ভোটের দিন শহরে থেকেও দেখা হল না ‘দাদা-ভাই’-এর
হরমপুর পুরভোটের দিন এক বারের জন্যও দেখা হল না দু’জনের। যদিও শুক্রবার সকাল থেকে ভোটপর্ব মিটে যাওয়ার পরেও রাত পর্যন্ত ‘দাদা’ ও ‘ভাই’ দু’জনেই ছিলেন ৩০০ মিটারের মধ্যে। ‘দাদা’ শহর ঘুরলেন। কিন্তু ‘ভাই’ কাটালেন ঘরবন্দি হয়েওই ‘দাদা’-র ‘ভয়ে’ই।
‘দাদা’ অধীর চৌধুরী। ‘ভাই’ তৃণমূল নেতা হুমায়ুন কবীর। হুমায়ুনের এক সময়ের গুরু অধীরবাবু এদিন ছিলেন কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের পূর্ব দিক লাগোয়া রাস্তার পাশে জেলা কংগ্রেস কার্যালয়ের দোতলায় নিজের ‘চেম্বারে’। হুমায়ুন ছিলেন ওই সংশোধনাগারের পশ্চিম দিক লাগোয়া রাস্তার পাশেই সেচ দফতরের অতিথি আবাসের
দোতলার ঘরে।
সারা দিন ঘর থেকে বেরোলেন না কেন? হুমায়ুনের জবাব, “আমি ঘরের বাইরে বের হলেই অধীর চৌধুরী আমার বিরুদ্ধে নির্বাচনী বিধি ভঙ্গের অভিযোগ জানিয়ে ফাঁসানোর চেষ্টা করবেন। কেননা, এর আগে পঞ্চায়েত ভোটের সময়ে শক্তিপুর এলাকায় যাওয়ার জন্য তাঁর বিরুদ্ধে নির্বাচনী বিধিভঙ্গের অভিযোগ দায়ের করেছিলাম আমি। তিনি তার বদলা নিতে পারেন বলেই ঘর বন্দি রয়েছি।” পুরভোটের জন্য গত ১৩ দিন ধরে ওই দশ ফুট বাই দশ ফুটের ঘরই তাঁর অস্থায়ী ‘ঘরবাড়ি’। ছেলে রয়েছে সঙ্গে। হুমায়ুন বলেন, “বহরমপুর থেকে শক্তিপুরে আমার বাড়ি পৌঁছাতে গাড়িতে ৪৫ মিনিট লাগে। আমি রোজই বাড়ি চলে যেতে পারতাম। কিন্তু যাইনি। কারণ, আমি বহরমপুরে পড়ে থাকলে কর্মী-সমর্থকদের যেমন আত্মবিশ্বাস বাড়বে, তেমনি চাপে থাকবে প্রশাসন।”
সকাল থেকেই ভোট দেওয়ার লম্বা লাইন
বহরমপুরের একটি বুথে। গৌতম প্রামাণিকের তোলা ছবি।
অধীরবাবু ছিলেন চেনা মেজাজেই। গত তিন বারের মতো বিরোধী শূন্য পুরবোর্ড দখলে রাখার চ্যালেঞ্জ বেশ খোলা মনেই নিয়েছেন। রাতে ছিলেন কাশিমবাজারের বাড়িতে। সকাল সাড়ে ৭টা নাগাদ ঘুম ভাঙে। লাল চা নিয়ে খবরের কাগজ হাতে বসে পড়েন। ২-৩ কাপ লাল চা খাওয়ার পরে স্নান সেরে বাড়ি থেকে বের হন। তখন সকাল সাড়ে ১০টা। প্যাজেরো গাড়ি চড়ে রিং রোড হয়ে ভাগীরথীর পাড় বরাবর কাজি নজরুল ইসলাম সরণি ধরে সেচ দফতরের অতিথি আবাসের লাগোয়া গাঁধী কলোনির রাস্তা পেরিয়ে মোহনের মোড় ছুঁয়ে জেলা কংগ্রেস কার্যালয়ে তিনি পৌঁছন।
হুমায়ুন তখন অতিথি আবাসের ঘরের সোফায় পা তুলে হেলান দিয়ে বসে টিভিতে চোখ রেখেছেন। বাড়িতে থাকলে সকাল সাড়ে ৫টায় ঘুম ভাঙে। ভোটের দিন তাঁর ঘুম ভাঙতে সকাল ৬টা বেজেছে। তাঁর কথায়, “ঘুম থেকে উঠেই ২৮টি ওয়ার্ডে ঠিক মতো পোলিং এজেন্ট গিয়েছেন কি না, তা জানার জন্য শহর তৃণমূল সভাপতিকে ফোনে ধরি। এর মধ্যে খবর পাই ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে চন্দ্রিমা চক্রবর্তীর আইসিআই স্কুল বুথে কোনও এজেন্ট দিতে পারেনি দল। তখনই নির্দেশ দিই পাশের কোনও ওয়ার্ড থেকে এজেন্ট নিয়ে এসে দেওয়ার জন্য এ ভাবেই কেটেছে সকালটা।” তার মধ্যে সকাল ৮টায় লাল চা খেয়ে খবরের কাগজের পাতা উল্টে দেখেন। সাড়ে ১০টা নাগাদ দু’পিস বাটার টোস্ট খান।
অধীরবাবুও দলীয় কার্যালয়ে নিজের ঘরে বসতে না বসতেই লাল চা খেতে চান। টেবিলের সামনে লাল চা রেখেই ফোনে ধরেন ৩ নম্বর ওয়ার্ডের হিরু হালদারকে। ‘কী রে সব ঠিক আছে? ঠিক করে বল। কোনও সমস্যা নেই তো?’ বলেই ফোন নামিয়ে কাপের লাল চায়ে চুমুক। অধীরবাবু বলেন, “প্রশাসন তার কাজে নিরপেক্ষতা দেখিয়েছে। পুলিশের ভূমিকাও কিন্তু ভাল। তবে বড় কোনও কিছু ঘটনা না ঘটলেও কোনও কোনও বুথে তৃণমূলের লোকজন ভোটারদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করে। কোনও কোনও বুথ জ্যাম করারও চেষ্টা ছিল তাদের। কিন্তু আমাদের কর্মীরাও সতর্ক ছিল।” তাঁর কথায়, “আমাদের লক্ষ্য ২৮-০ করা। তাই কর্মীদের মাথা ঠাণ্ডা রেখে ভোটপর্ব মেটানোর নির্দেশ ছিল।”
ততক্ষণে হুমায়ুন কবীরের ফোনে খবর আসে ৪ নম্বর ওয়ার্ডের একটি বুথে ২০০ মিটারের মধ্যে কংগ্রেসের সমর্থকরা প্রচার চালাচ্ছে। ফোন নামিয়ে রেখেই অন্য প্রান্তের ফোনে প্রশাসনিক এক কর্তাকে ধরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করেন। দুপুর ২টো নাগাদ শিল্পমন্দির স্কুল বুথে ভোট দিতে যান অধীরবাবু। তখন হুমায়ুন অতিথি আবাসে সাদা ভাত, খাসির মাংস, ডাল, পালং শাক, সব্জি, চাটনি দিয়ে দুপুরের খাবার সারেন।
দুপুরের পর থেকে জেলা কংগ্রেস কার্যালয়ে নেতা-কর্মী-সমর্থকদের হাতে ফ্রায়েড রাইস, আলুর দম, ডিম সেদ্ধ ও মুরগির মাংসের প্যাকেট ঘুরে বেড়ালেও সে দিকে অবশ্য মন ছিল না অধীরবাবুর। নিজের ভোট দিয়ে এসে কংগ্রেস কার্যালয়ে অধীরবাবু খেলেন সাদা ভাত, খয়রা মাছ ভাজা, মসুরির ডাল, সব্জি ও কাঁচা লঙ্কা।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.