সিমিকে নিষিদ্ধ রাখা নিয়ে মতামত এড়াচ্ছে রাজ্য
ভারতের মাটিতে স্টুডেন্টস ইসলামিক মুভমেন্ট অফ ইন্ডিয়া বা সিমি-র উপর থেকে সরকারি নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার কথা আগামী বছরের ২ ফেব্রুয়ারি। দু’বছর আগে গঠিত বিশেষ কেন্দ্রীয় ট্রাইব্যুনাল অন্তত তেমনই নির্দেশ দিয়েছে। কিন্তু তার পরেও জঙ্গি ছাত্র সংগঠনটিকে নিষেধাজ্ঞার আওতায় রাখতে চায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে তারা এ প্রসঙ্গে এমন ১৪টি রাজ্যের মতামত জানতে আগ্রহী, যেখানে যেখানে সিমির সক্রিয়তা ছিল বা রয়েছে। মতামত পেশের জন্য রাজ্যগুলোকে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত সময় দিয়েছিল দিল্লি। সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়ার পরে দেখা যাচ্ছে, বারোটি রাজ্য কেন্দ্রের প্রস্তাবে সহমত। ব্যতিক্রম বলতে শুধু উত্তরপ্রদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ।
সরকারি সূত্রের খবর, উত্তরপ্রদেশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে জানিয়েছে, তারা ‘যথাসময়ে’ মতামত দেবে। যদিও সেই সময়টা কখন আসবে, তার কোনও আভাস লখনউয়ের অখিলেশ যাদব সরকার দেয়নি। পশ্চিমবঙ্গ সরকারও নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেনি। মমতা সরকারের বক্তব্য, এ রাজ্যে ক’বছর যাবৎ সিমি’র কার্যকলাপ নেই, তাই প্রস্তাবটিতে তারা মতামত দেবে না। সিদ্ধান্ত গ্রহণের দায় পশ্চিমবঙ্গ কার্যত পুরোপুরি দিল্লির উপরেই ছেড়েছে।
রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতর-সূত্রে বলা হয়েছে, দিল্লির প্রস্তাব সম্পর্কে লিখিত মতামত চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের যুগ্ম-সচিব (মানবাধিকার) রেশমি গোয়েল গত জুলাই থেকে অন্তত তিন দফায় বার্তা দিয়েছেন। মন্ত্রক জানিয়েছে, ১৯৬৭-র বেআইনি কার্যকলাপ প্রতিরোধ আইন (ইউএপিএ) মোতাবেক সিমি’কে নিষিদ্ধ ঘোষণার জন্য ২০১২-য় ট্রাইব্যুনাল গড়া হয়েছিল। ট্রাইব্যুনাল রায় দেয়, সংগঠনটিকে দু’বছর নিষিদ্ধ করে রাখা হোক। আসছে বছরের গোড়ায় সেই দু’বছরের মেয়াদ ফুরোচ্ছে, এবং ইউএপিএ-র ৬ নম্বর ধারা অনুযায়ী, মেয়াদ শেষে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করতে হবে। ‘কিন্তু দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও ধর্মনিরপেক্ষতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে সিমি’কে বিপজ্জনক মনে হলে কেন্দ্র ফের নিষেধাজ্ঞা জারি করতে পারে। তাই রাজ্যগুলোর মতামত জরুরি।’ লিখেছেন রেশমিদেবী।
বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট ১৪টি রাজ্যের সঙ্গে সরাসরি মত বিনিময়ের লক্ষ্যে কেন্দ্র গত ১৮ অক্টোবর নর্থ ব্লকে বৈঠক ডেকেছিল। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের যুগ্ম-সচিব (এনআই) আর কে মিত্র তার কার্যবিবরণী নবান্নে পাঠিয়েছেন। আলোচনার ফলাফল কী?
কার্যবিবরণী অনুযায়ী, চোদ্দোটির মধ্যে মহারাষ্ট্র, দিল্লি, ত্রিপুরা, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তীসগঢ়, রাজস্থান, গুজরাত-সহ ১২টি রাজ্য ফের সিমিকে নিষিদ্ধ করার পক্ষে মত দিয়েছে। উত্তরপ্রদেশ সরকার ওই রাজ্যে সিমি-র উপস্থিতি স্বীকার করলেও এখনই চূড়ান্ত মতামত দিতে চায়নি। আর পশ্চিমবঙ্গের প্রতিনিধি রাজ্য গোয়েন্দা বিভাগের উপদেষ্টা ওমপ্রকাশ গুপ্ত বৈঠকে জানিয়ে এসেছেন, এ রাজ্যে গত কয়েক বছরের মধ্যে সিমি-র কোনও কাজকর্ম চোখে পড়েনি। তাই সংগঠনটির উপরে ফের নিষেধাজ্ঞা চাপানো হবে কি না, সে সম্পর্কে রাজ্য কিছু বলবে না।
রাজ্য কেন মতামত দিল না? পশ্চিমবঙ্গ কি তা হলে সিমি’কে ফের নিষিদ্ধ ঘোষণার বিরুদ্ধে?
শুক্রবার টেলিফোনে প্রশ্নটি শুনে ওমপ্রকাশবাবুর জবাব, “রাজ্যে সিমির কাজকর্ম নিয়ে কেন্দ্রকে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়েছি। এর বাইরে কিছু বলব না।” রাজ্য প্রশাসনের কী ব্যাখ্যা?
এ প্রসঙ্গে সিমি-নিষিদ্ধকরণের ইতিহাস বিবৃত করে স্বরাষ্ট্র দফতরের এক শীর্ষ কর্তা জানান, কেন্দ্রীয় সরকার প্রথম বার সিমি’কে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল ২০০১-এর ২৭ সেপ্টেম্বর। দু’-তিন বছর অন্তর নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ বাড়িয়ে যাওয়া হতে থাকে। তা নিয়ে বিতর্কও মাথা চাড়া দেয়। শেষমেশ ব্যাপারটাকে আইনি বৈধতা দিতে গড়া হয় বিশেষ ট্রাইব্যুনাল। ২০১২-র ২ ফেব্রুয়ারি ট্রাইব্যুনাল রায় দেয়, দু’বছরের জন্য সিমির উপরে নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে।
আর সেই হিসেবে ২০১৪-র ২ ফেব্রুয়ারি নিষেধাজ্ঞা রদ হওয়ার কথা। এমতাবস্থায় স্বরাষ্ট্র দফতরের শীর্ষ কর্তাটির দাবি, “কয়েক বছরে পশ্চিমবঙ্গে সিমির কোনও কার্যকলাপ নজরে আসেনি। তাই নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখার মতো পরিস্থিতি কার্যত এখানে নেই। রাজ্য তো জোর করে বলতে পারে না যে, সিমিকে নিষিদ্ধ করতেই হবে!” তাঁর আরও মন্তব্য, “সিমি-র উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। ২০০১-এর পরে দু’-তিন বছর অন্তর তারাই নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ বাড়িয়ে গিয়েছে। তাই সিমি’র কার্যকলাপ যে সব রাজ্যে রয়েছে, তাদের সঙ্গে কথা বলে দিল্লিই ঠিক করুক, এ বারও মেয়াদ বাড়ানো হবে কি না।”
কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে এখন সিমি’র অস্তিত্ব নেই বলে রাজ্য সরকারের যে দাবি, রাজ্য প্রশাসনেরই কিছু কর্তা তার সঙ্গে ভিন্নমত। কী বলছেন ওঁরা?
এই মহলের মতে, “কোনও সংগঠন নিষিদ্ধ ঘোষিত হলেই অন্য নামে ফের সক্রিয় হয়ে ওঠে। তাই রাজ্যে সিমির অস্তিত্ব নেই এমনটা ভাবা ভুল।” ওঁদের দাবি, অন্যান্য সংগঠনের আড়ালে সিমি-র মাথারা কী ভাবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে, গোয়েন্দারা তা বিলক্ষণ জানেন। বস্তুত সিমি-নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে মতামত এড়ানোর পিছনে অন্য অঙ্কও দেখছে প্রশাসনের এই অংশ। তাদের কথায়, “২০১৪-র এপ্রিল-মে মাসে লোকসভা ভোট। কেন্দ্র চাইছে ফেব্রুয়ারিতেই সিমির উপরে ফের নিষেধাজ্ঞা জারি করতে। সরকারের শীর্ষ মহল এ হেন তাৎপর্যপূর্ণ সময়ে এমন একটা বিষয়ে মতামত না-দেওয়াটাই রাজনৈতিক ভাবে সঠিক মনে করেছে।”
রাজ্য গোয়েন্দা বিভাগ সূত্রের তথ্য: নাশকতামূলক কাজকর্ম চালানোর অভিযোগে পশ্চিমবঙ্গে এ পর্যন্ত ৭১ জন সিমি-সদস্য গ্রেফতার হয়েছে। কলকাতা, বহরমপুর, ইংলিশবাজার, হরিশচন্দ্রপুর, আসানসোল, চাকুলিয়া, বংশীহারি, মাথাভাঙা ও মিনাখাঁয় বিভিন্ন সময়ে এদের ধরা হয়।
২০০৮-এর ডিসেম্বরের মধ্যে ২৪ জন বেকসুর খালাস পেয়ে যায়, বাকিদেরও প্রায় সকলে এখন জেলের বাইরে। কারণ, কোর্টে তাদের বিরুদ্ধে নাশকতার প্রমাণ পেশ করতে পারেনি রাজ্য পুলিশ। সাজা হয়েছে শুধু এক জনের। “২০০৮-এর ডিসেম্বরের পরে পশ্চিমবঙ্গে সিমির কোনও সদস্যের হদিস মেলেনি।” জানাচ্ছেন এক গোয়েন্দা-কর্তা।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.