সিনেমা সমালোচনা...
চুম্বনলীলা
লিয়োঁ কি রাসলীলা, রামলীলা’ নামটা শুনলেই মনে হয় যেন, গ্রামগঞ্জের রামায়ণের যাত্রাপালা। কিন্তু ছবির শুরুতে টাইটেলে যে মুহূর্তে ওই কার্ডটা আসে ‘শেক্সপিয়রের রোমিও-জুলিয়েট থেকে অনুপ্রাণিত’, তখন সঙ্গে সঙ্গে ছবিটার অন্য একটা ‘ইমেজ’ চোখের সামনে ভেসে ওঠে। তার মানে ‘লাভ স্টোরি’। আবেগপ্রবণ ভালবাসার গল্প। কিন্তু ‘রামলীলা’য় যে আবেগ আছে তা দর্শকের মনে নয়, শরীরে সুড়সুড়ি দেয়। আর দেবে নাই বা কেন? যে দু’জন শিল্পীকে নিয়ে গল্প, সেই দীপিকা পাড়ুকোন এবং রণবীর সিংহের শরীরে যেন অফিস টাইমের বাসে ভিড়ে ঠাসা যাত্রীর মতো উপচে পড়ছে যৌন আবেদন। তাই ‘রামলীলা’য় ওঁদের প্রেমলীলা দেখে দর্শক খুশ।
গত একশো বছরে অন্তত হাজারটা ছবি হয়েছে এই কাহিনি অবলম্বনে। দু’টি সম্প্রদায় বা দুটি ধনী পরিবারের মধ্যে শত্রুতা। সুযোগ পেলেই এরা ওদের মারে, ওরা এদের মারে। এই চলতে থাকে। এক সময়ে এই পরিবারের একটি ছেলের সঙ্গে ওই পরিবারের একটি মেয়ের প্রেম হয়। আর তখনই জমে ওঠে নাটক।
রামলীলা
রণবীর, দীপিকা
সঞ্জয় লীলা বনশালির খুব প্রিয় প্রেক্ষাপট হল রাজস্থান-গুজরাটের পরিবেশ। সেই গুজরাটের ছোট্ট একটা জায়গা রানজার। যেখানে ‘রাজাদি’ এবং ‘সানেরা’, দু’টো দল সব সময় বন্দুক পিস্তল নিয়ে একে অপরের বিপক্ষে লড়ে যাচ্ছে। কখনও কখনও বিয়ারের বোতলও ছুড়ছে। দু’দলেরই বাড়িতে চালের বস্তায়, ময়দার টিনে, সব্জির ঝুড়িতে লুকিয়ে আছে বন্দুক-পিস্তল-কার্তুজ। রাজস্থান-গুজরাট, এই সব জায়গায় দোলখেলা মহা উৎসব। সেই রকম এক হোলিতে, রঙিন পরিবেশে এই দলের দীপিকা (লীলা) দেখলেন অন্য দলের রণবীরকে (রাম)। ব্যস, ওঁরা প্রেমে পড়ে গেলেন। কিন্তু ওঁদের কি এই প্রথম দেখা হল? নিশ্চয়ই নয়।
তা হলে এত দিন প্রেমে পড়েননি কেন? বোঝা গেল না।
যাই হোক, দেখা হল। দীপিকা আগ বাড়িয়ে রণবীরকে চুমুও খেলেন। ব্যস দর্শক পাগল। তার পর আর কি? মারামারি মারদাঙ্গার পরিবেশের মধ্যেই চলতে লাগল ওঁদের প্রেম। মোবাইলে কথা বলা, দেখা হওয়া। চুমু খাওয়া এবং চুমু খাওয়া।
দীপিকার মা সুপ্রিয়া পাঠক, জাঁদরেল মহিলা। একটা দলের নেত্রী। পাশে সব সময় পিস্তল রেখে কথা বলেন। তিনি বিলেত-ফেরত এক গবেটকে জোগাড় করলেন দীপিকার সঙ্গে বিয়ে দেবেন বলে। সে কথা জানতে পেরেই দীপিকা রণবীরের সঙ্গে পালালেন। অন্য একটা জায়গায় গিয়ে একটা হোটেলে উঠলেন। দীপিকা জেদ ধরলেন বিয়ে না করলে তিনি রণবীরের সঙ্গে এক ঘরে থাকবেন না। অতএব রণবীর দীপিকার সিঁথিতে সিঁদুর পরিয়ে দিলেন। কিন্তু বেচারাদের ফুলশয্যা আর হল না। রণবীরের অনুপস্থিতিতে দীপিকার দাদা পুলিশ নিয়ে এসে বোনকে ফিরিয়ে নিয়ে গেল। রণবীরও আবার ফিরে এলেন নিজের জায়গায়। ভুল বোঝাবুঝিতে মারদাঙ্গা আরও জমে উঠল। এক সময়ে নটেগাছটি মুড়োলো। ‘রোমিও-জুলিয়েট’ থুড়ি ‘রামলীলা’ শেষ হল। টাইটেলের প্রায় সব কার্ডেই সঞ্জয় লীলা বনশালির নাম। কাহিনি-চিত্রনাট্য, সম্পাদনা, সঙ্গীত-পরিচালনা, গীতিকার, প্রযোজনা, পরিচালনা (ক্যামেরাটা বাদ দিয়েছেন), সবেতেই উনি।
মনে হয় এ ছবি সঞ্জয় লীলা বনশালির স্বপ্নের প্রোজেক্ট। তাই খুব যত্ন করে দেদার খরচ করে বানিয়েছেন। জাঁকজমক দেখে চোখ ধাঁধিয়ে যায়। বিরাট বিরাট সেট। প্রচুর মানুষজন। তাঁদের সব জমকালো সাজ-পোশাক। কোনও ফাঁকিবাজি নেই। টেকনিক্যাল কাজ অসাধারণ। মিউজিকও খুব ভাল। দু-একটা গান ‘রামজি কী চাল দেখো’, ‘নাগাড়া সঙ্গ ঢোল’ বেশ হিট করেছে। গণেশ আচার্য ও লরেন্সের নাচের কম্বিনেশনগুলোর মধ্যেও নতুনত্ব আছে। এস রবি বর্মনের ক্যামেরার কাজও দেখার মতো। আর অভিনয়? দীপিকা খুব শিগগির নম্বর ওয়ান হলেন বলে! রণবীরের এটা চতুর্থ ছবি। কিন্তু ইতিমধ্যে ভক্তসংখ্যা বেশ জোরদার। দু’জনেই চুটিয়ে অভিনয় করেছেন, চুমু খেয়েছেন। কেমিস্ট্রি দারুণ। সুপ্রিয়া পাঠকের কাজও দেখার মতো ভাল। প্রিয়ংকা চোপড়ার আইটেম নাচটার কি খুব দরকার ছিল? মনে হয় না।
এই ছবির সব থেকে দুর্বল জায়গা হল গল্প। সঞ্জয় লীলা বনশালির ‘হম দিল দে চুকে সনম’, ‘ব্ল্যাক’, ‘গুজারিশ’-এর মধ্যে যেমন নতুনত্ব ছিল, এই ছবিতে কিন্তু তেমন কোনও নতুনত্ব নেই। তাই জাঁকজমক, টেকনিক্যাল উৎকর্ষতা, নাচগান এ সব দিয়ে কত দিন দর্শক টানতে পারবে ‘রামলীলা’ জানি না।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.