মমতার স্পর্শে শুরু বড়দিনের উৎসব
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলছিলেন, সবার কলকাতার কথা! অ্যালেন পার্কের মাঠে কয়েক পা দূরে দাঁড়িয়ে ব্ল্যাকবার্ন রোডের চিনে বৌদি শ্রীমতি লি তখন ধোঁয়া-ওঠা বাটিতে মাছ-চিকেনের ব্রথ ভরছেন।
কালিম্পংয়ের ছেলে, অধুনা কলকাতাবাসী বিমল ভূষল বা নোনাপুকুরের গোয়ান বধূ মারিয়া ফার্নান্ডেজও মহাব্যস্ত! ভোজনরসিক বাঙালির পাতে হাসিমুখে নানা কিসিমের মোমো কিংবা গোয়ার রেশাদ মশলার মাছের ঝোল তুলে দিচ্ছেন। পার্ক স্ট্রিটের আলোয় বাংলা-ইংরেজিতে ক্রিসমাস ক্যারল, কলকাতার নামজাদা ব্যান্ডের উদ্দাম সুরের সঙ্গে নানা জাতের স্বাদ-গন্ধও মিশল। জাতধর্মের বেড়া ডিঙিয়ে একযোগে হইচইয়ের নেশাই বেঁধে দিল শহরে আসন্ন বড়দিনের মেজাজ।
শুক্রবার সন্ধ্যার পার্ক স্ট্রিটে কলকাতার বড়দিন-উৎসবের উদ্বোধনে এসে কল্লোলিনীর এই মিলমিশের ঐতিহ্যের কথাই বলছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। “উৎসবের মেজাজে কলকাতা দুনিয়ায় এক নম্বর (লিড দ্য ওয়ার্ল্ড)। সকলের সুইট হোম। কলকাতা হল কসমোপলিটন।” গত তিন বছর ধরে শহরের বাঁধা-পার্বণ এই ক্রিসমাস ফেস্টিভ্যাল এ বারও কলকাতার রংবেরঙের জীবনচর্যাকেই কুর্নিশ জানাল। নিজের আনন্দ একসঙ্গে প্রতিবেশীরা মিলে ভাগাভাগি করে নেওয়াই বড়দিনের মন্ত্র এ কথা বলে এমন উৎসবকে স্বাগত জানালেন কলকাতার আর্চবিশপ টমাস ডি’সুজাও।
...আলোয় ভরো প্রভু: পার্ক স্ট্রিটে শুরু হল বড়দিন উৎসব। শুক্রবার তারই
আনুষ্ঠানিক সূচনায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সঙ্গে কলকাতার আর্চবিশপ টমাস ডি’সুজা,
কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় ও সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।
ইদানীং কলকাতায় পুজোর ঠাকুর দেখা যেমন মহালয়ার পর থেকেই শুরু হয়ে যায়, বড়দিনের আনন্দে মাততেও কে আর ক্রিসমাস বা ক্রিসমাস ইভ অবধি অপেক্ষা করে! সরকারি কর্তাদের মতে, শহরবাসীর মন বুঝেই ক্রিসমাস ফেস্টিভ্যালের অবতারণা। এবং ক্রমশ এটাই অনেকের কাছে বড়দিনের মহালয়া হয়ে উঠেছে। পর্যটন দফতর এবং ওই এলাকার পাঁচতারা হোটেলের সহায়তায় উৎসবের মহড়া শুরু হয়েছে আরও আগে। আলোর বাহারে পার্ক স্ট্রিটের কনের সাজ বড়দিনের দেড় সপ্তাহ আগেই জাঁকিয়ে বসেছে।
এই আলোর জন্য মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ দিলেন তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন। চৌরঙ্গির দিক থেকে রডন স্ট্রিট অবধি পার্ক স্ট্রিট জুড়ে ছয়লাপ ধবধবে আলোর ‘আর্চ’। লন্ডনের অক্সফোর্ড স্ট্রিটের প্রেরণায় এই নকশা সাজিয়েছেন চন্দননগরের আলোক-শিল্পীরা। মুখ্যমন্ত্রী বললেন, “এমন আলো আগে হয়নি।” গত ভাইফোঁটার মধ্যেই চন্দননগরের শিল্পীদের ডেকে তাঁদের সঙ্গে কথা বলে আলোর রকম-সকম চূড়ান্ত করে ফেলেছিলেন মমতা।
উৎসবের আয়োজনে বড়দিনের আনন্দটা অনেক গুণ বাড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি এ বার বড়দিনের সন্ধেটা স্মরণীয় করে তুলতেও অন্য ভাবে ভাবছে রাজ্য সরকার। অন্য বার বড়দিনের সন্ধেয় পার্ক স্ট্রিটের ভিড়ে ট্রাফিক চালু রাখাই কঠিন হয়ে পড়ে। মুখ্যমন্ত্রীর এ দিনের ঘোষণা, “এই ২৫ ডিসেম্বর, বিকেল পাঁচটা থেকে রাত একটা--- পার্ক স্ট্রিটে কোনও গাড়িই চলবে না। ঠিক পুজোর ঠাকুর দেখার মতোই পথচারীরা ইচ্ছেমতো ঘুরে-ঘুরে আলো দেখবেন। রেস্তোরাঁয় কিংবা ক্রিসমাস ফেস্টিভ্যালের বিভিন্ন খাবারের বিপণিতে ভাল-মন্দ চাখবেন। ভিড় সামলাতে পুলিশের হয়তো একটু কষ্ট হবে।” এ বার চৌরঙ্গির দিক থেকে উড স্ট্রিট অবধি রাজপথ তাই শুধুই আমুদে পদাতিকদের মুক্তাঞ্চল।
সপ্তাহ-শেষের বিকেলে শুরু হওয়া বড়দিন-উৎসবও চলবে একেবারে বছর পার করে, ২০১৪ সালের ২ জানুয়ারি অবধি। অ্যালেন পার্কের মাঠে ফি-সন্ধেয় গানের আসর ছাড়াও পার্কে বা রাস্তার এক দিকের ফুটপাথে বিপণির ছড়াছড়ি। ক্রিসমাস, নতুন বছরের উৎসবের সাজ-সরঞ্জাম এবং দেশ-বিদেশের খানা। সর্বত্র ঘুরে বেড়াচ্ছেন জলজ্যান্ত সান্তাক্লজ, চার্লি চ্যাপলিন, মিকি মাউসরা। চারপাশের মেজাজটা কিছুক্ষণ জরিপ করে মুখ্যমন্ত্রী বলে গেলেন, “উৎসবের দিনগুলো সকলে সুস্থ, সুন্দর থাকবেন।”
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.