জলের অভাবে শম্ভুনাথে সমস্যায় ডায়ালিসিস প্রক্রিয়া
মিলছে না রোগীদের ডায়ালিসিসের জল! কারণ, কথায়-কথায় বিকল হয়ে যায় সেই জল তোলার পাম্প। এর ফলে স্বাভাবিক ভাবেই জীবন-সঙ্কটে পড়েছেন প্রায় জনা পঞ্চাশ কিডনির রোগী। সেই সঙ্গে সঙ্কটে সাপে কামড়ানো রোগীরাও। এমনই অভিযোগ উঠেছে শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের তরফে।
সাপে কামড়ানোর পরে ৯০ শতাংশ রোগীর কিডনি বিকল হয়ে যায়। ডায়ালিসিস ছাড়া তাঁদের বাঁচানো প্রায় অসম্ভব হয়ে যায়। শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালের নেফ্রোলজি বিভাগে কিডনির রোগীদের পাশাপাশি ভর্তি থাকেন সাপে কামড়ানো ১২-১৫ জন রোগী। কিন্তু জলের অভাবে গত প্রায় ২০ দিন ধরে সকাল-বিকেলের শিফ্ট মিলিয়ে টেনেটুনে ৪-৮ জনের ডায়ালিসিস করা যাচ্ছে। বাকি রোগীদের ধর্না দিতে হচ্ছে এসএসকেএম বা অন্য সরকারি হাসপাতালে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপে চলা ডায়ালিসিস ইউনিটে। কিন্তু সেই সব জায়গায় আগে থেকেই রোগীদের লম্বা লাইন থাকে। ফলে শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে ভর্তি থেকেও বাধ্য হয়ে রোগীদের হাজার-হাজার টাকা দিয়ে বেসরকারি হাসপাতালে গিয়ে রোজ ডায়ালিসিস করিয়ে আসতে হচ্ছে বলে অভিযোগ। বৃহস্পতিবারও পাম্প ঠিকমতো না চলায় সকালের শিফ্টে তিন জনের ডায়ালিসিস করার পরে বিকেলের শিফ্ট আর চালানো যায়নি।
শম্ভুনাথে আলাদা করে ৩০ শয্যার নেফ্রোলজি বিভাগ খোলা হয় বছরখানেক আগে। এর মধ্যে ১২টি ফ্রি বেড এবং ১৮টি পেয়িং বেড। পেয়িং বেডের রোগীকে ওষুধ-আনুষঙ্গিক মিলিয়ে ১৭০০-২০০০ টাকা দিতে হয়। সেই সঙ্গে দিতে হয় প্রতি বার ডায়ালিসিসের খরচ বাবদ ৫০০ টাকা। ফ্রি বেডের রোগীকে শুধু ডায়ালিসিসের খরচ দিতে হয়।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, নেফ্রোলজি বিভাগের বাইরেও অন্যান্য বেডে ডায়ালিসিসের আরও রোগী ভর্তি থাকেন। গত কয়েক মাস ধরেই ডায়ালিসিসের ৩টি যন্ত্রের মধ্যে একটি বা দু’টি পালা করে খারাপ হচ্ছিল। এর পর দিন কুড়ি আগে ডায়ালিসিসের জল সরবরাহকারী পাম্পটি বিকল হয়ে যায়। ফলে দিনে সাকুল্যে দুই থেকে তিন জন রোগীর ডায়ালিসিস সম্ভব হচ্ছিল। তাঁরাও প্রধানত সাপে কাটা রোগী। কারণ অতি জরুরি ভিত্তিতে প্রাণ বাঁচাতে এঁদের দ্রুত ডায়ালিসিস দরকার। নেফ্রোলজির প্রায় সব রোগীকেই রোজ যেতে হচ্ছিল বাইরের হাসপাতালে।
শম্ভুনাথে ভর্তি গড়িয়ার বাসিন্দা এক রোগীর ক্ষোভ, “এই হাসপাতালে ডায়ালিসিস প্রায় হচ্ছিল না। পিজিতেও মারাত্মক লাইন। বাধ্য হয়ে আমার ছেলে দুর্গাপুর ব্রিজের ধারে একটি বেসরকারি হাসপাতালে একগাদা টাকা খরচ করে আমার ডায়ালিসিস করল প্রায় সাত দিন।” মহেশতলার বাসিন্দা আরেক রোগীর বক্তব্য, “কম খরচে ডায়ালিসিস হবে বলে শম্ভুনাথে ভর্তি হয়েছিলাম। জল না থাকায় আমাকে টানা ৯ দিন সল্টলেকের একটি বেসরকারি হাসপাতাল থেকে ডায়ালিসিস করাতে হল। দ্বিগুণের বেশি টাকা খরচ হল। এর মধ্যে আবার শুনছি, শম্ভুনাথে নাকি রাতের শিফ্টেও ডায়ালিসিস শুরু করা হবে। ভাবা যায়!”
এ বিষয়ে হাসপাতালের সুপার সৌমাভ দত্ত বলেন, “দিন কুড়ি-পঁচিশ খুব খারাপ অবস্থায় কেটেছে। দিনে দু’শিফ্টে অন্তত ১২ জনের ডায়ালিসিস হওয়ার কথা থাকলেও জলের অভাবে এক-এক দিন মাত্র ২ জনের হয়েছে। পাম্পের সংস্থাকে বারবার বলা সত্ত্বেও ওরা সারাচ্ছিল না।” তাঁর আরও বক্তব্য, “দু’দিন আগে কিছুটা সারানো হয়েছে। তাতে ৩টি ডায়ালিসিস মেশিনের প্রয়োজনীয় ১২০ লিটার জল উঠছে, কিন্তু খুব ধীর গতিতে। ফলে দিনে দু’শিফ্ট মিলিয়ে ৬-৮ জনের ডায়ালিসিস হচ্ছে। আমরা স্বাস্থ্যভবনে নতুন পাম্প ও আরও ৪টি ডায়ালিসিস যন্ত্র চেয়ে চিঠি লিখেছি।”
শম্ভুনাথের ডায়ালিসিস ইউনিটের দায়িত্বে রয়েছেন রাজেন্দ্রনাথ পাণ্ডে। তাঁর অবশ্য দাবি, ছট পুজোর পর থেকে প্রায় ২৫ দিন ডায়ালিসিসের জলের পাম্প খারাপ হয়েছিল বলে সমস্যা ছিল। এখন তা অত প্রবল নেই, অনেকটাই মিটে গিয়েছে। তাঁর কথায়, “এক-আধটা মেশিন একটু খারাপ হতেই পারে। পাম্পের মেমব্রেন জমে গিয়েছিল। কিছুটা সাফ করা হয়েছে। তবে আবার যে ৬ থেকে ৮ ঘণ্টার জন্য সেটি বিকল হয়ে যাবে না, এমন নিশ্চয়তা নেই। তখন আমরা রোগীদের অন্য সরকারি হাসপাতালে ডায়ালিসিসের ব্যবস্থা করে দেব। মানুষের চাহিদার শেষ নেই। সব চাহিদা মেটানো যাবে না।” এ কথা শুনে ডায়ালিসিসের রোগীদের একাংশ প্রশ্ন তুলেছেন, “সরকারি হাসপাতালে উনি পাঠাচ্ছেন বটে কিন্তু সেখানে যে ডেট পাওয়া যাচ্ছে না, আমাদের বেসরকারি হাসপাতালে যেতে হচ্ছে সেটা কি উনি জানেন না? এর বিহিত করবে কে?” রাজেন্দ্রনাথ পাণ্ডের উত্তর, “কাউকে বেসরকারি জায়গায় যেতে হচ্ছে না। সব মিথ্যা অভিযোগ।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.