যুবকের মৃত্যুতে ফের কাঠগড়ায় বাউন্সাররা, পানশালায় ভাঙচুর
র্ট স্ট্রিটের পরে ফের অভিযোগের নিশানায় উঠে এল বাউন্সারদের তাণ্ডব। এ বারে ঘটনাস্থল দমদম পার্ক এলাকার একটি পানশালা। সেখানে বাউন্সারদের মারে স্থানীয় এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে, এই অভিযোগ তুলে শনিবার সন্ধ্যায় ওই পানশালায় ব্যাপক ভাঙচুর চালায় ক্ষুব্ধ জনতা। পানশালাটির একতলায় একটি বৈদ্যুতিন সামগ্রীর দোকানেও ব্যাপক ভাঙচুর চলে। পানশালাটির বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা গোটা ছয়েক মোটরসাইকেল ভেঙে দেয় জনতা। একটিতে আগুনও ধরিয়ে দেওয়া হয়। পুলিশ জানিয়েছে, নিহতের নাম মাধব দাস (৩২)। বাড়ি লেকটাউনের নস্করবাগানে। নিহতের বাবা বিজয় দাস রাতে দমদম থানায় ছেলের মৃত্যুর ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। তার ভিত্তিতে খুনের মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
কী ভাবে মৃত্যু হল মাধবের? তাঁর পরিবারের অভিযোগ, ওই পানশালার বাউন্সারদের বেধড়ক মারে আহত হয়েই মৃত্যু হয়েছে মাধবের। পানশালার একাধিক কর্মী অবশ্য পুলিশকে বলেছেন, মাধব মদ্যপ অবস্থায় দোতলা থেকে সিঁড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে পড়ে যান। তখনই মাথায় চোট লাগে। শনিবার রাতের খবর, দু’পক্ষের বক্তব্যের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য পানশালার সিসিটিভি ফুটেজ পরীক্ষা করে দেখছেন তদন্তকারীরা।
পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার সূত্রপাত বৃহস্পতিবার রাতে। নিহতের বাড়ির লোকেরা পুলিশকে বলেছেন, বাউন্সারদের মারে মাধব অচেতন হয়ে পড়লে তারাই বাড়িতে ফোন করে খবর দেয়। নিহতের পরিবারের অভিযোগ, রাতেই জখম মাধবকে প্রথমে আরজি কর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও সেখানে তাঁকে ভর্তি করা যায়নি। ফলে মাধবকে নিয়ে তাঁরা এসএসকেএম হাসপাতালে যান। সেখানে চিকিৎসা শুরু হলেও তা সন্তোষজনক মনে না হওয়ায় তাঁর পরিবারের লোকেরা পরের দিন, অর্থাৎ শুক্রবার দুপুরে মুচলেকা দিয়ে মাধবকে ছাড়িয়ে উল্টোডাঙার একটি নার্সিংহোমে নিয়ে যান। কিন্তু সেখানকার চিকিৎকেরা মাধবকে মৃত ঘোষণা করেন। শনিবার নিমতলা শ্মশানে মাধবের অন্ত্যেষ্টি হয়।
নিহতের প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, মাধব কেবল লাইনের কাজ করতেন। বৃহস্পতিবার রাত ১০টা নাগাদ তিনি বাড়ি থেকে বের হন। রাত পৌনে ১২টা নাগাদ মাধবের মোবাইল থেকে তাঁর বাড়িতে ফোন করা হয়। মাধবের পরিবারের বক্তব্য, ওই ফোনেই তাঁরা জানতে পারেন যে মাধব পানশালার সামনে পড়ে আছেন। সারা শরীর রক্তে ভেসে যাচ্ছে। সেই শুনে মাধবের পাড়ার লোকজন পানশালাটির সামনে ভিড় জমান। পানশালার সামনে ৩সি/১ বাসস্ট্যান্ড। মাধবের বাড়ির লোকের অভিযোগ, স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে থাকা দু’টি বাসের মাঝে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে ছিলেন তিনি। মাথা ফেটে ঘিলু বেরিয়ে এসেছিল। গলার শিরা ফুলে ছিল। পাঁজরও ভাঙা ছিল।
পানশালার অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার মহম্মদ আনিসুর জামাল অবশ্য মাধবের পরিজনদের অভিযোগ মানতে চাননি। তাঁর বক্তব্য, “উনি (মাধব) সিঁড়ি থেকে পড়ে গিয়ে চোট পান। আমরা কামারডাঙা পুলিশ ফাঁড়িতে খবর দিই। পুলিশ আমাদেরই দায়িত্ব দেয় মাধবকে হাসপাতালে ভর্তি করার।” নিহতের পরিজনের প্রশ্ন, যদি তা-ই হয়, তা হলে মাধবকে রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখা গেল কেন? কেনই বা বুকে-গলায় আঘাতের দাগ ছিল? এ নিয়ে অবশ্য পানশালা কর্তৃপক্ষ কোনও মন্তব্য করেননি। তবে পানশালায় ভাঙচুর নিয়ে তাঁরা পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছেন। দোকান ভাঙচুর নিয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছেন বৈদ্যুতিন সামগ্রীর দোকানটির মালিকও। বারাকপুর কমিশনারেটের গোয়েন্দা-প্রধান দেবাশিস বেজ রাতে বলেন, “এখনও পর্যন্ত কেউ গ্রেফতার হয়নি। সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখছি।”

ভাঙচুরের পর সেই পানশালা।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জেনেছে, শনিবার সন্ধের মুখে মাধবের পাড়ার কিছু লোক শ্মশান থেকে ফিরে পানশালাটিতে লাঠিসোটা নিয়ে হামলা চালায়। রাতে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, যে বাড়িতে পানশালা, সেটি পাঁচ তলা। এক তলায় বৈদ্যুতিন সামগ্রীর দোকান। উপরের দুই-তিন ও চার তলা পানশালা হিসেবে ব্যবহার হয়। পাঁচ তলায় একটি গেস্ট হাউস রয়েছে। এ দিন জনতা সবক’টি তলাতেই ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়েছে। পুলিশ সূত্রের খবর, প্রাথমিক ভাবে মাধবের পাড়া এবং বাড়ির লোক তাঁর মার খাওয়া এবং মৃত্যু নিয়ে ব্যস্ত থাকায় ঘটনার পরেপরেই পানশালায় কোনও হামলা হয়নি। কিন্তু ক্ষোভ দানা বাঁধছিলই। শনিবার সন্ধ্যার হামলা সেই ক্ষোভেরই বহিঃপ্রকাশ। স্থানীয় কিছু বাসিন্দা পুলিশকে জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার রাতে তাঁরা দেখেছেন যে বাউন্সারেরা জোর করে মাধবকে দোতলা থেকে নামিয়ে দিচ্ছে। স্থানীয়দের এই কথা ভাঙচুরে ইন্ধন জুগিয়েছে বলে পুলিশের প্রাথমিক মত।
স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, নাচ-গান নিয়ে প্রায় রাতেই ওই পানশালায় গোলমাল হতো। তবে তাঁদের সবচেয়ে বেশি ক্ষোভ বাউন্সারদের নিয়ে। স্থানীয়দের অভিযোগ, পানশালার প্রতি তলায় তিন-চার জন করে বাউন্সার থাকত। তারা নিজেরাই মত্ত থাকতো। পথচলতি মহিলাদের কটূক্তি করতেও ছাড়তো না তারা। এলাকার মানুষ বলছেন, পানশালাটির কাজকর্ম নিয়ে অতীতে একাধিক বার থানায় নালিশ জানানো হয়েছে। দমদম থানার অবশ্য দাবি, পানশালাটিতে যে গানবাজনা হতো, সে কথা জানতই না তারা! পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, এই পানশালাটির মালিকের পূর্ব কলকাতায় একাধিক পানশালা রয়েছে। তার মধ্যে একটিতে বেশ কয়েক মাস আগে এক ব্যক্তি গুলিবিদ্ধও হন। নস্করপাড়ার বাসিন্দারা জানান, নিম্নবিত্ত পরিবারের একমাত্র সন্তান ছিলেন মাধব। আগে বস্তিতে থাকলেও ইদানীং এক কামরার ফ্ল্যাটে সপরিবার উঠে এসেছিলেন। বাড়িতে স্ত্রী ও সাত বছরের ছেলে ছাড়াও বৃদ্ধ বাবা-মা আছেন। মাধবের বাবা বিজয় দাস বলেন, “ছেলেটাকে এ ভাবে পিটিয়ে মেরে ফেলবে, ভাবতেও পারিনি।”

ছবি: শৌভিক দে।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.