নজরে নির্বাচন
বজ্র আঁটুনি
রাস্তায় পুলিশ কর্মীদের টহল। ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের দরজায় বন্দুকধারী পুলিশ। বুথের দরজাতেও পুলিশ। ভিতরে ভোটার নেই। ভোটকর্মী আর এজেন্টরা বসে রয়েছেন। শুক্রবার বাঁকুড়ার ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের পাঁচটি বুথেই সকাল থেকে এই ছবি ছিল। সকাল ১০টায় ডিএসপি (আইন ও শৃঙ্খলা) কৃশানু রায় রামকৃষ্ণ মিশন নিম্নবুনিয়াদি বিদ্যালয়ের বুথে আসেন। কেমন ভোট হচ্ছে? তাঁর সহাস্য জবাব, “আরে দারুন ভোট হচ্ছে। চারদিক পুলিশ কর্মীতে ছয়লাপ। ভোটার চোখে পড়ছে না। এমন ভোট আবার খারাপ হয় না কী?” তবে বেলা গড়াতে ভোটারদের ভিড় দেখা যায়।

পুরুলিয়ায়।
স্কুটিই ভরসা
লাল স্কুটিতে চড়ে সকাল থেকে বাঁকুড়া পুরসভার ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের একের পর এক বুথ চষে বেড়ালেন পুরপ্রধান শম্পা দরিপা। পরিচিত মুখ দেখতে পেলেই মিষ্টি হাসি হেসেছেন। এই তৃণমূল নেত্রী দলের প্রার্থীর জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। তা হলে এত ঘোরাঘুরি কেন? হেসেই বললেন, “ভোট তো উৎসবই। তাই অফিস বা বাড়িতে থাকতে পারলাম না। কিন্তু এখানে তো ছোট ছোট গলি। তাই বড় গাড়ি ছেড়ে স্কুটি নিয়েই ঘুরছি।”

মুখোমুখি
বুধবার বিকেল পর্যন্ত একে অন্যের দল সম্পর্কে কত কথাই না বলেছেন। ভোটের ময়দানে তাঁরা কেউ কাউকে এক ইঞ্চি জমি ছাড়তে নারাজ। এই অহি-নকুল সম্পর্কের দুই প্রার্থী মুখোমুখি হলেন ঠিক ভোটের দিনই। শুক্রবার দুপুরে পুরুলিয়ার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কংগ্রেস প্রার্থী জয়া ভুঁইয়া ও সিপিএম প্রার্থী কবিতা দাস মুখোমুখি হলেন একটি বুথের বাইরে। পরস্পর কুশল বিনিময় করলেন। ভোট কেমন হচ্ছে জানতে চাইলেন একে অন্যের কাছে।

হিট পানিফল
ভোটের আগের রাতে গোলমাল ছড়ানোয় শুক্রবার সকাল থেকেই রঘুনাথপুরের ৯ নম্বর ওয়ার্ডে সজাগ ছিলেন পুলিশ কর্মীরা। কিন্তু বেলা গড়াতেই শান্তির ভোট বুঝিয়ে দিয়েছিল, অশান্তির আশঙ্কা নেই। ফলে গা-ছাড়া ভাব দেখা দেয় কিছু পুলিশ কর্মীরা মধ্যে। হঠাৎ সেখানে ঠেলাগাড়িতে পানিফল আসতেই তাঁরা চনমনে হয়ে ওঠেন। পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর থেকে কনস্টেবলরা পানিফল কিনতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। রাজনৈতিক দলের কর্মীরাও কিনতে শুরু করেন। আধঘণ্টার মধ্যেই পানিফল বিক্রেতা মিঠু সিংহ ১৫ কেজি পানিফল বিক্রি করে ফেললেন।


বাঁকুড়ায়।
ভোট-পুলিশ
গতবার ভোট দিতে না পারার আক্ষেপ ছিলই। রঘুনাথপুরের ১২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ৯০ বছরের বৃদ্ধ আকুল বাউরি তাই সকালেই বুথে গিয়েছিলেন। ভোটারদের ভিড় থেকে বাড়ি ফিরে আসেন। দুপুরে ভাত খেয়ে ফের তিনি বুথে যান। তখনও ভিড় দেখে শুকনো মুখে দাঁড়িয়েছিলেন। এক পুলিশ কর্মী তাঁকে ধরে বুথের ভিতরে নিয়ে যান। ভোট দিয়ে বেরিয়ে বৃদ্ধের স্বগোতক্তি, “গতবার পুলিশের জন্যই না কি ভোট হয়নি। এ বার তো পুলিশই আমাকে ভোট দেওয়াল।

ঘাটতি মিটল
পুলিশের অতিসক্রিয়তার অভিযোগ তুলে গতবার ভোটাররা বুথমুখো হননি। এ বার তাই রঘুনাথপুরের ১২ নম্বর ওয়ার্ডে বুথের বাইরে সকাল থেকে ঠায় চেয়ার পেতে বসে রইলেন রঘুনাথপুরের সিআই সুকান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়, কাশীপুরের সিআই ক্ষীরোদচন্দ্র মাহাতো এবং রঘুনাথপুরের ওসি দেবাশিস পাহাড়ি। ভোটারদের কোনও অসুবিধা হচ্ছে কি না সে দিকে বাড়তি নজর ছিল পুলিশকর্মীদের। দিনের শেষে এই ওয়ার্ডে ভোট পড়ল ৯৩ শতাংশ। আর পাশের ৯ নম্বর ওয়ার্ডে ভোট পড়ল ৭৯ শতাংশ। ১২ নম্বর ওয়ার্ডের এক কংগ্রেস কর্মীর মন্তব্য, “তিন পুলিশ আধিকারিক দিনভর বসে গতবারের ঘাটতি মিটিয়ে দিয়ে গেলেন।”


পুরুলিয়ার নেতাজি স্কুলে ভোটারদের লাইন।

রঘুনাথপুর শহরের কাঁকড়াপাড়া স্কুলে।
ভোটেই আনন্দ
“শরীর আর চলে না। তা বলে ভোট দেব না?” রিক্সা চড়ে ভোট দিতে যাওয়ার সময় বললেন বাঁকুড়ার আশ্রমপাড়ার ৮২ বছরের বৃদ্ধ গুঁইরাম মল্লিক। ভোট গিয়ে বেরিয়ে বললেন, “ভোট দেওয়ার যে আনন্দ, তা আর কিছুতে নেই।” পাশ থেকে এক রসিক যুবক গান গেয়ে উঠল, “দাদুর এই ভোট দেওয়াতেই আনন্দ।”

রংমিলান্তি
এ বার হেমন্তেই শীতের কামড় অনুভব করছে পুরুলিয়া। ভোটের ঠেলায় কাকভোরেই উঠতে হয়েছে প্রার্থীদের। রাজনৈতিক কর্মীদেরও একই অবস্থা। টুপি, শাল, চাদর, জ্যাকেট, সোয়েটার পরে অনেকেই সকালে রাস্তায় নেমে পড়েছিলেন। কোনও সিপিএম কর্মীর গায়ে দেখা গেল, সবুজ রঙের জ্যাকেট আবার কোনও তৃণমূল কর্মী লাল রঙের টুপি পরেছেন। সব দেখে এক ভোটারের মন্তব্য, “এ যে রঙমিলান্তি!”


বাঁকুড়ায় দিনভর রাস্তায় পুলিশের টহল চলল।
বলতে মানা
হ্যান্ডেলে বিভিন্ন দলের পতাকা বাঁধা রিক্সাগুলো সকাল থেকে পুরুলিয়া শহরের ৭ নম্বর ওয়ার্ডে ঘুরছিল। ভোটারদের বাড়ি থেকে বুথে নিয়ে যাওয়া-আসা করছিল। এক রিক্সাওয়ালার কাছে রাজনৈতিক দল থেকে কত টাকার চুক্তি করেছে জানতে চাইতেই রিক্সাওয়ালার জবাব, “এ সব প্রশ্ন করবেন না। বলতে মানা রয়েছে।”

ছবি: সুজিত মাহাতো, অভিজিৎ সিংহ ও প্রদীপ মাহাতো।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.