বিনোদন বহু রেকর্ড চূর্ণ করে ১৫ কোটির
পাহাড় জয়ের পথে শঙ্কর

টেস্ট ম্যাচের প্রথম দিনে ব্যাটিংটা বেশ স্লো-ই ছিল। কিন্তু দ্বিতীয় দিন থেকে ‘চাঁদের পাহাড়’ যে ভাবে টি-টোয়েন্টির মেজাজে ব্যাটিং শুরু করেছে, তাতে মনে হয় না ১৫ কোটির পাহাড়প্রমাণ স্কোর পেরোতে এমন কিছু অসুবিধে হবে শঙ্করের।
১৫ কোটির বাজেটে বাংলা ছবি এই খবরটাই ছিল চমকে দেওয়ার মতো। অনেকেই তখন প্রশ্ন তুলেছিলেন, কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়-দেব-ভেঙ্কটেশ ফিল্মস ত্রয়ী এই খরচ তুলতে পারবেন তো? প্রযোজক মহলের অনেকে সংশয়ী হয়ে বলেওছিলেন, খরচ না হয় উঠল, হাতে লাভের কড়ি কিছু কি থাকবে?
এই সংশয়ের একমাত্র কারণ হল, গোটা ব্যাপারটাই প্রথম বার হচ্ছে। এই বাজেটের ছবি বাংলায় আগে হয়নি। গত পুজোয় মুক্তি পাওয়া সাড়ে সাত কোটির ‘মিশর রহস্য’ এ যাবৎ সব চেয়ে ব্যয়বহুল বাংলা ছবি। না হলে বাংলা ছবির গড় বাজেট ২ থেকে আড়াই কোটি টাকা। হালে সে রকম ছোট বাজেটের বেশ কিছু ছবির ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে, খরচ উঠে গিয়ে লাভ হয়েছে যথেষ্ট। হাতে গরম উদাহরণ ‘ভূতের ভবিষ্যৎ’ বা ‘ইচ্ছে’। পরিচালকের দাবি, ‘ইচ্ছে’র বাজেট ছিল ৪২ লাখ। ছবি ব্যবসা করেছিল প্রায় ২ কোটির। ‘ভূতের ভবিষ্যৎ’-এর প্রযোজকের দাবি, তাঁদের ১ কোটির ছবি ব্যবসা করেছিল ৩ কোটিরও বেশি।
গত শুক্রবার মুক্তির পর ১৫ কোটির ছবির চার দিনের স্কোরকার্ড কী বলছে?
এক কথায় বলতে গেলে শঙ্করের ব্যাটে রীতিমতো ঝড়! ফলে রেকর্ড রান তাড়া করে ‘লিড’ নেওয়ার ব্যাপারেও (এ ক্ষেত্রে যাকে বলে মুনাফা) প্রযোজকেরা যথেষ্ট আশাবাদী। স্কোরবোর্ডের লিখনটা শোনা গেল যাঁর থেকে, তিনি চাঁদের পাহাড়ের প্রযোজক ভেঙ্কটেশ ফিল্মসের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী। এসকে মুভিজ-এর হিমাংশু ধানুকা বললেন, ‘‘আমার কাছে যা খবর, প্রথম তিন দিনেই ছবিটা দু’কোটির ব্যবসা করে নিয়েছে। যে কোনও বাংলা ছবির ক্ষেত্রেই এটা সর্বকালীন রেকর্ড। আমার মনে হয় শুক্রবারের মধ্যে পাঁচ কোটি তুলে নেবে ছবিটা।”
চাঁদের পাহাড়ের রেকর্ড
প্রথম সপ্তাহান্তে সব থেকে বেশি আয় ২ কোটি
এক দিনে মাল্টিপ্লেক্সে সব থেকে বেশি আয় (আইনক্স সাউথ সিটি) ৪ লাখ ৯৮ হাজার
এক দিনে সিঙ্গল স্ক্রিনে সব থেকে বেশি আয় (প্রিয়া, চারটে শো) ২ লাখ ৯৭ হাজার
শুধু রবিবারেই সব হল মিলিয়ে সব থেকে বেশি আয় ৯০ লাখ
* বাংলা ছবির পরিসংখ্যানে
ভেঙ্কটেশের আর এক প্রতিদ্বন্দ্বী রানা সরকারও বলছেন, এমন বক্স অফিস কালেকশন আগে দেখেননি। রানার কথায়, “আমি পাঁচ কোটি বলব না। কিন্তু অবশ্যই সাড়ে চার কোটির ব্যবসা শুক্রবারের মধ্যেই করে নেবে ছবিটা। অনেকে ছবিটা দু-তিন বার করে দেখতে আসছেন। তার ওপর এটা উৎসবের মরসুম।”
শঙ্করের রোডম্যাপটা শুনবেন? রেকর্ড গড়ার পথে আরও অনেক রেকর্ড ভাঙতে ভাঙতে এগোচ্ছে ‘একেবারে অজ পাড়াগাঁয়ের ছেলে’।
এক) শুরুর উইকএন্ডে দু’কোটির ব্যবসা করাটা যে কোনও বাংলা সিনেমার ক্ষেত্রে রেকর্ড। আগে এই রেকর্ড ছিল জিতের ‘বস’ ছবির। প্রথম তিন দিনে সেই ছবি ব্যবসা করেছিল এক কোটি ছিয়াশি লক্ষ টাকার।
দুই) মাল্টিপ্লেক্সে চলা কোনও বাংলা ছবির এক দিনে সব থেকে বেশি টাকা ব্যবসার রেকর্ডও রবিবার করেছে ‘চাঁদের পাহাড়’।
শুধু আইনক্স সাউথ সিটি থেকেই বক্স অফিস কালেকশন ৪ লাখ ৯৮ হাজার টাকা।
তিন) সিঙ্গল স্ক্রিনেও রেকর্ড। প্রিয়া থেকে রবিবারের রেকর্ড সংগ্রহ ২ লাখ ৯৭ হাজার।
চার) রবিবারে মোট আয়ের হিসেবেও রেকর্ড ৯০ লাখ। সেই ‘বস’-এর ৭২ লাখি রেকর্ড ভেঙে।
ফের চমকালে, টালিগঞ্জ?
তা হলে আরও একটু চমকে দেওয়া যাক। দক্ষিণ কলকাতার নবীনার মতো সিনেমা হল, যার চারপাশে হিন্দিভাষীদেরই প্রাধান্য, সেখানেও ‘ধুম থ্রি’র বদলে শুধু ‘চাঁদের পাহাড়’ই চলেছে। সেখানেও রেকর্ড ব্যবসা। নবীনার মালিক নবীন চৌখানি জানালেন, তাঁদের হল-এ তিন দিনেই ৬ লাখ ৪৩ হাজার টাকার ব্যবসা করেছে শঙ্কর-আলভারেজের গল্প।
এর পরেও ভেঙ্কটেশ কর্তৃপক্ষের হাসি চওড়া না হওয়াটাই অস্বাভাবিক। তবে প্রাথমিক সন্তুষ্টিতে না আটকে থেকে তাঁরা ভবিষ্যৎ রোডম্যাপটাও এখন থেকে ছকে ফেলেছেন। ভেঙ্কটেশ ফিল্মসের শ্রীকান্ত মোহতার কথায়, “প্রথম সপ্তাহে পাঁচ কোটির ব্যবসা আশা করছি। রবিবারের ৯০ লাখের রেকর্ড হয়তো খুব সহজেই বড়দিনে ভেঙে যাবে। আমার হিসেব অনুযায়ী দ্বিতীয় সপ্তাহে চার কোটির ব্যবসা করতে পারে ছবিটা।”
তা হলে ১৫ কোটির মধ্যে ৯ কোটি উঠে গেল। বাকি ৬ কোটি কোথা থেকে আসবে?
আত্মবিশ্বাসী শ্রীকান্ত বলছেন, “বাংলা ফিল্ম মার্কেটে ‘পাগলু’ বা ‘খোকা’ স্যাটেলাইট রাইট্স থেকে ৩ কোটি পায়। ‘চাঁদের পাহাড়ে’ আমরা সেটা সাড়ে চার কোটি হওয়ার সম্ভাবনা দেখছি। তা হলে সব মিলিয়ে সাড়ে তেরো কোটি হয়েই গেল। বাকি টাকাটা (দেড় কোটি) ন্যাশনাল-ইন্টারন্যাশনাল রিলিজ থেকে উঠে আসবে তৃতীয়-চতুর্থ সপ্তাহে।”
শ্রীকান্তের এই হিসেব ফলে গেলে ছবির পুরো খরচ উঠে আসছে। অতএব এ বার আসছে লাভের গল্প। সেই পথটাও বাতলে দিচ্ছেন ভেঙ্কটেশের অন্যতম এই কর্ণধার। তৃতীয়-চতুর্থ-পঞ্চম সপ্তাহে আরও চার-পাঁচ কোটির ব্যবসা আশা করছেন তাঁরা। এখন ২০০টা হল-এ ছবি চলছে। তৃতীয় সপ্তাহে তার সঙ্গে আরও ১০০টা হল-এ মুক্তি পাচ্ছে ‘চাঁদের পাহাড়’। শ্রীকান্ত বলেই দিচ্ছেন, উইকএন্ডের কালেকশন আসার পর ১৫ কোটির পাহাড় পেরোনো কিন্তু ততটা কঠিন লাগছে না। এ ছবি লম্বা দৌড়ের ঘোড়া।”
এই আত্মবিশ্বাসের আরও একটা কারণ সোমবার, কাজের দিনেও ছবির ব্যবসার খতিয়ান।
প্রিয়া এন্টারটেনমেন্টের কর্ণধার অরিজিৎ দত্ত বললেন, “সোমবারেও সব ক’টা শো হাউসফুল। যদি এ ভাবেই চলতে থাকে, তা হলে রবিবার অবধি রেকর্ড কালেকশন হবেই। তবে মফস্সলে কিন্তু এতটা সাড়া ফেলতে পারেনি ছবিটা।” অরিজিতের সঙ্গে একমত হিমাংশু ধানুকাও। বললেন, “মফস্সলের কিছু কিছু শহরে এই ছবি অতটা ভাল ব্যবসা করেনি। তবে শেওড়াফুলি, কল্যাণীর মতো জায়গায় ভাল ব্যবসা করেছে।”
তবে গ্রাম্য দর্শকের যতই শঙ্করের চেয়ে ‘পাগলু’ প্রিয় হোক, প্রযোজকেরা কিন্তু মনে করছেন, বড় স্কোর তাড়া করে ‘লিড’ নিতে হলে শঙ্করকে আরও বেশি করে পৌঁছে দিতে হবে কোণায় কোণায়। যে কারণে সাত কোটির ‘মিশর রহস্য’ যেখানে ৮০টা হল-এ মুক্তি পেয়েছিল, সেখানে ‘চাঁদের পাহাড়’ মুক্তি পেয়েছে ২০০টা হলে। আর এক ভেঙ্কটেশ কর্তা মহেন্দ্র সোনির কথায়, “বাংলা মার্কেটে টাকা তিন ভাবে উঠে আসে।” ৬০ শতাংশ আসে বক্স অফিস থেকে, ১০ শতাংশ আসে ‘অন্য মিডিয়া’ থেকে। যেমন গান, ডিভিডি রাইটস, ন্যাশনাল-ইন্টারন্যাশনাল রিলিজ। বাকি ৩০ শতাংশ আসে স্যাটেলাইট রাইটস বিক্রি করে। ‘চাঁদের পাহাড়ে’ও তার ব্যতিক্রম হবে না। “কিন্তু ওই ‘অন্য মিডিয়া’র মুনাফাটাই ‘চাঁদের পাহাড়ে’র ক্ষেত্রে অনেক বেশি হবে। কারণ এত বড় ন্যাশনাল-ইন্টারন্যাশনাল রিলিজ আগে হয়নি।”
নিজের ছবির এমন রমরমা ব্যবসা সত্ত্বেও খোদ ‘শঙ্কর’ কিন্তু প্রথম তিন দিন বেশ লো-প্রোফাইলই বজায় রেখেছিলেন। কিন্তু সোমবার থেকে উচ্ছ্বাস আর চেপে রাখতে পারেননি দেব। বলেছেন, “আমি দর্শকদের ধন্যবাদ দেব। আমি নিঃসন্দেহে খুব খুশি। ২৭ তারিখ দিল্লি, মুম্বই, বেঙ্গালুরু, পুণে, হায়দরাবাদে ছবিটা রিলিজ করছে। আমেরিকাতেও ১০ জানুয়ারি রিলিজ করবে।”
চার মাস আগে বুক করলেও সোমবার রাতেই মার্সিডিজ এসইউভি-র ডেলিভারি নিলেন শঙ্কর। বলছেন, “আমার জন্মদিন ২৫ ডিসেম্বর। ছবির সাফল্যের খবর শুনে এটাই আমার ‘শঙ্কর’কে উপহার।”

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.