জামাত আন্তর্জাতিক জঙ্গিবাদেরই শাখা, বলছে তথ্যচিত্র
বাংলাদেশ নিয়ে মার্কিন নীতির বিরোধিতা করার জন্যই কি দেবযানী খোবড়াগাড়েকে গ্রেফতার করে ভারতকে শিক্ষা দেওয়া ওয়াশিংটনের? বাংলাদেশের মৌলবাদ-বিরোধী আন্দোলনের নেতা শাহরিয়ার কবীর অন্তত তেমনটাই মনে করেন। তাঁর অভিযোগ, দক্ষিণ এশিয়ায় তালিবানি মৌলবাদকে প্রতিহত করতে জামাতে ইসলামিকে বাংলাদেশের সমাজে প্রতিষ্ঠিত করার কৌশল নিয়েছে আমেরিকা। জামাত তাদের চোখে ‘নরম ও আধুনিক মৌলবাদী’। কবীরের প্রশ্ন, কিন্তু সত্যিই কি তাই?
পশ্চিম বিশ্বের ‘ভুল’ ভাঙাতে নিজের তৈরি তথ্যচিত্রকেই হাতিয়ার করেছেন একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি-র সম্পাদক শাহরিয়ার কবীর। তুরস্ক থেকে ইরান, আফগান সীমান্তে পাকিস্তানের বালুচিস্তান থেকে উত্তরপ্রদেশের দেওবন্দ, বা নয়াদিল্লি-হায়দরাবাদ-লাহৌর-করাচি ঢুঁড়ে কবীর প্রতিষ্ঠা করেছেন মৌলবাদের কোনও নরম-কঠিন, সাবেক-আধুনিক ভেদাভেদ হয় না। মিশর-সিরিয়ার ইসলামি ব্রাদারহুড, বা পাকিস্তান-আফগানিস্তানের তালিবানের মতোই আন্তর্জাতিক মৌলবাদ ও জঙ্গিবাদের শাখা বাংলাদেশের জামাতে ইসলামি। আল কায়দার সঙ্গেও রয়েছে তাদের নিবিড় যোগাযোগ। বাংলাদেশের জামাত কর্মীরা টুপি-দাড়ি ছাড়তে পারেন, জোব্বার বদলে জিন্স-টিশার্ট পরে মিছিল করতে পারেন, কিন্তু মতাদর্শগত ভাবে তাঁরা জঙ্গিই। তথ্যচিত্র বলছে, ইসলামি শাসনবিধি কায়েম করার লক্ষ্যে খুন-ধর্ষণকেও অন্যায় বলে মানে না জামাতের মৌলিক মতবাদ। আরবের পেট্রোডলার উপচে পড়ে বাংলাদেশে তাদের শাখা সংগঠনটির প্রসারেও। বাংলাদেশের মাদ্রাসা থেকে আফগানিস্তানে ওসামা বিন লাদেনের দলে যোদ্ধা পাঠায় এই জামাতের নেতারাই।
‘জিহাদ’ সিরিজের তৃতীয় ও আনকোরা ওই ছবিটির নাম ‘দ্য আলটিমেট জিহাদ’। তা নিয়ে বিশ্বের মৌলবাদ-বিরোধীদের কাছে দরবার করছেন কবীর। শুক্রবার ঢাকায় পাকিস্তান হাই-কমিশনের সামনে ধর্না দিয়েই শনিবার কলকাতায়, পর দিন ছুটছেন দিল্লি। বলেন, “সর্বত্র দিব্যি ছড়িয়ে মৌলবাদীদের শাখা-প্রশাখা। কিন্তু মৌলবাদ-বিরোধীদের সমবেত করতে কত যে সমস্যা!”
এর আগেও বহুবার কলকাতায় এসেছেন কবীর। এ বার সঙ্গী হয়েছে ক্রাচ। মাস কয়েক আগেও ঢাকায় আক্রান্ত হয়েছেন তিনি। সভাস্থল তছনছ করেছে মৌলবাদী হেফাজতে ইসলামি। চোট পেয়েছেন পায়ে। কিন্তু তার মধ্যেও পেছনে ক্যামেরা রেখে তুরস্ক-পাকিস্তান-মিশরের মৌলবাদ-বিরোধীদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তাহরির স্কোয়ারের আন্দোলনকারী নেতার সঙ্গে আলাপচারিতায় দেখিয়েছেন, কী ভাবে মৌলবাদ-বিরোধী আন্দোলনকে হাইজ্যাক করে ক্ষমতা দখল করেছে জঙ্গি ইসলামি ব্রাদারহুড। সেখানেও তাদের পেছনে ছিল আমেরিকার সমর্থন। কবীরের কথায়, মিশর থেকে ইন্দোনেশিয়া সর্বত্র আমেরিকার এখন এক নীতি। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ লড়াই করছেন। একাত্তরের মতো এ বারেও তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছে ভারত। কবীর বলেন, “ওয়াশিংটন গিয়ে ভারতের বিদেশসচিব সুজাতা সিংহ বলে এসেছেন, বাংলাদেশ নিয়ে মার্কিন নীতি ভয়ঙ্কর ভুল। দেবযানী খোবরাগাড়ে প্রসঙ্গেও মার্কিন ঔদ্ধত্যের জবাব দিয়েছে দিল্লি। বাংলাদেশের মানুষও এ থেকে লড়াইয়ের অনুপ্রেরণা পাচ্ছেন।” আলোচনা সভায় কবীর বলেন, এই লড়াইয়ে পরাজয়ের অর্থ বাংলাদেশের পাকিস্তানে ফিরে যাওয়া। আর একাত্তরে সেই হারের বদলা নিতেই সন্ত্রাসের রাস্তায় নেমেছে জামাত। ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির এই সম্পাদকের দাবি, বাংলাদেশ জুড়ে তাদের নাশকতা-হিংসার সঙ্গে নির্বাচনের কোনও সম্পর্ক নেই। কারণ আদালতের নির্দেশে এই নির্বাচনে জামাতের অংশ নেওয়ার কোনও সুযোগই নেই।
ইন্দো-বাংলাদেশ কালচারাল সেন্টারের উদ্যোগে এ দিনের অনুষ্ঠানে চমক ছিলেন বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী শামসুল হক নান্নু। জামাতের শীর্ষনেতা আলি আহসান মুজাহিদের বিরুদ্ধে গণহত্যার সাক্ষ্য দিয়েছেন তিনি। জানালেন, তার পর থেকেই জামাতের হুমকি চলছে। এ দেশেও কার্যত গা-ঢাকা দিয়ে বেড়াতে হচ্ছে তাঁকে। কারণ, আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠনের শাখাপ্রশাখা সর্বত্র। বক্তৃতা দিতে গিয়ে আবেগ-বিহ্বল হয়ে পড়েন নান্নু। বলেন, লড়াইয়ে পরাজয়ের অর্থ জামাতের হাতে প্রাণে মারা পড়া। আর সে লড়াইয়ে ভারতের মানুষ বরাবরের মতো এ বারও তাঁদের পাশে।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.