|
|
|
|
দিন বদলে ১৭ জানুয়ারি বনধের ডাক দিল কেএলও
নিজস্ব সংবাদদাতা • গুয়াহাটি ও জলপাইগুড়ি |
অসমের একটি উৎসবের কথা ভেবে বনধের দিন বদল করল কামতাপুর লিবারেশন অর্গানাইজেশন (কেএলও)। তারা জানিয়েছে প্রস্তাবিত কামতাপুর এলাকায় ২৪ ঘণ্টার বন্ধ হবে ১৭ জানুয়ারি। আগে তারা জানিয়েছিল, বন্ধ হবে কাল, ১২ জানুয়ারি। তবে বন্ধ পিছোলেও উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকা ও নামনি অসমে কড়া সতর্কতা জারি করেছে পুলিশ-প্রশাসন। পশ্চিমবঙ্গ-অসম লাগোয়া সব ক’টি রাস্তায় যানবাহন থামিয়ে তল্লাশি চলছে। বনের পথেও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
কেএলও-র সাধারণ সম্পাদক কৈলাশ কোচ ফোনে আনন্দবাজারকে বলেন, “দোমাসি উৎসবের মুখ চেয়ে, বনধের দিন বদল করা হয়েছে। ১২ জানুয়ারির বদলে, ১৭ জানুয়ারি ২৪ ঘণ্টার বন্ধ ডাকা হয়েছে। আমাদের প্রস্তাবিত কামতাপুর এলাকার মানুষ ১২-১৩ জানুয়ারি শস্য রোপণের উৎসব দোমাসি বা পুসনা পালন করেন। তাই, সাধারণ মানুষের অসুবিধার কথা ভেবেই আমরা ১৭ জানুয়ারি পশ্চিমবঙ্গ ও অসমের কয়েকটি জেলা নিয়ে প্রস্তাবিত কামতাপুরে অঞ্চলগুলিতে বন্ধ পালন করব।” তাঁদের হুমকি, বন্ধ চলবে ওই দিন ভোর ৫টা থেকে পর দিন ভোর ৫টা পর্যন্ত। |

এই ব্যাগটি ঘিরেই শুক্রবার বোমাতঙ্ক ছড়ায় জলপাইগুড়ি শহরে। ছবি তুলেছেন রাজা বন্দ্যোপাধ্যায়। |
এই অবস্থায় কেএলও-কে রাজনৈতিক ভাবে মোকাবিলার জন্য পথে নেমেছে তৃণমূল। সেই সঙ্গে কেএলও যদি অস্ত্র ছেড়ে শান্তিপূর্ণ ভাবে থাকার কথা ঘোষণা করে, তা হলে তাদের সঙ্গে রাজ্য সরকারকে আলোচনায় বসানোর চেষ্টা করা হবে বলেও তৃণমূলের জলপাইগুড়ি জেলা কমিটি জানিয়েছে। দলের জলপাইগুড়ির সভাপতি চন্দন ভৌমিক বলেন, “আমরা বনধের বিরোধিতায় টানা রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়েছি। তবে কেএলও জঙ্গিরা যদি সন্ত্রাসের পথ ছেড়ে উন্নয়নের কাজে সামিল হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চান, তা হলে আমরা রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসানোর চেষ্টা করব। না হলে, উন্নয়নকে হাতিয়ার করে সন্ত্রাস বিরোধী জনমত তৈরি করে জঙ্গিদের জনবিচ্ছিন্ন করা হবে।” আজ, শনিবার বেলা ১ টায় জলপাইগুড়ির ৭২টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় পদযাত্রা, মিছিল, পথসভা করবে তৃণমূল।
তৃণমূলের একাংশের অভিযোগ, নানা এলাকায় কেএলও জঙ্গিদের নাম করে টাকা আদায়ের ছক কষা হয়েছে। ওই ব্যাপারে ‘কামতাপুর প্রোটেকশন ফোর্স (কেপিএফ) নামে একটি সংগঠনের নামও ইদানীং পুলিশ-প্রশাসনের সামনে এসেছে। যদিও কেপিএফ নামে কোনও সংগঠনের সঙ্গে তাঁদের কোনও যোগ নেই বলে কেএলও-র সাধারণ সম্পাদক দাবি করেছেন। তিনি টেলিফোনে বলেন, “পুলিশ দাবি করছে কেএলও-র হয়ে কেপিএফ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন এলাকা থেকে অর্থ সংগ্রহ করছে। এই অভিযোগ অসত্য। বরং আমাদের পুলিশকে সন্দেহ হচ্ছে। সাধারণ মানুষ যেন এই সব ভুঁইফোড় দলকে পাত্তা না দেন।” একই সঙ্গে কৈলাশ এদিন হুমকির সুরে বলেন, “আমরা আমাদের দাবি ও বক্তব্য জানিয়ে অনেক বিবৃতি দিয়েছি। আর কাগজের যুদ্ধ নয়। এবার আমাদের লড়াই কাজে করে দেখাব।”
পুলিশ কিন্তু নাশকতার চেষ্টা রুখতে ব্যাপক কড়াকড়ি করছে। বৃহস্পতিবার রাতে কুমারগ্রাম থানা এলাকার অসম লাগোয়া পাখড়িগুড়ি এলাকায় নম্বরবিহীন বাইক সহ এক যুবককে গ্রেফতার করে পুলিশ। ধৃতের নাম মিঠুন বর্মন। বাড়ি অসম লাগোয়া সংকোশ এলাকায়। ওই যুবকের সঙ্গে জঙ্গিদের যোগসাজশ আছে কি না, তা পুলিশ খতিয়ে দেখছে। এদিন জলপাইগুড়ি শহরে একটি পরিত্ত্যক্ত ব্যাগ থেকে বোমাতঙ্ক ছড়ায়। শহরে জেলা দায়রা আদালতের বিচারকের বাড়ি সংলগ্ন রাস্তায় পরিত্ত্যক্ত ব্যাগটি প্রথমে স্থানীয় বাসিন্দাদেরই চোখে পড়ে। ‘বম্ব স্কোয়াড’-এর কর্মীরা সেখানে যান। ৪ ঘন্টার মাথায় কার্তিক দাস নামে পুরসভার এক কর্মী গিয়ে জলপাই রঙের ব্যাগটি তাঁর বলে দাবি করেন। তিনি পুলিশকে জানান, ব্যাগটি কোনওভাবে পড়ে গিয়েছিল। পুলিশ তাঁকে থানায় নিয়ে জেরার পরে ছেড়ে দেয়। জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপার অমিত জাভালগি বলেন, “পুলিশ কড়া নজরদারি করছে। বাসিন্দারাও যে অতি মাত্রায় সতর্ক রয়েছেন সেটাও বোঝা যাচ্ছে।”
এ দিকে কেপিপি-র তরফেও কেএলও-র ডাকা বনধের বিরোধিতা করা হয়েছে। কেএলও জঙ্গিদের সঙ্গে যোগসাজশের অভিযোগে দলের দুই শীর্ষ নেতাকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে এবং বজরাপাড়া বিস্ফোরণের ঘটনার সিবিআই তদন্তের দাবিতে শুক্রবার দলের তরফে জেলাশাসকের মাধ্যমে রাজ্যপালের উদ্দেশ্যে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। কেপিপি-র কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুবল রায় কেএলও-র ডাকা বনধের বিরোধিতা করে বলেন, “অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে নাশকতা করে রাজ্য, ভাষা কিছুই মিলবে না। গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমেই দাবি আদায় করতে হবে। তবু আমাদের নেতা-কর্মীদের মামলায় ফাঁসিয়ে গ্রেফতার করা হচ্ছে। তাই রাজ্যপালের কাছে বজরাপাড়ায় বিস্ফোরণের ঘটনার সিবিআই তদন্তের দাবি করেছি।” বালুরঘাটেও অতিরিক্ত জেলাশাসকের কাছে স্মারকলিপি জমা দেয় দক্ষিণ দিনাজপুরে কেপিপি-র জেলা কমিটির নেতা-সদস্যরা। কেপিপি-র পক্ষে অক্ষয় সরকারও বজরাপাড়ার ঘটনায় সিবিআই তদন্ত দাবি করেন।
এ দিন শিলিগুড়িতে দলের বৈঠকে যোগ দিতে গিয়ে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু বলেন, “কেএলও রাজনৈতিক দাবি করেছে। তাঁদের সঙ্গে রাজনৈতিক ভাবেই মোকাবিলা করা উচিত।” বিমানবাবুর অভিযোগ, গত লোকসভা ভোটের আগে থেকে ওই ধরনের শক্তির সঙ্গে বোঝাপড়া করেছিল তৃণমূল। যা শোনার পরে তৃণমূলের উত্তরবঙ্গের কোর কমিটির চেয়ারম্যান তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবের প্রতিক্রিয়া, “বিমানবাবুর মন্তব্য দায়িত্বজ্ঞানহীন ও দুঃখজনক। উনি বর্ষীয়ান নেতা। ওঁর কাছে আমরা শিখব। এমন মন্তব্য করে উনি ঠিক করেননি। আমরা রাজনৈতিক ভাবেই কেএলও-র মোকাবিলা করছি। এ ব্যাপারে কাউকে কৈফিয়ত দেব না।” |
পুরনো খবর: উন্নয়নের অস্ত্র শানিয়ে সীমান্তে অন্য লড়াই লড়ছেন রক্ষীরা |
|
|
 |
|
|