জলদস্যু ধাওয়া করার তেল বাড়ন্ত, অকেজো স্পিডবোট
রা বর্ষায় এক মাঝরাতে দক্ষিণ ২৪ পরগনার মইপীঠ উপকূল থানায় ফোন বেজে উঠেছিল।
ও পাশ থেকে আর্তনাদ ‘স্যার, আমাদের মাছ ভর্তি ট্রলার নিয়ে জলদস্যুরা সীমান্ত পেরিয়ে যাচ্ছে। আমাদের গুলি করে মারার হুমকি দিচ্ছে। তাড়াতাড়ি আসুন।’
মাস দুয়েক আগে সেই রাতে ফোন পেয়েও বিপন্ন মৎস্যজীবীদের ডাকে সাড়া দিতে পারেনি পুলিশ। কারণ থানার স্পিডবোটই যে অচল হয়ে পড়ে রয়েছে। দস্যুদের ধাওয়া করা হবে কীসে?
ইলিশ মাছ ভর্তি ট্রলার আর মৎস্যজীবীদের সে যাত্রায় ধরেই নিয়ে গিয়েছিল জলদস্যুরা। পরের দিন ভোরে একটি ছোট নৌকা নিয়ে উত্তাল বিদ্যাধরী নদীতে ভেসেছিলেন কয়েক জন পুলিশকর্মী। কিন্তু জলদস্যুরা তত ক্ষণে সীমান্ত পেরিয়ে বেপাত্তা। পরে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে মৎস্যজীবীদের উদ্ধার করে আনে।
মইপীঠের ওই জলদস্যু-হামলার পরে সীমান্ত নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিভিন্ন সরকারি অনুষ্ঠানে জানিয়েছিলেন, নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঢেলে সাজা হবে। এর মাস ছ’য়েক আগে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীলকুমার শিন্ডেও দক্ষিণ ২৪ পরগনার সীমান্ত এলাকা পরিদর্শন করে গিয়েছিলেন। কিন্তু পরিস্থিতির বিশেষ হেরফের হয়নি।
কী অবস্থা উপকূল থানাগুলির? পুলিশ সূত্রের খবর, শুধু মইপীঠ নয়, রাজ্যের মোট ছ’টি উপকূল থানারই এখন এক অবস্থা। প্রতিটি থানায় নদীতে টহলদারির জন্য একটি করে স্পিডবোট রাখা হয়েছিল। কিন্তু গত এপ্রিল মাস থেকে তেল বরাদ্দ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তেলের অভাবে রাজ্যের বিভিন্ন থানায় যেমন গাড়ি বসে গিয়েছে, তেমনই অকেজো হয়ে রয়েছে বোটগুলি। ফলে টহলও বন্ধ হয়ে গিয়েছে।
২০০৮ সালে ২৬/১১-র হামলার আগে সন্ত্রাসবাদীরা জলপথে মুম্বইয়ে এসেছিল। তার পরেই দেশ জুড়ে উপকূল নিরাপত্তা নিয়ে কড়াকড়ি করা হয়। সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ জলপথ ব্যবহার করেও জঙ্গিরা সহজে ঢুকে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে গোয়েন্দা সংস্থাগুলি। বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকায় বিহারিশালে বিএসএফের একটি ভাসমান উপকূল ক্যাম্প রয়েছে। ওই এলাকায় কিছুটা নজরদারি করে বিএসএফ। এ ছাড়া আর কোনও নজরদারির ব্যবস্থা নেই বলে ওই সময়ে গোয়েন্দা রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছিল।
সেই রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পরে বাংলাদেশ লাগোয়া বঙ্গোপসাগরের সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে উপকূল থানা গড়ার পরিকল্পনা করে রাজ্য সরকার। প্রথম পর্যায়ে দক্ষিণ ২৪ পরগনার সুন্দরবন, মইপীঠ, ফ্রেজারগঞ্জ, উত্তর ২৪ পরগনার হেমনগর এবং পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথি ও হলদিয়ায় তৈরি হয় উপকূল থানা। ছ’টি থানার মাধ্যমে সীমান্তের প্রায় সাড়ে ছশো বর্গ কিলোমিটার এলাকায় নজরদারির ব্যবস্থা করা হয়েছিল।
কিন্তু সব কার্যত শিকেয় উঠেছে। পুলিশ সূত্রের খবর, তেল বরাদ্দ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় প্রতিটি উপকূল থানায় দিনের পর দিন পড়ে থেকে স্পিডবোটগুলি প্রায় অকেজো হয়ে পড়েছে। এক-একটি স্পিডবোটের দাম প্রায় ৪ কোটি টাকা। এখন যদি তেল বরাদ্দ হয়ও, স্পিডবোটগুলি সারিয়ে ফের চালানোর উপযুক্ত করতে গেলে প্রতিটির জন্য প্রায় ৪০ লক্ষ টাকা করে খরচ পড়তে পারে।
ডিজি (কোস্টাল) রাজ কানোজিয়া অবশ্য মানতে রাজি হননি যে, নদীপথের নজরদারি একেবারেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তবে তেলের সমস্যার কথা তিনি অস্বীকার করেননি। তাঁর বক্তব্য, “মাঝে-মধ্যে স্পিডবোটের তেল পাওয়া যাচ্ছে না। তবে নজরদারি একেবারে নেই তা বলা যাবে না। কোস্টগার্ড ও বিএসএফের সঙ্গে মিলেমিশে যৌথ নজরদারির ব্যবস্থা করা হচ্ছে।”
ফের জলদুস্য হানা দিলে উপকূল থানা সামাল দিতে পারে কি না, তা সময়ই বলবে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.