কলকাতার আকাশে বিশ্বসম্মেলন।
কোনওটা চিল, কোনওটা ব্যাটম্যান, কোনওটা রঙিন প্রজাপতি। কোনওটা আবার অক্টোপাস। পাশাপাশি দাঁড়িয়ে এমন হরেক রকম ঘুড়ি ওড়াচ্ছেন আমেরিকা, ফ্রান্স, ইংল্যান্ডের মতো দেশের প্রতিনিধিরা। সেই ভিনদেশিদের সঙ্গেই রয়েছেন মহারাষ্ট্র, গুজরাত, পশ্চিমবঙ্গের প্রতিনিধিরাও। তবে লড়াই নয়। ঘুড়ি উড়ছে স্রেফ ওড়ার মজায়।
শনিবারই এই আন্তর্জাতিক ঘুড়ি উৎসব নিয়ে পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের কাছে উৎসাহ প্রকাশ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। রবিবার ফিরহাদ হাজির হন নিউ টাউনে, উৎসবের মাঠে। সেখানেই তিনি বলেন, ““ঘুড়ি শিল্পকে উৎসাহিত করতে আমাদের সরকার ঘুড়ি তৈরির জন্য যে কাঠি লাগে, তার উপরে কর তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যারা ঘুড়ি বানান, তাঁরা এর ফলে অনেকটাই উপকৃত হবেন।” হিডকোর সহায়তায় নিউ টাউনে এই আন্তর্জাতিক ঘুড়ি উৎসবের আয়োজন করেছে একটি বেসরকারি সংস্থা। অংশগ্রহণ করেছেন আটটি দেশ ও ১৫টি রাজ্যের প্রতিনিধিরা। |
আয় না উড়ি নীল আকাশে...

ঘুড়ি-উৎসবে সামিল শহর। রবিবার, নিউ টাউনের ইকো পার্কে। ছবি: শৌভিক দে। |
এ দিন সকাল থেকেই নিউ টাউনে ইকো পার্কের ৩ নম্বর গেটের কাছে ভিড় জমিয়েছিলেন মানুষ। তারই পার্কিংয়ে চলছিল উৎসব। ফ্রান্সের নিকোলাসের লাটাই ঘিরে একটা বড়সড় জটলা। তাঁর ঘুড়িতে লাগানো রয়েছে স্টিল ক্যামেরা। আকাশে ওড়ার ফাঁকেই ছবি উঠছে তাতে। “বিশ্বের সব জায়গাতেই এই ঘুড়ি নিয়ে গিয়েছি। ভারতে দিল্লি, মুম্বইয়ের পরে কলকাতায়। কলকাতা খুব সুন্দর শহর।” তবে ঘুড়ি-ক্যামেরায় কী ছবি উঠছে, তা নিয়ে সজাগ বিধাননগর কমিশনারেটের পুলিশ। এক কর্তা বলেন, “এই ঘুড়ি দোতলার বেশি উঠছে না। ফলে ঘুব বেশি জায়গা জুড়ে ছবি তোলার সম্ভাবনা নেই। তবে কী ছবি উঠছে, নিরাপত্তার কারণেই সে দিকে আমরা নজর রেখেছি।”
রবিবারের দুপুরের ইকো পার্ক ভ্রমণে বাড়তি পাওনা হয়ে গিয়েছিল এই ঘুড়ি-পার্বণ। চিলের মতো দেখতে ঘুড়িটাকে দূর থেকে সত্যিকারের চিল ভেবে ফেলেছিলেন অনেকেই। যেমন, বাগুইআটির রোহিত মজুমদার। বললেন, “ঘুড়িটা একেবারে চিলের মতোই ডানা মেলে উড়ছে। প্রথমে তাই ভুল করেছিলাম।” আর এক দর্শক জানালেন, ঘুড়ির চিলকে দেখে সত্যিকারের দুটো চিল কাছাকাছি চলে এসেছিল।
চিল-ঘুড়ি এনেছেন লখনউ-এর এক ঘুড়িপ্রেমী। তবে সেই ‘চিল’ অবশ্য মাটি থেকে খুব বেশি উচ্চতায় ওড়েনি। লখনউয়ের ওই প্রতিনিধি বলেন, “যেখানেই গিয়েছি, সেখানেই জনপ্রিয় হয়ে গিয়েছে এই চিল ঘুড়ি।” পাশেই তখন উড়ছে অক্টোপাস। তার পাশে তিমি মাছ। বিশাল ঘুড়ির গায়ে আঁকা ভারতের পৌরানিক কাহিনির দৃশ্য দেখে আশ্চর্য হয়ে গিয়েছেন বেলজিয়ামের এক প্রতিনিধি।
নানা রকম ঘুড়ির লাটাই হাতে ছবি তুলছিল পার্কে আসা কচিকাঁচারাও। দশম শ্রেণির ছাত্রী, গড়িয়াহাটের পৌলমী রায় উচ্ছ্বসিত। “ঘুড়ি যে এত রকমের হতে পারে, এখানে না এলে জানতামই না। অক্টোপাসের মতো দেখতে ঘুড়িটা আমি নিজেই ওড়ালাম বেশ কিছুক্ষণ,” বলছিল পৌলমী। উৎসবের আয়োজক সংস্থার এক প্রতিনিধি সন্তোষ জায়সবাল বলেন, “এ বছর যা উন্মাদনা দেখলাম, তাতে আমরা অভিভূত। সরকারও আমাদের প্রচুর সাহায্য করেছে। এ বছর ৮টি দেশ এসেছে। আগামী বছর অন্তত ৫০টি দেশকে উৎসবে আনার চেষ্টা করব। দেশের মধ্যে সব থেকে বড় আন্তর্জাতিক ঘুড়ি উৎসব কলকাতাতেই হবে। এই সময়টায় আবহাওয়াও খুব ভাল থাকে।” |