রাস্তায় অ্যাসিড হামলা, জখম মহিলা
দেশের রাজধানীর রাস্তায় নির্ভয়াকে নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছিল পুলিশ-প্রশাসন। ওই ঘটনার ঠিক এক বছরের মাথায় বীরভূমের সদর সিউড়ি শহরের পথে প্রকাশ্য দিবালোকে এক আদিবাসী মহিলার গায়ে অ্যাসিড ছুড়লেন এক যুবক। ঘটনার পরে অভিযুক্ত যুবক গ্রেফতার হলেও আরও এক বার প্রয়োজনের সময় মেয়েদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ পুলিশ-প্রশাসন। বছরভর সিউড়ি শহরে পরপর কয়েকটি ঘটনায় নির্যাতনের স্বীকার হয়েছেন মেয়েরাই। কোনও ক্ষেত্রেই পুলিশ মেয়েদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে না পারায় ক্ষোভ বাড়ছে এলাকায়।
সোমবার সকালের ঘটনাটি ঘটেছে সিউড়ির নতুন ডাঙাল পাড়ায়। নির্যাতিতা বধূ রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ করেন। এ দিন কাজে যোগ দিতে যাওয়ার সময়েই পূর্ব পরিচিত এক যুবক তাঁর উপরে হামলা চালায় বলে অভিযোগ। সিউড়ি সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ওই মহিলার ডান কানের নীচ থেকে গলা এবং পিঠের বেশ খানিকটা পুড়ে গিয়েছে। বধূর স্বামীর লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে এ দিনই পুলিশ সিউড়ির কড়িধ্যায় আমাইপুর গ্রামের বাড়ি থেকে বরুণ লোহার নামে ওই যুবককে গ্রেফতার করেছে। অভিযুক্ত যুবকও বিবাহিত। প্রাথমিক তদন্তে ওই যুবক পুলিশকে জানিয়েছে, প্রেমে ব্যর্থ হয়ে আক্রোশে তিনি ওই বধূর গায়ে অ্যাসিড ঢেলেছেন। জেলার পুলিশ সুপার সি সুধাকর বলেন, “ইতিমধ্যেই ওই ঘটনায় অভিযুক্ত যুবককে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃত যুবক কী ভাবে এবং কোথা থেকে ওই অ্যাসিড জোগাড় করল, আমরা সেই বিষয়টিও তদন্ত করে দেখছি।” আজ, মঙ্গলবার ধৃতকে সিউড়ি আদালতে হাজির করানো হবে।

ধৃত যুবক।—নিজস্ব চিত্র।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সিউড়ি শহরের বাসিন্দা ওই বধূ রোজকার মতো এ দিন সকাল ৯টা নাগাদ নিউ ডাঙালপাড়া থেকে সাইকেল চালিয়ে কাজে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন। নির্যাতিতার অভিযোগ, সারদা লজের কাছে স্থানীয় একটি ক্লাবের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময়ে আচমকা ওই যুবক একটি গলি থেকে বেরিয়ে আসে। তখনই বরুণ পিছন দিক থেকে ওই আদিবাসী মহিলাকে আটকে ধরে তাঁর গায়ে অ্যাসিড ঢেলে পালিয়ে যায়। বধূ যন্ত্রণায় সাইকেল থেকে পড়ে যান। তাঁর চিৎকার শুনে পথ চলতি মানুষ মহিলাকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন। স্থানীয় বাসিন্দারাই পুলিশে খবর দেন। ঘটনাস্থল থেকে সিউড়ি থানার পুলিশ ওই বধূকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। তাঁর বাড়িতেও খবর দেওয়া হয়। এ দিন হাসপাতালে ওই বধূ বলেন, “কুপ্রস্তাবে সাড়া না দেওয়াতেই বরুণ আমার উপর হামলা করেছে। ও জোর করে আমার মুখের ভেতরে অ্যাসিড ঢালার চেষ্টা করেছিল। আমি কোনও রকমে প্রাণে বেঁচেছি।” চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, বড় রকমের বিপদের হাত থেকে বেঁচে গিয়েছেন ওই মহিলা।
এ দিকে পুলিশ জানিয়েছে, এ দিন রীতিমতো পরিকল্পনা করেই ওই যুবক এই হামলা চালিয়েছে। পূর্ব পরিচিত হওয়ায় ওই বধূ যে ওই রাস্তা দিয়েই কাজে যোগ দিতে যাবেন, তা বরুণ জানত। তারই সুযোগ নিয়ে সে একটি গলির মুখে অ্যাসিড ভর্তি বোতল হাতে ওই বধূর জন্য অপেক্ষা করছিল। তিনি গলির কাছে আসতেই সে অ্যাসিড নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। পুলিশের দাবি, অতীতে ওই বধূর সঙ্গে যুবকটির সম্পর্ক ছিল। যদিও জখম বধূর স্বামীর অভিযোগ, “বরুণ বেশ কিছু দিন ধরে আমার স্ত্রীকে উত্যক্ত করছিল। তার দেওয়া কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়াতেই বদলা নিতে বরুণ আমার স্ত্রীর উপরে এই হামলা চালাল।” ঘটনার কথা স্বীকার করে পুলিশের কাছে ওই যুবক জানিয়েছে, তার সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ করে ওই বধূ অন্য এক জনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। সেই আক্রোশেই সে ওই মহিলার গায়ে অ্যাসিড ঢেলেছে।
অন্য দিকে, গোটা বছর ধরে সিউড়ি শহরে প্রকাশ্য রাস্তায় অপরাধের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় এলাকায় রীতি মতো ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। গত কয়েক মাসে মেয়েদের উপরে আক্রমণের বেশ কয়েকটি ঘটনাও ঘটেছে। কখনও মেয়েরা ইভটিজিংয়ের স্বীকার হয়েছেন। কখনও শ্লীলতাহানির ঘটনা ঘটেছে। প্রতিবাদ করলে পরিজনদের মারধরের ঘটনাও ঘটেছে। এ ভাবে বারবার নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ায় পুলিশের ভূমিকায় বাসিন্দারা যথেষ্টই ক্ষুব্ধ। তাঁদের প্রশ্ন, জেলা সদরেই যদি পুলিশ মেয়েদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত না করতে পারে তা হলে অন্যত্র কী করবে? স্বভাবতই বাসিন্দাদের এই ক্ষোভে পুলিশেরই মুখ পুড়েছে। এই অবস্থায় বাসিন্দাদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার দাবি তুলেছেন শহরের বিশিষ্ট জনেরাও।
শিরোনামে সিউড়ি
• ৭ জানুয়ারি
• ১০ জানুয়ারি
• ২৩ জানুয়ারি
• ৩০ জুলাই
• ১১ নভেম্বর
বাবার সঙ্গে টিউশন যাওয়ার পথে রাধাবল্লভ মন্দিরের কাছে কিশোরীর শ্লীলতাহানির চেষ্টা।
আরটি গার্লস স্কুলের প্রতিষ্ঠা দিবসের মিছিলে মাদ্রাসা রোডে ছাত্রীদের ইভটিজিং।
ছেলেকে স্কুল থেকে আনতে যাওয়ার পথে আনন্দপুরে এক বধূর শ্লীলতাহানি, স্বানীকেও মারধর।
মাদ্রাসা রোডে এক ছাত্রীকে ইভটিজিং। প্রতিবাদ করলে তার মারধর দাদাকেও।
সিউড়ি হাসপাতালে এক প্রসূতির শ্লীলতাহানির চেষ্টা। অভিযুক্ত হাসপাতালেরই কর্মী।
সিউড়ির বাসিন্দা হিসেবে উদ্বেগ বাড়ছে। এমন ঘটনা রুখতে প্রশাসনের সঙ্গে সঙ্গে সমাজের সমস্ত স্তরের মানুষকেই এগিয়ে আসতে হবে।
স্বপ্না চক্রবর্তী, লোকশিল্পী
মানুষের মূল্যবোধ কমে যাচ্ছে। তাই এ ধরনের অপরাধ বাড়ছে। অবিলম্বে সচেতনতা শিবির করা দরকার।
সুব্রত সরকার, চিকিৎসক
সিউড়িতে মেয়েদের উপরে নির্যাতন বেড়েই চলেছে। অবস্থা পাল্টাতে সমাজের সকল স্তরের মানুষকেই এগিয়ে আসতে হবে।
চন্দ্রাবলি ঘোষাল, নৃত্যশিল্পী
এই ঘটনা আমাদের লজ্জা। কোনও ভাবেই বরদাস্ত করা চলবে না। প্রতিবাদে সবাইকে সোচ্চার হতে হবে।
উজ্জ্বল হক, নাট্যকর্মী
মানুষের সহনশীলতা কমছে। তাই এ ধরনের ঘৃণ্য অপরাধ বাড়ছে। বিকৃত সংস্কৃতির প্রচারই এ জন্য দায়ী।
রমনীমোহন ভট্টাচার্য, সমাজকর্মী
ধৃত যুবক কী ভাবে এবং কোথা থেকে ওই অ্যাসিড জোগাড় করল, বিষয়টিও তদন্ত করে দেখছি।
সি সুধাকর, পুলিশ সুপার
সম্প্রতি দেশ জুড়ে মহিলাদের উপরে অ্যাসিড হামলার বাড়বাড়ন্ত রুখতে অ্যাসিড বিক্রির উপরে কড়া নজরদারি বিধি আনতে মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ জারি করেছে। অ্যাসিড কেনাবেচায় নজরদারি আনতে ‘বিষ আইন ১৯১৯’-এর একটি সংশোধনী খসড়া ইতিমধ্যেই তৈরি করেছে কেন্দ্র। সুপ্রিম কোর্ট গত ১৮ জুলাই ওই খসড়ার ভিত্তিতেই দেশের সব রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলকে তিন মাসের মধ্যে নতুন বিধি তৈরি করার ব্যাপারে উদ্যোগী হতে বলেছে। সুপ্রিম কোর্ট চায়, বিষ আইনের আওতাতেই অ্যাসিড হানাকে জামিন অযোগ্য অপরাধ বলে ঘোষণা করা হোক এবং আক্রান্তের জন্য ক্ষতিপূরণের পরিমাণ বাড়িয়ে তিন লক্ষ টাকা করা হোক। নতুন ফৌজদারি দণ্ডবিধি সংশোধনী ২০১৩ আইনে অবশ্য ইতিমধ্যেই অ্যাসিড হানায় শাস্তির মেয়াদ বেড়েছে। বাড়ানো হয়েছে জরিমানার পরিমাণও। ২০০৬ সালের একটি মামলার শুনানির সময় শীর্ষ আদালতের বিচারপতি আর এম লোঢার নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ সাম্প্রতিক রায়ে বলেছে, যে সব রাজ্যে অ্যাসিড বিক্রিতে কোনও নিয়ন্ত্রণ এখনও চালু নেই, তারা আপাতত কেন্দ্রীয় সরকারের তৈরি করা আইনের খসড়ার উপরে ভিত্তি করে একটি নির্দেশিকা তৈরি করুক। কেন্দ্রীয় সরকারের তৈরি করা আইনের খসড়া হাতে আসার তিন মাসের মধ্যে প্রত্যেকটি রাজ্যের মুখ্যসচিব এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের প্রশাসককে অ্যাসিড বিক্রি নিয়ন্ত্রণে বিধিনিষেধ তৈরি করতে হবে। সুপ্রিম কোর্ট আরও জানিয়েছে, যাদের অ্যাসিড বা ওই ধরনের বিপজ্জনক দ্রব্য বিক্রির অনুমোদন রয়েছে, তাদের কাছে একটি রেজিস্টার থাকবে। যাতে ক্রেতার ঠিকানা লিখে রাখতে হবে। সচিত্র পরিচয়পত্র ছাড়া কেউ অ্যাসিড কিনতে পারবেন না। আর ১৮-র কম বয়সী কাউকে অ্যাসিড বিক্রি করাও যাবে না। তার কাছে কত অ্যাসিড রয়েছে, তা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে রাখতে হবে বিক্রেতাকে। কেউ যদি অ্যাসিডের পরিমাণ না জানান, তা বাজেয়াপ্ত করে বিক্রেতার ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে। ইতিমধ্যেই ঝাড়খণ্ডে খোলা বাজারে অ্যাসিড বিক্রি নিষিদ্ধ করেছে রাজ্য সরকার।

এই সংক্রান্ত আরও খবর...



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.