।
তৈমুরের অবদানকে প্রায় মেনে নেওয়া হয়েছিল, বাদ সাধল দ্বিতীয় খ্রিস্টাব্দের তামিল সাহিত্যে বর্ণিত ‘উনসুরু’ নামে এক পদ। সৈন্যদের জন্যে এই পদ তৈরি হত চাল, ঘি, মাংস, হলুদ, ধনে, গোলমরিচ, তেজপাতা দিয়ে। তা হলে, বিরিয়ানি গোত্রীয় খাবারের সঙ্গে ভারতের যোগাযোগ তৈমুর ভারতে আসার হাজার বছরেরও আগে থেকে।
বিরিয়ানির জন্মবৃত্তান্ত নিয়ে তর্ক চলবে, তবে এ কথা সত্যি, এই খাবার ভারতে ছড়িয়ে পড়েছে নবাব ও তাঁদের সৈন্যদলের হাত ধরে। যেমন মুঘল দরবার থেকে বিরিয়ানি হায়দরাবাদ পৌঁছেছে আসাফজাহি বংশের হাত ধরে, কিংবা অযোধ্যা থেকে কলকাতা পৌঁছেছে নবাব ওয়াজেদ আলি শাহ-র হাত ধরে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.