বার্ধক্য ভাতা অমিল, বিডিওকে
সামনে পেয়ে সরব গ্রামের বৃদ্ধাও
ড়ির কাঁটায় রাত সাড়ে ন’টা। শনিবার দক্ষিণ ২৪ পরগনা মথুরাপুর ২ ব্লক অফিসের সামনে চলছে পথনাটিকা। ব্যাগ গুছিয়ে অফিসের লোকজন রওনা দিচ্ছেন গ্রামে। রাত ১০টা বাজতে ১০ মিনিট আগে বিডিও ত্রিদিব সর এলেন নিজের চেম্বারে। ডায়েরি আর কাগজপত্র নিয়ে শীতের রাতে তিনিও অটোয় সওয়ার হয়ে কর্মীদের সঙ্গে চললেন গ্রামের দিকে।
মথুরাপুর-২ ব্লকে ১১টি পঞ্চায়েত, ৬০টি গ্রাম। এলাকায় বিভিন্ন সরকারি প্রকল্প কতটা কার্যকরী হয়েছে তা সরেজমিনে দেখতে ব্লক অফিসের উদ্যোগে তিন দিন ধরে হল ‘চলো গ্রামে যাই অভিযান’। গ্রামে গ্রামে গিয়ে রাত্রিবাস ও গ্রামবাসীদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলে সমস্যার খতিয়ান নেওয়াই উদ্দেশ্য। ত্রিদিববাবুর সেই সফরে সঙ্গী প্রতিবেদকও।
কোম্পানির ঠেক মোড় থেকে বাঁ দিকের সরু পিচ রাস্তা ধরে চলল অটো। মিনিট পনেরো পরে দাঁড়াল একটা সরু গলির সামনে। টাঙ্গিপাড়া গ্রামে ঢোকার ওই রাস্তায় অটো ঢুকতে পারবে না। তাই সেখান থেকে মোটরবাইকে চড়ে মিনিট পাঁচেক যেতেই পাওয়া গেল স্বপন তাঁতীর বাড়ি। তাঁর বাড়িতেই রাত্রিযাপন। সকালে শুরু হবে অভিযান।
গ্রামে প্রায় হাজার লোকের বাস। আগের দিনই গ্রামে বিডিও-র আসার কথা জানতেন গ্রামবাসীরা। তাই সকাল থেকেই উপচে পড়ল ভিড়। সরকারি আধিকারিককে নিজের মুখে নিজের কথা জানানোর সুযোগ হাত ছাড়া করতে রাজি নন কেউই। বিশেষ করে গ্রামের প্রবীণরা। তাঁদের বেশিরভাগেরই অভিযোগ, বার্ধক্য ভাতা মিলছে না। বিধবা ভাতাও অমিল। ছিলেন আশি বছরের লক্ষ্মীরানি তাঁতিও। লাঠিতে ভর দিয়ে উঠে দাঁড়ালেন। বললেন, “বয়স হয়েছে। ছেলেরাও সংসার সামলে আমার দায়িত্ব নিতে হিমসিম খায়। সারা বছর অসুস্থ থাকি। বার্ধক্য ভাতাটার ব্যবস্থা করে দেবে বাবা?”
শুধু কি ভাতা? গ্রামে ঢোকার ১ কিলোমিটার রাস্তাটা সংস্কার হয়নি কত দিন। এবড়ো খেবড়ো রাস্তায় হাঁটা দায়। এত লোকের জন্য ভরসা মোটে দু’টো নলকূপ। অনেকেই এখনও জব কার্ড পাননি। প্রাথমিক স্কুলের অবস্থাটাও খুব ভাল না। বেহাল পড়ে রয়েছে শ্মশানটা।
সব সমস্যাই লিখে নিলেন ত্রিদিববাবু। এ বার যেতে হবে প্রাথমিক স্কুলটাতে। সকাল হতে না হতে সেখানে শুরু হয়েছে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র। স্কুলের শিক্ষক, শিক্ষিকা বা পড়ুয়াদের সঙ্গে তাই আর দেখা হল না। অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী দীপালি হালদারের সঙ্গেই কথা বললেন। খাবারের মান পরখ করার জন্য চাল, ডাল নিয়ে আসতে বললেন তাঁকে। ডালে পোকাও মিলল। ডিলারটি কে, জানতে চাইলেন বিডিও।
টাঙ্গিপাড়া শেষ। এ বার ২৩ নম্বর লাটগ্রামের দিকে রওনা হলেন তিনি। অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে গেলেন। মণি নদী লাগোয়া স্লুইজ গেট নিয়ে কথা বললেন গ্রামবাসীদের সঙ্গে। দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ ফিরলেন নিজের চেম্বারে।
বিডিওর এই অভিযানে সামিল ছিলেন ব্লক অফিস ও পঞ্চায়েত সমিতির অফিসের জনা ষাটেক কর্মী। তাঁরাও সঙ্গে সঙ্গে থেকেছেন তাঁর। সাহায্য করেছেন তাঁকে। দেখা গিয়েছে, নিত্য সমস্যা ছাড়াও কাজ বাকি রয়েছে বেশ কিছু কাজ। ব্যক্তিগত উপভোক্তা প্রকল্পে পেয়ারা বা কলা চাষ, কেঁচো সার তৈরি, জমি ও বাড়ি সংস্কার করা, নির্মল ভারত অভিযান প্রকল্পে শৌচাগার তৈরির কাজ, সংখ্যালঘু ও তফসিলি জাতি ও উপজাতিভুক্ত ছাত্রীদের জন্য হস্টেল তৈরি, ট্রেনিং সেন্টার তৈরির কাজ ছাড়াও বাকি রয়েছে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলির সৌন্দর্যায়নের কাজ। ব্লক অফিস সূত্রে জানানো হয়েছে, সব ক’টা সমস্যা খতিয়ে দেখবেন তাঁরা। কেসগুলো নিয়ে জেলাস্তরে রিপোর্টও পাঠাবেন। এ ক’দিনের অভিযানের একটি তথ্যচিত্র পাঠানো হবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে।
ত্রিদিববাবু বলেন, “যোগ্য আবেদনকারীরা যাতে জব কার্ড পান ও স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মাধ্যমে প্রত্যেকে সাবলম্বী হতে পারেন তা দেখব আমরা। মাইকে প্রচার করে, পোস্টারিং করে বিভিন্ন সরকারি প্রকল্প সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে সচেতন করব।”





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.