মেয়েদের দ্বিগুণ ছেলে ছাড়ছে স্কুল
মেয়েদের থেকে স্কুলছুট ছেলের সংখ্যা অনেক বেশি। সম্প্রতি নদিয়া জেলা প্রশাসনের এক সমীক্ষায় উঠে এসেছে এমনই তথ্য। গ্রামে গ্রামে ঘুরে পার্শ্ব-শিক্ষকরা মোট ২৫৫৮ জন স্কুলছুটকে চিহ্নিত করেছেন। তাদের মধ্যে ১৬৭৬ জনই ছেলে!
স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠছে স্কুলে না যাওয়া ছেলেদের সংখ্যা তুলনামূলক ভাবে এত বেশি কেন? জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি অর্চনা ঘোষ সরকার বলছেন, “শিশু শ্রমিক হিসাবে ছেলেদের কদরই বেশি। তাই সংসারে দু’ পয়সা বাড়তি রোজগার হবে বলে বহু অভিভাবকই তাদের স্কুলে না পাঠিয়ে কাজে পাঠান। তাছাড়া ছেলেরা অনেক বেশি বহির্মুখী। মেয়েরা নানা অসুবিধা সহ্য করেও স্কুলে যায়। ছেলেরা তা করে না। ফলে স্কুলছুট ছেলেদের সংখ্যাটা ক্রমশ বাড়ছে। আমরা চেষ্টা করছি বাইরে থাকা ছেলেমেয়ে সকলকেই স্কুলে আনতে।”
জেলার অন্যতম পিছিয়ে পড়া এলাকা চাপড়া। কাঁটাতার লাগোয়া হাটখোলা হাই মাদ্রাসার প্রধানশিক্ষক খাদিমুল ইসলাম বলেন, “স্কুলে ছাত্রীদের সংখ্যা বাড়ছে। আমাদের মাদ্রাসাতেই এই মুহূর্তে ছাত্রীর সংখ্যা ছাত্রের থেকে প্রায় ২০ শতাংশ বেশি।” খাদিমুল বলেন, “সীমান্তের এইসব এলাকায় বেশিরভাগ পরিবার দরিদ্র। চোরাচালান এখন বন্ধের মুখে। বহু পরিবারেই ছেলেরা স্কুল ছেড়ে কাজে লেগে পড়ছে। অথচ মেয়েরা কিন্তু ইদানিং লেখাপড়াতে অনেক বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছে।”
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, স্কুলছুটদের নিয়ে সমীক্ষা হয়েছিল এ বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে মাচ পর্যন্ত। গ্রামে গ্রামে ঘুরে পার্শ্ব-শিক্ষকরা মোট ২৫৫৮ জন স্কুলছুটকে চিহ্নিত করেছেন। তাদের অনেকেই কোনওদিন স্কুলে যায়নি। আবার অনেকেই দু’ এক বছরের জন্য স্কুলে গিয়ে আর স্কুলমুখো হয়নি। ওই ২৫৫৮ জনের ১৬৭৬ জন ছেলে আর ৮৮২ জন মেয়ে। ২৪৮ জনের বয়স ৬ থেকে ৮ বছরের মধ্যে। আর ৮ থেকে ১৪ বছর বয়সী রয়েছে ২৩১০ জন। এদের মধ্যে শারীরিক প্রতিবন্ধকতার জন্য স্কুলে যায় না এমন ছেলে মেয়ের সংখ্যা ৩২২ জন।
তেহট্টের নাজিরপুর বিদ্যাপীঠের পার্শ্ব-শিক্ষক প্রদীপ্ত দাসও বলছেন, “আমাদেরও একই অভিজ্ঞতা। সীমান্তে লাগোয়া এই এলাকায় ষষ্ঠ কিংবা সপ্তম শ্রেণিতে পড়তে পড়তেই বাইরে কাজে চলে গিয়েছে এমন ছাত্রের সংখ্যাও নেহাত কম নয়। অভিভাবকরা দায়ী করেছেন অভাবকেই। অথচ ওই পরিবারেরই মেয়েটা দিব্যি স্কুলে আসছে।”
জেলাশাসক পি বি সালিম বলেন, “বাড়ি বাড়ি ঘুরে স্কুলছুট ও তাদের অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। বেশ কিছু সমস্যা থাকায় অভিভাবকরা ছেলেমেয়েদের স্কুলে না পাঠিয়ে কাজে পাঠান। অভিভাবকদের সেই সমস্যার সমাধান করে স্কুলছুটদের স্কুলে আনতে চাইছি। এই প্রকল্পের কথা শুনে খুশি হয়ে একটা নামও ঠিক করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়‘শিক্ষার আলো’।” আজ মঙ্গলবার নদিয়া সফরে এসে মুখ্যমন্ত্রী ওই প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন বলে জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর।
জেলা প্রশাসনের এই উদ্যোগকে কটাক্ষ করে নিখিলবঙ্গ শিক্ষক সমিতির জেলা সম্পাদক তথা তেহট্টের বিধায়ক সিপিএমের রণজিৎ মণ্ডল বলেন, “আমাদের সময়েও পার্শ্ব-শিক্ষকরা প্রতিবন্ধী ও স্কুলছুটদের স্কুলে নিয়ে আসতেন। আমরা যেটা নিঃশব্দে করতাম এরা সেটা ঢাক পিটিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর হাত দিয়ে করছেন।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.