কুবের উবাচ
মানস মুখোপাধ্যায় (৩০) • স্ত্রী (২৮) • বাবা (৭০) • মা (৫৬)
বেসরকারি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার কর্মী • স্ত্রী-ও একই সংস্থায় • আপাতত দু’জনেই কর্মসূত্রে আমেরিকায়
• আরও ৪ বছর সেখানেই থাকার ইচ্ছা • অফিসে পিএফ, স্বাস্থ্য বিমা আছে • বাবা-মা ভারতে,
টাকা পাঠাতে হয় • কলকাতায় ফ্ল্যাট বুক করেছেন • ইচ্ছে, চল্লিশেই সচ্ছল অবসর
মাসে নিট আয়
খরচ (মাসে)
বাবা-মাকে পাঠান ১০,০০০
বিদেশে সংসার চালাতে১,৫০০ ডলার (৯০,০০০ টাকা)
স্বাস্থ্যবিমা (বাবা-মা) ১,৮৩৩ (২ লক্ষ করে)
সঞ্চয় (মাসে)
পিএফ ১,৫০০
এসবিআই হরাইজন টু ১,০০০
জীবন বিমা ২,৩৩৩
বিদেশে লগ্নি ২৫২ ডলার (১৫,১২০ টাকা)
সম্পদ
এসবিআই হরাইজন টু ৪৮,০০০
সেভিংস অ্যাকাউন্ট ১০,০০,০০০
বিশেষজ্ঞের পরামর্শ
মানস ও তাঁর স্ত্রী দু’জনেই কর্মসূত্রে দেশের বাইরে। মানসের নিজের কিছু স্বপ্ন রয়েছে। তিনি নিজের বেতন থেকেই সেগুলি পূরণ করতে চান। এ জন্য স্ত্রীর সাহায্য নিতে চান না। আমরা আজ তাঁকে সেই লক্ষ্যে পৌঁছতেই সাহায্য করব।
গোড়ার কথা মানস বিদেশে থাকায় ভারতে তিনি যে বেতন পান, তা পুরোপুরি পাচ্ছেন না। দেশে তাঁর বেতন ৪০ হাজার টাকা। এখন পাচ্ছেন ১২ হাজার। আমেরিকার বেতন ৩,৫০০ ডলার। টাকার অঙ্কে তা প্রায় ২.১০ লক্ষ। অর্থাৎ তাঁর মোট বেতন দাঁড়াচ্ছে প্রায় ২.২২ লক্ষ টাকা।
প্রতি মাসে বেতন হিসেবে টাকার অঙ্কটা বিশাল বড়। কিন্তু বিদেশে থাকায় তাঁর আয়-ব্যয় ও সঞ্চয়ের যে-হিসাব এখন দাঁড়াচ্ছে, ভারতে ফিরলে তা-ই সম্পূর্ণ পাল্টে যাবে। পুরো বিষয়টি সহজে বুঝতে আমরা হিসাবটা একটা চার্টে ফেলে দেখব।
‘যা এখন’ চার্ট দেখে বোঝা যাচ্ছে, এখন সংসার ও অন্যান্য খরচ মিটিয়েও লগ্নি করার জন্য মানসের হাতে ১ লক্ষেরও বেশি টাকা থাকছে। কিন্তু তিনি দেশে ফিরলে বেতন হবে শুধুমাত্র ৪০ হাজার টাকা। আর মাস গেলে হাতে থাকবে প্রায় ১৫ হাজার। এর মধ্যেই কিন্তু তাঁকে বাড়ির ঋণ মেটানো, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সবই করতে হবে।
ফ্ল্যাট কেনা মানস ৫২ লক্ষ টাকা দিয়ে একটি ফ্ল্যাট কিনতে চুক্তি করেছেন। এ জন্য ঋণ নিতে চান ২৫-৩০ লক্ষ। ২০ বছরের জন্য ৩০ লক্ষ টাকার ঋণে মাসিক কিস্তি পড়বে প্রায় ৩২ হাজার (১১.৫% সুদ ধরে)। আমেরিকায় থাকাকালীন কিস্তি দিতে অসুবিধা না-হলেও দেশে ফিরে এলে তা বিশাল বোঝা মনে হবে।
সে ক্ষেত্রে আমার মতে মানসের উচিত ৪ বছরের জন্য গৃহঋণ নেওয়া। একই সুদ ধরে ৪ বছরের মাসিক কিস্তি পড়বে প্রায় ৭৮,২৬৭ টাকা। যত দিন বিদেশে থাকবেন, তত দিন সেই ঋণ মেটাতে পারবেন। দেশে ফেরার পর তাঁর উপর ঋণের বোঝাও থাকবে না। ফ্ল্যাটটিও ঋণমুক্ত হবে।
জীবন বিমা
• এসবিআই-এর পলিসিটি ইউনিট লিঙ্কড, অর্থাৎ শেয়ার বাজারের উপর নির্ভরশীল। তবে এতে বিমার আনুষঙ্গিক খরচ কম। তাই এটি চালিয়ে যান।
• এলআইসি-র বিমার বাকি ৯ বছর। সুতরাং সেটাও চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেব আমি।
• তিনি যত টাকা প্রিমিয়াম দেন, সেই তুলনায় তাঁর বিমা মূল্য খুব একটা বেশি নয়। তাই অবসর নেওয়া পর্যন্ত ১০ বছরের জন্য কমপক্ষে ৩০ লক্ষ টাকার একটি টার্ম পলিসি করিয়ে নিন। টার্ম পলিসিতে মেয়াদ শেষে টাকা ফেরত মেলে না। শুধুমাত্র জীবনের সুরক্ষা মেলে। এ জন্য তাঁর প্রিমিয়াম পড়বে বছরে ১৯,৪০০ টাকা।
তবে ১০ বছর পর তিনি চাইলে পলিসি চালিয়ে যেতে পারেন। কারণ তখন এলআইসি শেষ হয়ে যাবে। ফলে বিমার অঙ্ক কমে আসবে। সে ক্ষেত্রে টার্ম পলিসির বিমার অঙ্ক বাড়ানোর কথাও ভাবা যেতে পারে।
স্বাস্থ্যবিমা
• বাবা-মায়ের স্বাস্থ্যবিমা চালিয়ে যান।
• মানস ও তাঁর স্ত্রীর অফিসে স্বাস্থ্য বিমা থাকলেও, নিজেদের জন্য ফ্যামিলি ফ্লোটার বিমা করিয়ে রাখুন। কারণ ৪০ বছরে অবসর নিলে আর অফিসের বিমায় কাজ হবে না। তখন ব্যক্তিগত বিমা থাকাটা খুব জরুরি।
অবসর পরিকল্পনা
মানসের হাতে ১০ বছর রয়েছে সচ্ছল অবসরের লক্ষ্যে সঞ্চয়ের জন্য। দেখা যাক কত দূর সেই সঞ্চয় করা যায়
১) তিনি মাসে ১,৫০০ টাকা পিএফে রাখেন। বিদেশে থাকায় মানস পিপিএফ চালু করতে পারবেন না, তাই পিএফেই আরও ৫,০০০ টাকা করে রাখুন। এই টাকা অবসরের সময়ে কাজে লাগবে। এর সঙ্গেই যোগ হবে পিএফে সংস্থার জমা দেওয়া টাকাও।
২) দু’টি ডাইভার্সিফায়েড ইক্যুইটি ফান্ডে সিস্টেম্যাটিক ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যান (এসআইপি) পদ্ধতিতে মাসে ৫,০০০ টাকা রাখুন। ১৫% রিটার্ন ধরে ১০ বছর পর প্রায় ১৩.৯৩ লক্ষ টাকা মিলবে।
রেকারিং ডিপোজিটে ১০ বছরের জন্য মাসে ১,৫০০ টাকা লগ্নি করুন। ৮% সুদ ধরে এই খাতে প্রায় ২.৭৬ লক্ষ টাকা জমবে।
দু’ক্ষেত্রেই এমন ভাবে টাকার অঙ্ক স্থির করা হয়েছে, যাতে দেশে ফিরেও প্রকল্পগুলি চালাতে অসুবিধা না-হয়।
৩) বিদেশে লগ্নি: বিদেশে যে-লগ্নি তিনি করছেন, তা বিনিয়োগকে বিভিন্ন খাতে ছড়িয়ে দিতে সাহায্য করবে। আগামী ৪ বছর তা চালিয়ে যান। তবে এক জন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে পারলে ভাল হয়।
৪) হাতে থাকা টাকা: আমেরিকায় থাকার সময়ে এখন এই সব খাতে লগ্নি করার পরেও তাঁর হাতে ৮,৮০০ টাকা থাকছে। বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলে সেই অর্থ তিনি মুদ্রা বাজারে অথবা অন্য কোনও দেশের বাজারে খাটাতে পারেন।
এ বার জমা-খরচের তালিকায় (পরামর্শ) আরও এক বার চোখ রাখব। প্রথম তালিকার পুরোটা তো থাকবেই, তার সঙ্গেই যুক্ত হবে নতুন কিছু লগ্নি।
আমার মতে মানসের অবসরের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা উচিত। কারণ ৪০ বছরে অবসর নিলে এক দিকে আয় কমবে, অন্য দিকে মূল্যবৃদ্ধির কারণে সংসার খরচ আরও বাড়বে।
পাশাপাশি, এখনও পর্যন্ত তাঁদের সন্তান নেই। ভবিষ্যতে সন্তান হলে তার পড়াশোনা, বিয়ে ইত্যাদির চিন্তাও থাকবে। সে ক্ষেত্রে কয়েক বছর পর ফের লগ্নি পরিকল্পনা ঝালিয়ে নেওয়ার পরামর্শই দেব আমি।
সব হিসাব ১ ডলার=৬০ টাকা ধরে

এখন যা
  এখন দেশে ফিরলে
আমেরিকায় বেতন ২,১০,০০০
ভারতে বেতন ১২,০০০ ৪০,০০০
আমেরিকায় সংসার খরচ ৯০,০০০
ভারতে সংসারে নিজের খরচ ১০,০০০ ২০,০০০ **
এসবিআই হরাইজন টু ১,০০০ ১,০০০
জীবন বিমা ২,৩৩৩.৩৩ ২,৩৩৩.৩৩
বাবা-মার স্বাস্থ্য বিমা ১,৮৩৩.৩৩ ১,৮৩৩.৩৩
বিদেশে লগ্নি ১৫,১২০
মাসের শেষে হাতে থাকে ১,০১,৭১৩.৩৪ ১৪,৮৩৩.৩৪
* দেশে ফিরলে সংসার খরচ দ্বিগুণ হবে ধরে নিয়ে
পরামর্শ
  এখন দেশে ফিরলে
মাসের শেষে হাতে থাকে ১,০১,৭১৩.৩৪ ১৪,৮৩৩.৩৪
গৃহঋণের কিস্তি ৭৮,২৬৭
টার্ম পলিসি ১,৬১৬.৬৭ ১,৬১৬.৬৭
পিএফ ৫,০০০ ৫,০০০
এসআইপি ৫,০০০ ৫,০০০
রেকারিং ১,৫০০ ১,৫০০
মুদ্রা/ বিদেশের বাজারে লগ্নি ৮,৮০০
মাসের শেষে হাতে থাকবে ১,৫২৯.৬৭ ১,৭১৬.৬৭
(অনুরোধ মেনে নাম পরিবর্তিত)


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.