আনন্দplus এক্সক্লুসিভ |
ময়দানের কোচ |
এপ্রিল ফুল নয়। সত্যিই প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়-য়ের নতুন অবতার। এ বার তিনি এমন এক বাঙালি
কোচের
ভূমিকায় যিনি জীবিত।
যাঁর ফুটবল জীবন শেষ হয়ে যায় চিমা ওকোরি-র ট্যাকলে।
পরিচালক
কিনা পরমব্রত। মোহনবাগান মাঠ থেকে দেবাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়। |
শনিবারের সকাল সাড়ে আটটা। মোহনবাগান মাঠ। পুরোদমে চলছে জুনিয়রদের ফুটবল স্কুল।
শতাব্দীপ্রাচীন মোহনবাগান তাঁবুর যে পথ ধরে মাঠে নামতেন ব্যারেটো, ভাইচুং, বিজয়নরা, সেই পথ ধরেই চেলসির ট্রাকস্যুট, রোদচশমা চোখে এই আগন্তুক কে?
মিনিট দু’য়েকের স্তব্ধতা। তার পরেই খুদে ফুটবলারদের বাবা-মায়েদের ফিসফিসানি, “পরমব্রতর সঙ্গে কে!” ততক্ষণে খেলা থেমে গিয়েছে। দুই কোচ অর্ঘ্য মজুমদার এবং নির্মাল্য হালদারও মন দিয়ে ফেলেছেন সে দিকে।
হঠাৎ মোহনবাগান মাঠে? রহস্যটা ভাঙলেন ‘কহানি’-র সেই সাব-ইনস্পেকটর ‘রাণা’। জ্বলে উঠেই আচমকা দপ করে নিভে গিয়েছিল যাঁর ফুটবল জীবন, শেষমেশ কলকাতা ময়দানের সেই ‘ব্যর্থ’ ট্যাগ প্রাপ্ত শঙ্করলাল চক্রবর্তীই কিনা পরমব্রতর পরবর্তী ছবির বিষয়!
মোহনবাগান মাঠে র্যাম্পার্টের দিকে দাঁড়িয়ে পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় বলছিলেন, “শঙ্করলালের ময়দানি লড়াইটাই আমার আগামী ছবির রেফারেন্স। মূল চরিত্রে বাংলা সিনেমার এক নম্বর বক্স অফিস।” |
বিহাইন্ড দ্য স্ক্রিন |
‘চাঁদের পাহাড়’ নয়। নয়ের দশকে ময়দানেই সাড়া ফেলেছিলেন তিনি। সাতানব্বইয়ে তাঁকে সই করানো নিয়ে ‘টাগ অব ওয়্যার’-ও চলেছিল মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গলের। শেষ পর্যন্ত শঙ্কর গিয়ে ওঠেন ইস্টবেঙ্গলের জালে। বাংলার ফুটবলে তখন ‘ডায়মন্ড ফিভার’। ১৩ জুলাই মোহনবাগানকে ৪-১ হারিয়ে সেই ‘হিরের দর্পচূর্ণ’ করলেন ভাইচুংরা। গঙ্গাপারের তাঁবুতে তখন ক্ষোভের সুনামি আছড়ে পড়ছে। কুড়ি দিনের মাথায় বদলার সুযোগ এসে গেল চিমা ওকোরিদের সামনে। কলকাতা লিগের ম্যাচ। সে দিন দোসরা অগস্ট। প্রথমার্ধের মাঝমাঝি ইস্টবেঙ্গলের ডিফেন্সিভ থার্ডে বল পেয়ে গেলেন চিমা। লাল-হলুদ দুর্গ আগলাতে ষোলো নম্বর শঙ্কর ট্যাকল করলেন চিমাকে। কিন্তু চিমার পা গুঁড়িয়ে দিয়ে যায় শঙ্করের ডান পায়ের সিনবোন।
দীপেন্দুর শেষ মুহূর্তের গোলে সে দিন জিতে যায় মোহনবাগান। এই ম্যাচ বিখ্যাত হয়ে আছে বাঁশি বিভ্রাটের ম্যাচ হিসেবে। এখন যিনি সিআরএ সচিব, সেই উদয়ন হালদার নাকি দু’বার বাঁশি বাজিয়েছিলেন দীপেন্দুর গোলের সময়। তার জন্যই রক্ষণ থমকে গিয়েছিল বলে আজও দাবি করে ইস্টবেঙ্গল। যা মানে না মোহনবাগান।
কিন্তু শঙ্কর? তার কী হল? তিনি এক রকম হারিয়েই যান এর পর। অস্ত্রোপচারের পর ফের লাল-হলুদে ফিরেও আবার পা ভাঙেন। শেষ হয়ে যায় সিঁথির কাশী বোস লেনের ছেলেটির ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন।
এক যুগ অন্তরালে থেকে সেই শঙ্করলাল অবশেষে মাঠে ফিরেছেন। তবে ফুটবলার হিসেবে নয়। বর্তমানে তিনি আইএফএ অ্যাকাডেমির কোচ। ‘বি’ লাইসেন্স করে ফেলেছেন। ফিরছেন আরও এক ভাবে। এক মহানায়কের হাত ধরে। ফুটবল মাঠ এখানেও আছে। তিনিও আছেন পায়ে ফুটবল নিয়ে। তবে বাস্তবে নয়। রুপোলি পর্দায়। টালিগঞ্জের সেলুলয়েডে। এ দিনের ‘আগন্তুক’ প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের হাত ধরে।
সুভাষ-সুব্রতদের নাম শুনলেও শঙ্করের নাম আগে যেমন শোনেননি প্রসেনজিৎ, তেমনই এই মুহূর্তে রায়পুরে আইএফএ অ্যাকাডেমির টিম নিয়ে খেলতে যাওয়া শঙ্করের কাছেও প্রসেনজিৎ সম্পূর্ণ অন্য জগতের তারকা। শঙ্কর সম্পর্কে তাও প্রসেনজিৎ আইডিয়া পেয়েছেন পরমব্রতর রিসার্চ থেকে। আর শঙ্কর? আনন্দ প্লাসের থেকে খবরটা শুনে তাঁর গলা আবেগে রুদ্ধ। বলছেন, “বাংলা ছবির এক নম্বর নায়ক আমার জীবন জেনেছেন! আমি ভাগ্যবান। আর কিছুই বলার নেই।” |
 |
ছবি: উৎপল সরকার। |
নায়ক থেকে কোচ |
সকাল ন’টা। ডিরেক্টর পরমব্রত, কল্যাণকে নিয়ে নায়ক চলে গেলেন সোজা র্যাম্পার্টের দিকে। সকালের সবুজ মাঠ তখন নায়কের মন টেনে নিয়ে গিয়েছে বাড়িতে। শোনা গেল এক স্নেহশীল বাবার গলা। “ও (পড়ুন তৃষাণজিৎ) আজ বাড়িতে। কাল পুণে চলে যাবে। তাই নিয়ে এলাম না। এলে খুশিই হত। সব সময়ই তো মেসি-রোনাল্ডোতে বিভোর হয়ে আছে।” বলেই হাঁটতে লাগলেন ইডেন গার্ডেন্স প্রান্তের দিকে। বললেন, “পরম গল্পটা শোনানোর পরেই ‘হ্যাঁ’ করে দিয়েছি। বাপিও (বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায়) শুক্রবার রাতে গল্পটা শুনে বলল,‘দুর্দান্ত’।”
কিন্তু শুটিংয়ের সরঞ্জাম কোথায়? উত্তরটা দিলেন পরমব্রত। বললেন, “সাবির হোসেন মোল্লার গল্প নিয়েই এই ছবি। মুক্তি পাবে এ বছরের শেষ দিকে। শুটিং শুরু করিনি। এক ফুটবলারের কোচ হিসেবে পুনরার্বিভাব। দুই ভূমিকাতে বুম্বাদা ছাড়া কারও কথাই মনে পড়েনি। ফুটবলারের সাজে মাঠে এনে দেখে নিলাম বুম্বাদা একদম একশোয় একশো।”
মাঠে কোচের ভূমিকায় মোহনবাগান ফুটবল স্কুলের রোমারিও টপনো, রমিত মুখোপাধ্যায়দের নানা উপদেশ দিলেন নায়ক। আর পটাপট সে দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি করলেন পরম। এক সময় নিজেই ড্রিবল করতে শুরু করে দিলেন। যা দেখে চোখ বড় বড় হয়ে গেল ফুটবল স্কুলে আসা অগ্নিমিত্রা পলের ছেলে ভিগনেশেরও। |
 |
২.৮.১৯৯৭: সেই মুহূর্ত। চিমার সঙ্গে ট্যাকলে সিনবোন ভেঙে গেল শঙ্করলালের। |
বাদ গেল না খুনসুটিও |
নায়ক এ বার ব্যস্ত হয়ে পড়লেন ভিগনেসদের মতোই ছোটদের সঙ্গে খুনসুটিতে। হিন্দু স্কুলের ক্লাস ওয়ানের ছাত্র দেবাঙ্গন নাথকে কাঁধে তুলে নিয়ে বললেন, “হ্যাপি নিউ ইয়ার। তুই আমাকে চিনিস?” দেবাঙ্গনের পালটা, “তুমি তো বুম্বাদা।” চমকে গেলেন ‘হানি আলকাদি’কে পুরোদস্তুর সিধে করে দেওয়া নায়কও। “আমি তোর বুম্বাদা! তোর বাবা আমাকে কী বলে ডাকেন রে?” এ বারও ধেয়ে এল অ্যাটম বোম। “বুম্বা কাকু।” চমকে গিয়ে পর্দার শঙ্করলাল এ বার ছবি তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন কল্যাণ এবং তাঁর কোচেদের সঙ্গে।
|
ফুটবল এর আগেও |
নায়ক এটাও জানাতে ভুললেন না ‘পরিচয়’ ছবিতে শ্যুটিংয়ের সময় নিউ ক্যাসল ইউনাইটেডের জার্সি গায়ে সাগরপারে দৃশ্যায়নের বৃত্তান্ত। কাজেই ফুটবল তাঁর কাছে নতুন নয়। ততক্ষণে নায়ককে ঘিরে ধরেছেন বাবা-মায়ের দলবল। |
সুনীল ছেত্রীরাও! |
কিন্তু হঠাৎ ফুটবল কেন? শুনে পরমব্রত বলছেন “গত বিশ্বকাপের সময় ইংল্যান্ডে ছিলাম। ব্রাজিল-পর্তুগাল ম্যাচের দিন আমার পর্তুগিজ বন্ধু জানতে চেয়েছিল, আমি খেলাটা বুঝতে পারছি কি না।” সেখান থেকেই ফুটবল নিয়ে ছবি করার চিন্তা পরমব্রতর মাথায়। এ ছবির জন্য সংলাপও লিখে ফেলেছেন গত দেড় মাসে। মুম্বইতে ‘ইয়ারা সিলি সিলি’-তে শু্যটিংয়ের অবসরেও লিখেছেন। বললেন, “ফুটবল নিয়ে গল্প থাকলেও এর সঙ্গে ইমোশনাল এবং সোশ্যাল টাচ-টাও রাখছি। সুনীল ছেত্রীদের মতো তিন-চার জন প্রথম সারির ফুটবলারও অভিনয় করতে পারেন। আড়াই ঘণ্টার ছবিতে দু’টো ফুটবল ম্যাচও থাকবে। তবে এটা কিন্তু শঙ্করলালের বায়োপিক নয়। কেরিয়ারের প্রান্তে চলে যাওয়া একটা লোক কী ভাবে প্রান্তিক মানুষদের নিয়ে সাড়া ফেলে দিতে পারেন, সেটাই তুলে ধরবেন বুম্বাদা।”
শঙ্করলালের রেফারেন্স শুনে উত্তেজিত ময়দান। দীপেন্দু বিশ্বাস বললেন, “যে দিন ওর পা ভাঙে,
সে দিন আমি গোল করেই ছুটেছিলাম এসএসকেএম। অপারেশনের পর ও আমার সল্টলেকের বাড়িতেই থাকত। খেলতে পারলে দেশের সেরা ডিফেন্ডার হত।”
আর যার সঙ্গে সংঘর্ষে শঙ্করের সিনবোন চুরচুর হয়ে গিয়েছিল সেই চিমা ওকোরিও শুনে আনন্দিত। বললেন, “দারুণ খবর! গড ইজ গ্রেট। তিনি যেন শঙ্করকে এ বার দু’হাত উজাড় করে দেন।” |
|