বাঁচার লাইন খুঁজে পেতে দিশাহারা ট্রাম
কোনও ট্রামের জানলার কাচ ভাঙা, কোনওটির আবার মেঝের আচ্ছাদন উধাও। ঢাক পিটিয়ে দু’-একটি বাতানুকূল ট্রাম বা ‘হেরিটেজ’ ট্রাম চললেও সার্বিক ভাবে ট্রামের চেহারা ক্রমেই জীর্ণ হচ্ছে। বেহাল লাইনের পাশাপাশি জীর্ণ ট্রাম— সব মিলিয়ে রীতিমতো অস্বস্তিতে কর্তারা।
নোনাপুকুর থেকে টালিগঞ্জ বা বালিগঞ্জ— প্রতিটি ডিপোতেই পড়ে আছে সারিবদ্ধ অচল ট্রাম। যে সব ট্রাম চলছে, সেগুলিরও ভাঙাচোরা দশা। বহু আগেই ইউরোপ-আমেরিকার রাস্তায় নেমেছে ঝকঝকে সুপারফাস্ট ট্রাম। এ শহরের ট্রাম রয়ে গিয়েছে সেই মান্ধাতার আমলেই।
সিটিসি-র ২৫৮টি ট্রামের মধ্যে এখন দৈনিক চলে গড়ে ১১৫টি। ২০০৮ থেকে এখনও পর্যন্ত ২৬টি ট্রাম তৈরি হয়েছে সিটিসি-র নিজস্ব ওয়ার্কশপে। বাকি সব ট্রাম ১৯৮৩ সালে কেনা। সংস্থা সূত্রের খবর, ওই বছরে ১৮৯টি ট্রাম কেনা হয়েছিল বার্ন স্ট্যান্ডার্ড এবং জেসপ-এর কাছ থেকে।
কেন রক্ষণাবেক্ষণ হচ্ছে না ট্রামের? সিটিসি-র কর্তারা এর পিছনে অর্থাভাবকে দায়ী করলেও প্রকাশ্যে মন্তব্য করতে চাননি। সংস্থার এমডি নীলাঞ্জন সান্যাল বলেন, “রক্ষণাবেক্ষণ হচ্ছে না, এ কথা ঠিক নয়। ট্রামের ভোল বদলাতে আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করছি।” সিটিসি-র চেয়ারম্যান শান্তিলাল জৈন বলেন, “ট্রামগুলির বয়স হয়েছে। তাই এই হাল। আমি দায়িত্বে আসার পরে কিছু ঝকঝকে ট্রাম নেমেছে। আরও কিছু নামবে।”
আর্থিক ভাবে কেন ধুঁকছে সিটিসি? সংস্থা সূত্রের খবর, তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার আগে সংস্থার দৈনিক গড় আয় ছিল ১৩ লক্ষ টাকা। এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে সওয়া ৯ লক্ষ টাকায়। গত আড়াই বছরে বিভিন্ন পর্যায়ে অনেকে অবসর নিয়েছেন। কিন্তু শূন্য পদে নিয়োগ হয়নি। তা সত্ত্বেও বেতন বাবদ মাসে এখন লাগছে ১০ কোটি ৪৬ লক্ষ টাকা। এক পদস্থ অফিসার বলেন, “ট্রামের সঙ্গে সিটিসি-র বাসের দায়টাও পড়ছে। ৩৬৩টি বাসের মধ্যে চলছে গড়ে ২৩০টি। ডিজেলের খরচ বেড়ে চললেও বাড়েনি ভাড়ার হার। তাই বাড়ছে লোকসানের পাল্লা।”

অধিকাংশ ট্রামেরই এখন এমন বেহাল দশা। ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য।
ট্রামের চেহারার মতোই বেহাল তার লাইন। শহরের বিভিন্ন অংশে ৩৭ কিলোমিটার ট্রামলাইন কংক্রিট করা হয়েছে। যে সব অংশে কংক্রিট করা হয়নি, সেই অংশের দেখভালের জন্য ২০০৯ সাল পর্যন্ত ফি বছর বরাদ্দ হত তিন কোটি টাকা। ২০১০ থেকে সেই বরাদ্দও বন্ধ। সূর্য সেন স্ট্রিট, এলিয়ট রোড, রফি আহমেদ কিদোয়াই রোড, রাজা রামমোহন রায় সরণির ট্রামলাইন দিয়ে ক্রমাগত গাড়ি যাতায়াত করায় ঘর্ষণে উঠে যাচ্ছে লাইনের অংশ।
পরিবহণ দফতরের দাবি, গত আর্থিক বছরে ১ কোটি ২০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়েছে ট্রাম ও লাইন মেরামতির জন্য। চলতি আর্থিক বছরে এই খাতে এখনও পর্যন্ত বরাদ্দের পরিমাণ প্রায় ৫০ লক্ষ। যদিও সংস্থা সূত্রের খবর, এ বছরের ওই টাকা ট্রামের ভোল বদলের কাজে একটুও ব্যবহার হয়নি। সিংহভাগ বরাদ্দ হয়েছে বন্ধ থাকা হাজরা-ধর্মতলা ট্রাম রুট চালু করার জন্য। ভূগর্ভস্থ নিকাশির কাজের জন্য ওই অংশের ট্রাম বন্ধ ছিল প্রায় আট বছর।
‘ট্রাম ওয়ার্কার্স অ্যান্ড এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন’-এর অন্যতম সম্পাদক সুবীর বসু বলেন, “গোটা পরিস্থিতির জন্য দায়ী পরিকল্পনার অসঙ্গতি। ক্রমেই অবস্থার অবনতি হচ্ছে।” পরিবহণ কর্তারা অবশ্য দাবি করছেন, রাজ্যে কোষাগারের যা হাল, তাতে নিগমগুলির জন্য বেশি পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ সম্ভব নয়। বার বার বলা সত্ত্বেও সিটিসি আর্থিক ভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না। এ ব্যাপারে পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র বলেন, “বাম আমলে নিগমে বহু ভুয়ো কর্মী ছিলেন। আমরা আসার পরে কড়াকড়িতে এমন অনেককে বাছাই করে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখনও যথেষ্ট উদ্বৃত্ত কর্মী রয়েছেন।”
শহরে ট্রামলাইনের দৈর্ঘ্য ছিল প্রায় ৬২ কিলোমিটার। বন্ধ হওয়া কিছু রুটে ট্রাম ফের চালু হলেও বহু রুটেই ট্রাম এখন ইতিহাস।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.