জ্ঞানেশ্বরী
অসিত মাহাতোর বিরুদ্ধে চার্জশিট, অনুমতি রাজ্যের
সিবিআইয়ের আর্জি নবান্নে এসে পৌঁছেছিল মাসখানেক আগে। জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেস অন্তর্ঘাত-মামলায় পুলিশি সন্ত্রাস বিরোধী জনসাধারণের কমিটি (পিসিপিএ)-র একদা মুখপাত্র অসিত মাহাতোর বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশের অনুমতি চেয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে চিঠি লিখেছিল কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো। শেষমেশ প্রশাসনের একাধিক কর্তা ও সরকারি কৌঁসুলিদের পরামর্শ মেনে রাজ্য সরকার তিন দিন আগে সিবিআই-কে সেই অনুমতি দিয়েছে। অসিত এখন জামিনে মুক্ত।
কাউকে চার্জশিট দেওয়ার জন্য সিবিআইয়ের মতো কেন্দ্রীয় সংস্থাকে কেন রাজ্যের অনুমতি নিতে হচ্ছে?
রাজ্য পুলিশের এক কর্তার ব্যাখ্যা, “বেআইনি কার্যকলাপ প্রতিরোধ আইনে (ইউএপিএ) মামলা হলে চার্জশিট পেশের আগে সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারের অনুমতি প্রয়োজন। জ্ঞানেশ্বরী-কাণ্ডে সিবিআই যত জনের নামে ইউএপিএ-তে মামলা রুজু করেছে, প্রত্যেককে চার্জশিট দেওয়ার অনুমতি ব্যুরোকে দিয়েছিল পশ্চিমবঙ্গের পূর্বতন সরকার।” পুলিশকর্তাটি জানান, জ্ঞানেশ্বরীর মূল চার্জশিটে অসিতের নাম ছিল না। পরে ঢোকানো হয়েছে।
জ্ঞানেশ্বরী-মামলায় অসিত মাহাতোর বিরুদ্ধে সেই চার্জশিট পেশের অনুমতি চেয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে চিঠি লিখেছিলেন সিবিআই ডিআইজি (স্পেশ্যাল ক্রাইম ব্রাঞ্চ) শঙ্খব্রত বাগচি। রাজ্য পুলিশের এক কর্তার কথায়, “পশ্চিম মেদিনীপুরের স্পেশ্যাল কোর্টে মামলাটির শুনানি চলছে। জ্ঞানেশ্বরীর চালক, সহ-চালক, গার্ড-সহ তিরিশ জন ইতিমধ্যে সাক্ষ্য দিয়েছেন। সিবিআই চাইছে, শুনানি চলাকালীনই অসিতের নামে চার্জশিট দাখিল করে চার্জ গঠন সেরে ফেলতে। তা হলে মামলাটি দ্রুত শেষ করা যাবে।”

অসিত মাহাতো
কিন্তু চার্জশিটের অনুমতি দিতে এক মাস লাগল কেন?
রাজ্য প্রশাসনের একাংশের বক্তব্য: ২০১০-এর জ্ঞানেশ্বরী-কাণ্ডের পিছনে ‘রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের’ অভিযোগ এনে সিপিএমের দিকে আঙুল তুলেছিলেন তৎকালীন বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি তখন রেলমন্ত্রী। যে হেতু রেল-পথে অন্তর্ঘাত, তাই তদন্তের ভার সিবিআইয়ের হাতে ন্যস্ত করার দাবি মমতাই জানিয়েছিলেন। রাজ্যের তদানীন্তন বাম সরকার প্রথমে তা না-মানলেও পরে সিবিআই-ই তদন্তে নামে। কিন্তু কেন্দ্রীয় তদন্তেও অন্তর্ঘাতের পিছনে মাওবাদী ও তাদের সহযোগী সংগঠন পিসিপিএ-র ভূমিকার ছায়া জোরালো হয়ে উঠেছে। বস্তুত চার্জশিটে তা-ই বলেছেন সিবিআইয়ের গোয়েন্দারা। অসিতকে চার্জশিটের অনুমতিদানের আগে এমন সাত-সতেরো দিক খতিয়ে দেখতে গিয়েই কিছুটা দেরি হল বলে জানিয়েছে নবান্ন-কর্তাদের এই মহল।
প্রশাসনের অপর অংশের মুখে অবশ্য ভিন্ন তত্ত্ব শোনা যাচ্ছে। এদের যুক্তি: বিরোধী নেত্রী এখন মুখ্যমন্ত্রী, যাঁর প্রধান কর্তব্য মানুষের সুরক্ষা নিশ্চিত করা। সেই কর্তব্য ও দায়িত্বের কথা মাথায় রেখেই পুলিশ-প্রশাসন ও আইন-আধিকারিকদের সঙ্গে পরামর্শ করে অসিতের বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশের অনুমতি দিলেন রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান। খানিকটা সময় তাতেই লাগল। “শুধু অসিত মাহাতো নন। এক সময় যাঁরা পিসিপিএ-র সদস্য ছিলেন, বা যাঁরা মাওবাদীদের সাহায্য করেছেন, তাঁদের অনেকেই এখন শাসকদলের কাছাকাছি। তবু প্রশাসন যে অসিতের বিরুদ্ধে ওঠা অন্তর্ঘাতের অভিযোগকে লঘু করে দেখছে না, সিবিআইয়ের আর্জি মেনে সেই বার্তাই দিলেন মুখ্যমন্ত্রী।” দাবি করছেন প্রশাসনের এক কর্তা।
রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র অবশ্য কিঞ্চিৎ কটাক্ষ করেছেন। তাঁর মন্তব্য, “বিরোধী থাকাকালীন ওরা (তৃণমূল) মাওবাদীদের সঙ্গে আঁতাঁত করেছিল। আমরা তখনই বলি, জ্ঞানেশ্বরীর অন্তর্ঘাত মাওবাদীদের কাজ। পরে সিবিআই-তদন্তে একই তথ্য প্রকাশ পায়। কিন্তু মানুষকে বিভ্রান্ত করতে তৃণমূল তখন সব অস্বীকার করেছিল।” সুর্যবাবুর প্রশ্ন, “দুর্ঘটনার পরে উনি (মমতা) অন্তর্ঘাতের জন্য সিপিএম-কে দায়ী করেছিলেন। তা হলে এখন অসিত মাহাতোর বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশের অনুমতি দিলেন কেন?”
রাজ্য প্রশাসনের সিদ্ধান্তে ‘স্ববিরোধ’ দেখছে কংগ্রেসও। প্রদেশ কংগ্রেস নেতা মানস ভুঁইয়া বলেন, “অসিত মাহাতোর মতো পুলিশি সন্ত্রাস বিরোধী জনসাধারণের কমিটির যাঁরা পঞ্চায়েত ভোটের আগে তৃণমূলের সঙ্গে ছিলেন, মুখ্যমন্ত্রী এখন প্রত্যেককে চার্জশিটের অনুমতি দিচ্ছেন! অথচ মমতাই এক সময় জঙ্গলমহল থেকে কেন্দ্রীয় বাহিনী প্রত্যাহারের দাবিতে সরব হয়েছিলেন! ক্ষমতায় এসে আবার উনি-ই কেন্দ্রকে চিঠি লিখে অনুরোধ করছেন, বাহিনী রেখে দেওয়া হোক!”
অসিত নিজে কী বলেন?
তাঁর দাবি, “জ্ঞানেশ্বরীর ঘটনায় জড়িত ছিলাম না। এটা জেনেই আদালত জামিন দিয়েছে। এখন নতুন করে কিছু শুরু হলে বলতে পারব না।” পিসিপিএ কি এখনও আছে? লালগড়ের ভুলাগেড়িয়ার বাসিন্দা অসিতের জবাব, “না, না। ও সব আর নেই।” কী করছেন তা হলে?
“পুরোদমে চাষবাস।” জানাচ্ছেন জঙ্গলমহলে জনগণের কমিটির একদা মুখপাত্র।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.