কঠিন পিচে নতুন ইনিংস
সওয়ার বাঘের পিঠে, পারবেন কি সামলাতে

২৩ ডিসেম্বর
ম আদমি পার্টি (আপ)-র কাণ্ডারী অরবিন্দ কেজরিওয়াল আজ এক লহমায় সওয়ার হয়ে গেলেন ইতিহাসের। রাতারাতি হয়ে গেলেন দিল্লি নামক রাজ্যের প্রধান ভিভিআইপি। সংবিধান-স্বীকৃত না হলেও কেজরিওয়াল চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী নয়, তাঁর পদটির নাম হোক মুখ্যসেবক।
নামে কী আসে যায়! দিল্লির রাজনীতিতে আজ থেকে এক নতুন অধ্যায় শুরু হল। ভারতের ইতিহাসে এত নবীন কোনও রাজনৈতিক দল এর আগে এ ভাবে ক্ষমতার শীর্ষে বসেনি। এ এক অভূতপূর্ব ঘটনা। বলিউডি ছবির মতো। যে ভাবে ‘নায়ক’ ছবিতে অমরীশ পুরি-কে মসনদ থেকে সরিয়ে অনিল কপূর হয়ে উঠেছিলেন আমজনতার মুখ্যমন্ত্রী, যে ভাবে ‘ইনকিলাব’ ছবিতে অমিতাভ হয়ে উঠেছিলেন মসিহা, দিল্লিতেও যেন তারই প্রতিফলন। তবে বিজেপি মুখপাত্র সুধাংশু মিত্তলের কথায়, “এটা নতুন একটা রিয়্যালিটি শো!”
শীলা দীক্ষিতকে হারিয়ে, তাঁর দলের সমর্থন নিয়ে শীলারই চেয়ারে বসা বিশ্বের কোথাও রাজনীতিতে এমন ঘটনা ঘটেছে কি? সম্ভবত না।
আপ সমর্থকদের উল্লাস। সোমবার দিল্লিতে। ছবি: পিটিআই।
কিন্তু কেজরিওয়াল এই অসাধ্যসাধন করলেন কী ভাবে?
আসলে অরবিন্দ কেজরিওয়াল কোনও ব্যক্তির নাম নয়। এই মুহূর্তে এটি ভারতীয় রাজনীতিতে একটি নতুন ‘ফেনোমেনান’ বা বৈশিষ্ট্য। আশিস নন্দীর মতো সমাজমনস্তত্ত্ববিদ মনে করেন, “সার্বিক ভাবে রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রতি অসন্তোষ থেকে একটি অরাজনৈতিক পরিসর তৈরি হয়েছিল। কেজরিওয়াল নতুন দল করে সেই অরাজনৈতিক পরিসরকেই এক নতুন রাজনীতির রূপ দিয়েছেন। এমনকী তাঁর সরকার গঠন করা উচিত কি না, সেটার জন্যও গণভোট চাইতে গিয়েছেন।” আশিস নন্দী মনে করেন, এটি অভিনব ও এক নতুন পরীক্ষা। তিনি এই পরীক্ষার ভাবনাকে খারিজ করে দেননি। কিন্তু অরবিন্দ ভাল্লার কথায়, “আমেরিকার কোনও কোনও প্রদেশে এ ভাবে গণভোট চালু রয়েছে। কিন্তু ভারতে যেখানে নির্বাচনী ব্যবস্থা রয়েছে, সেখানে এই ধরনের গণভোট অবৈধ। কেন না গণতন্ত্রের ভোটে মানুষ রায় দিচ্ছে। তার পর ফের আবার রায় নেওয়া হচ্ছে। তার মানে গণতন্ত্রে যে নির্বাচনী বিধি রয়েছে, তাকে চ্যালেঞ্জ করা হচ্ছে। এতে কার্যত নির্বাচন ব্যবস্থা প্রহসনে পরিণত হচ্ছে। যা করা যায় না।” সুধাংশু মিত্তল বলেন, “এক লক্ষ ৯০ হাজার বৈধ এসএমএস-এর ভিত্তিতে সরকার গড়ার রায় নিয়েছে আপ। যেখানে দিল্লির ভোটার হচ্ছে ৭৭ লক্ষ। এই সামান্য অংশের রায়ে কি এই সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়? আসলে কেজরিওয়াল পেঁয়াজ ভি খায়া, ছিল্কা ভি খায়া!”
তবে মূল প্রশ্নটা সরকার গঠনের ঔচিত্য নিয়ে নয়। এটি কেজরিওয়ালের কৌশলগত পদক্ষেপ। কংগ্রেসও চাঁদ সওদাগরের মতো বাম হাত দিয়ে পুজো করতে বাধ্য হয়েছে। কারণ তারা এখনই ফের ভোট চাইছে না। আবার বিজেপি সরকার গড়ুক, সেটাও তাদের কাছে কাঙ্খিত নয়। তাই কেজরি-কংগ্রেস কোনও উত্তর-নির্বাচনী আঁতাত বা জোট নয়। ভোট এড়াতে নিছক একটা ‘স্টপ গ্যাপ অ্যারেঞ্জমেন্ট’ মাত্র।
মূল প্রশ্নটা স্বপ্ন পূরণের। বলা যায়, কেজরিওয়ালের আসল পরীক্ষার শুরু আজ থেকে। বিরোধী দলে থেকে অনেক কথা বলা যায়। শাসক হিসেবে পরীক্ষায় বসলে বদলে যায় মতটা। কেজরিওয়ালের ক্ষেত্রে কী হয়, সেটাই দেখার। আসলে প্রতিশ্রুতির বন্যা বইয়ে ক্ষমতার শীর্ষে বসেছেন তিনি। কিন্তু সে বসা যে এক প্রকার ক্ষমতা নামক বাঘের পিঠে সওয়ার হওয়া! আমজনতার স্বপ্ন পূরণ করে বাঘের পিঠ থেকে নামতে পারবেন তো খড়্গপুর আইআইটি-র এই মেধাবী প্রাক্তনীটি?
ভোটের দু’দিন আগেও অরবিন্দ সভায় বলেছেন, “দিল্লির মানুষের কাছ থেকে বিদ্যুতের বাড়তি দাম নেওয়া হচ্ছে। আপনারা বিলের টাকা জমা দেবেন না। প্রতিবাদ করুন। রুখে দাঁড়ান।” এখন কেজরিওয়াল এই বকেয়া অর্থ আদায় করবেন কী করে? আর যত দিন না বিদ্যুতের দাম অর্ধেক হয়, তত দিন যদি দিল্লিবাসী তা না মেটান, তখন প্রশাসক হিসেবে তিনি কী করবেন? দিল্লিতে বিদ্যুতের জন্য বছরে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়। তার অর্ধেক ভর্তুকি দিতে হবে অরবিন্দের সরকারকে। টাকা আসবে কোথা থেকে? ৫ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, পাঁচশোটি নতুন স্কুল গড়বেন। সেই স্কুলের জমি কোথায়? বিজেপি নেতা রবিশঙ্কর প্রসাদ বলেন, “শীলা দীক্ষিতের বিরুদ্ধে কমনওয়েলথ ও রবার্ট বঢরার বিরুদ্ধে জমি কেলেঙ্কারির অভিযোগ তোলেন অরবিন্দ। এখন কংগ্রেসের সমর্থন নিয়ে রবার্ট বঢরার বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্ত শুরু করার প্রশাসনিক নির্দেশটি তিনি কবে দেন, তা দেখার জন্য অপেক্ষা করছি।”
আপ-এর নেতা প্রশান্তভূষণের মতে, চরণ সিংহ থেকে দেবগৌড়া বা ইন্দ্রকুমার গুজরাল কারও সরকারকে কংগ্রেস বেশি দিন সমর্থন দেয়নি। এ ক্ষেত্রে চার-ছয় মাস না এক বছর, তারা আপ-কে কত দিন সমর্থন দেবে, তা নিয়ে সব মহলেই সন্দেহ রয়েছে। অবশ্য কংগ্রেসের আশঙ্কা, তাদের নেতাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্ত শুরু করে দিয়ে কেজরিওয়াল কংগ্রেসকে সমর্থন তুলে নেওয়ার জন্য বাধ্য করতে পারে। তখন ফের ভোট হবে। তখন কেজরিওয়াল মানুষের কাছে গিয়ে বলতে পারবেন, আমার সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছিল না। তাই সরকার পড়ে গিয়েছে। সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলে প্রতিশ্রুতি পালন করে দেখাব।
রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘ প্রথমে না চাইলেও পরে জনসঙ্ঘের প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। তেমনই অণ্ণা হজারে না চাইলেও অরবিন্দ রাজনৈতিক দল গড়েছেন। অণ্ণার অরাজনৈতিক আন্দোলনের মধ্যে দিয়েই সেই দলের জন্ম। কিন্তু সে দিনের আন্দোলনের মূল দাবি লোকপাল বিল তো সংসদে পাশ হয়ে গিয়েছে। দিল্লিকে পূর্ণ পৃথক রাজ্যের মর্যাদা দেওয়ার বিষয়টি আবার সংসদের অনুমোদনসাপেক্ষ। তা হলে অরবিন্দের হাতে রইল কী? যা রইল, তা একগুচ্ছ স্বপ্ন, যা ভোটের আগে দেখিয়েছেন তিনি। যা পূরণ না হলে পতনের সিঁড়িতে পা রাখতে হবে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ’৮৪ সালে সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়কে হারিয়ে লোকসভায় এসেছিলেন। তার পর কেন্দ্রে মন্ত্রী হন। বহু বছর বিরোধী আন্দোলন করে আজ মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন। আর কেজরিওয়ালের মুখ্যমন্ত্রিত্ব যেন হঠাৎ হাওয়ায় ভেসে আসা ধন। রাজনীতির কারবারিরা বলছেন, আর একটু সময় নিয়ে দলকে আরও একটু এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পর ক্ষমতার ঘোড়ায় চড়ে বসলে হয়তো আরও ভাল করতেন কেজরিওয়াল। কংগ্রেসের এক নেতার কথায়, “আর যাই হোক কেজরিওয়াল তো অরণ্যদেব বা ম্যানড্রেক নন! আজ উচ্চ শৃঙ্গে তিনি পা রাখলেন। এ বার তো সিঁড়ি ভেঙে নামার পালা শুরু!”

আপ-এর ১৮
মন্ত্রী, বিধায়কদের লাল আলো, বড় বাংলো নয়
দিল্লি জন লোকপাল বিলে সমর্থন
মহল্লা সভাকে ক্ষমতা দিতে স্বরাজ আইন
দিল্লিকে পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা
বিদ্যুৎ সংস্থাগুলির অডিট ও বিদ্যুৎ বিল অর্ধেক করা
বেশি বিল নিলে বিদ্যুৎ সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা
প্রতি বাড়িতে বিনামূল্যে দৈনিক ৭০০ লিটার জল
বেআইনি কলোনিগুলিকে আইনের নিয়ন্ত্রণে আনা
বস্তিবাসীদের জন্য সহজ কিস্তিতে পাকা বাড়ি
পূর্ণ মেয়াদের সরকারি চাকরিতে চুক্তি-নিয়োগ বন্ধ
শিল্পাঞ্চলের জন্য মূল পরিকাঠামো, পরিষেবা
খুচরো ব্যবসায় এফডিআইয়ের বিরোধিতা
৫০০-র বেশি সরকারি স্কুল তৈরি
গ্রামীণ দিল্লির জন্য ভাল পরিষেবা
ভাল পরিষেবাযুক্ত আরও সরকারি হাসপাতাল
সাধারণ নাগরিক, মহিলাদের জন্য বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী
নয়া ফাস্ট-ট্র্যাক কোর্ট তৈরি
সব প্রতিশ্রুতি পালনের জন্য কেন্দ্রকে চাপ
ভোটের ফল প্রকাশের পরে কংগ্রেস ও বিজেপিকে পাঠানো কেজরিওয়ালের দাবিপত্র

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.