অ্যাথলেটিক্সের ট্র্যাকে অভাবের হার্ডল
শুরু করে অনেকেই, শেষ করতে পারে হাতে গোনা কয়েক জন।
জেলা কিংবা রাজ্য অ্যাথলেটিক্স মিটে বাংলার নানা প্রান্ত থেকে আসা প্রতিযোগীদের ভিড় উপচে পড়ে প্রতি বছরই। কিন্তু তার পরে ধীরে-ধীরে উধাও হয়ে যায় সেই সব মুখ। জাতীয় স্তর অবধি পৌঁছনোর আগেই হারিয়ে যেতে শুরু করে তারা।
নিট ফল, অ্যাথলেটিক্সের আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় গিয়ে প্রায়ই মুখ থুবড়ে পড়ে ভারত। প্রধানত অভাবের জাঁতাকলে পড়েই এই হাল দাবি এক সময়ে আশা জাগানো অনেক অ্যাথলিটের। ক্রীড়া বিশেষজ্ঞদের যদিও মত, কিছুটা মানসিকতার সমস্যা, আর খানিকটা সরকারের উদাসীনতাও এর জন্য অনেকাংশে দায়ী।
প্রথম শীতের এক দুপুরে হাওড়ার মাকড়দহ ইউনিয়ন ক্লাবের মাঠে চলছিল রাজ্য পুলিশের হোমগার্ড নিয়োগের শারীরিক সক্ষমতার পরীক্ষা। সেখানে এসেছিলেন হাওড়ার উদয়নারায়ণপুরের ঝুনু পাঁজা। রাজ্য অ্যাথলেটিক্সে ৪০০ মিটার হার্ডলসে সোনা পেয়েছিলেন কলকাতার চারুচন্দ্র কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী ঝুনু।
ঘটনাচক্রে, হোমগার্ডের পরীক্ষার দিনই সল্টলেকে চলছিল পঞ্জাবের পাতিয়ালায় হতে চলা আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় অ্যাথলেটিক্স মিটের জন্য কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের দল গঠন। সল্টলেকের বাছাই শিবিরে যাননি কেন? ঝুনু জানান, “কয়েক বছর আগে বাবা মারা গিয়েছেন। মা একা। কিছুটা জমি আছে। সেখানে চাষ করে সংসার চলে। আমার ফাইলে সার্টিফিকেট কয়েকটা জমা হয়েছে ঠিকই। কিন্তু এখন আমার একটা চাকরির খুবই দরকার।”
হাওড়ারই সাঁকরাইলের রাধাদাসী এলাকার স্বরূপ মালিক মোহনবাগানের অ্যাথেলেটিক্স দলের সদস্য ছিলেন। জাতীয় স্তরের প্রতিযোগিতায় ৫০০০ ও ১০০০০ মিটারে এক সময়ে নিয়মিত দৌড়েছেন তিনি। খেলেছেন স্কুল ও জেলা স্তরেও। তার পরে সংসারে অভাবের জন্য পিছিয়ে পড়তে শুরু করেন। বছর ১৪ আগে এক দুর্ঘটনায় পায়ে চোট পান। মাঠে ফেরার মতো উপযুক্ত চিকিৎসা পাননি। স্বরূপবাবু বলেন, “আমি গরিব বাড়ির ছেলে। চাকরি না পেয়ে এখন মুরগির দোকান করেছি।”

রাজ্যের নানা জায়গাতেই ছড়িয়ে রয়েছে এই রকম অনেক মুখ। বাড়িতে অভাব, তাড়াতাড়ি বিয়ে হয়ে যাওয়ার মতো অনিবার্য কারণে মাঠ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন তাঁরা। যেমন, রাজ্য ও জাতীয় স্তরে একাধিক পদক জয়ী অ্যাথলিট, উত্তর দিনাজপুরের মেয়ে কল্যাণী শিকদার। এ বছর রাজ্য মিটে নামলেও আর কত দিন খেলা চালাতে পারবেন, নিজেই সংশয়ে। তাঁর কথায়, “গ্রামের বেশির ভাগ অ্যাথলিটই খুব গরিব বাড়ি থেকে আসেন। ঠিক মতো খাবারটুকুও পান না। তাই একটু বড় হওয়ার পরে ছেলেরা চাকরি খোঁজে আর মেয়েদের বিয়ে হয়ে যায়।”
কী বলছেন ক্রীড়া কর্তারা?
রাজ্য অ্যাথলেটিক্স সংস্থার কর্তা সুখেন মণ্ডল বলেন, “অস্বীকার করার উপায় নেই, জেলা স্তরের অনেক ছেলেমেয়েকেই আমরা ধরে রাখতে পারছি না। কারণ, অনেকের বাড়িতেই অভাব রয়েছে। এ বিষয়ে সরকারকে আরও উদ্যোগী হতে হবে।”
নদিয়া জেলা ক্রীড়া সংস্থার সম্পাদক জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়ের আক্ষেপ, “আমার জেলা থেকে এখনও অনেক ভাল অ্যাথলিট জাতীয় স্তরে প্রতিনিধিত্ব করছে। তবে যে সংখ্যাটা রাজ্য মিটে থাকে, তার তুলনায় সংখ্যাটি কিছুই নয়।” হাওড়া জেলা ক্রীড়া সংস্থার কার্যকরী সভাপতি দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, “গরিব পরিবারের ছেলেমেয়েরা অনেক সময় ভাল গাইড না পেয়ে হারিয়ে যায়। মাঠ ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে তাঁরা যদি জেলা ক্রীড়া সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করেন, তা হলে হয়তো এই মাঠছুটদের সংখ্যা কমতে পারে।”
হুগলির সিঙ্গুরের মেয়ে, এ বছর এশিয়ান অ্যাথলেটিক মিটে ২০০ মিটার দৌড়ে রুপো জয়ী আশা রায় অবশ্য দোষ দিচ্ছেন গ্রাম থেকে উঠে আসা অ্যাথলিটদের মানসিকতাকেও। তাঁর কথায়, “অনেকেই জেলা মিট বা রাজ্য মিটে একটা পদক জিতেই ভাবে, এটাই যথেষ্ট। এর পরে তাদের জাতীয় স্তরে জেতার খিদেটাই হারিয়ে যায়। গ্রামের অ্যাথলিটদের এই মানসিকতায় বদল আনতে হবে।”
কঠিন পরিস্থিতি পাড়ি দিতে সাফল্যের খিদে আর মনের জোরই যে সেরা অস্ত্র, তা বিশ্ববরেণ্য ক্রীড়াবিদেরা বারবার বলেছেন। কিন্তু দিনবদল হবে কবে?




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.