সম্পাদকীয় ২...
গণহত্যা
ত্তরবঙ্গে হাতি-হত্যা অব্যাহত। গণহত্যা বলিলেও ব্যাকরণ লঙ্ঘিত হইবে না। ডুয়ার্সের জঙ্গলে হাতিদের চিরাচরিত গমনপথের মধ্য দিয়াই ট্রেন চলে। দ্রুতগতির এই লৌহশকটের প্রবল ধাক্কায় নিয়মিত লাইনে কাটা পড়ে হাতির দল, এ বার যাহার সংখ্যা অন্তত সাত। হাতিদের কোনও আদালত নাই, মানুষের আদালতে সওয়াল করার উপায়ও তাহাদের নাই। থাকিলে এই সব মৃত্যুর জন্য খুনের দায়ই মনুষ্যসমাজের ঘাড়ে চাপিত, ‘অনিচ্ছাকৃত মৃত্যু’ ঘটানোর কুশলী যুক্তির আড়ালে আত্মগোপন করার অবকাশ থাকিত না। প্রাণিকুলের মধ্যে বুদ্ধিমান হইলেও মানুষের তুলনায় হাতিদের অবোধই গণ্য করা উচিত। অবোধ, অথচ অরণ্য-সংরক্ষণ ও প্রকৃতির পরিবেশগত ভারসাম্য বজায় রাখার পক্ষে অত্যাবশ্যক। তাই মানুষের সভ্যতা যে বন-দফতর গড়িয়া তুলিয়াছে, বন্য প্রাণীর রক্ষা ও প্রতিপালন তাহার প্রধান কর্তব্য। রেলপথও সেই সভ্যতারই নির্মাণ। বস্তুত, রেলপথ নির্মাণে দরকারি কাঠের ভারী স্লিপার বহনের কাজে পোষ-মানা হাতিদের ব্যবহারও করা হইয়া থাকিবে। সেই পথেই যে যূথপতির মৃত্যুদূত ওত পাতিয়া থাকিবে, তাহা কে জানিত?
এই অপঘাত এড়ানোর উপায় ছিল না, এমন নয়। প্রথমত, হাতিদের গমনপথ বা করিডর এড়াইয়া রেলপথ পাতার চেষ্টা করা যাইত। সর্ব ক্ষেত্রে তাহা করা হয় নাই। দ্বিতীয়ত, হাতিদের গমনপথ যে সব স্থানে আড়াআড়ি ভাবে ট্রেনের গমনপথকে ভেদ করে, সেই সব স্থানে ট্রেনের গতি যথাসম্ভব হ্রাস করার প্রস্তাব ছিল। রেল দফতর সেই প্রস্তাব শিরোধার্যও করে। কিন্তু সব ট্রেন-চালক সেই সংযম মানিয়া চলিতে অভ্যস্ত, তাহার প্রমাণ নাই। না-মানার জন্য কোনও শাস্তিও অদ্যাবধি কাহারও প্রাপ্য হইয়াছে কি? তাই দূর হইতে হাতিদের দেখিয়া ব্রেক কষিলেও দ্রুতগতির ছুটন্ত ট্রেনের গতিবেগ সহসা রুদ্ধ হইতে চায় না, হাতিরা কাটা পড়ে। তাহাদের রক্তাক্ত ছিন্নভিন্ন শব লাইনের দু’পাশে, সেতুর উপরে ছড়াইয়া থাকে। রেল এবং বন, দুটিই সরকারি দফতর। রেল দফতর কেন্দ্রের, আর বন দফতর রাজ্যের। দুই দফতরের মধ্যে যথাযথ সমন্বয় থাকিলে এ ধরনের মর্মান্তিক ঘটনা নিবারণ সম্ভব হইত। কিন্তু সমন্বয়ের পরিবর্তে পারস্পরিক দোষারোপেই দুই দফতরের ক্রিয়াকলাপ সীমাবদ্ধ থাকে।
প্রাচীন কালে রাজা বা রাজপুরুষেরা মৃগয়ায় গিয়া যথেচ্ছ বন্যপ্রাণী হত্যার যে রেওয়াজ তৈয়ার করিয়াছিলেন, ঔপনিবেশিক যুগেও তাহা বহাল ছিল। নিহত হাতির দাঁত কিংবা পা, শিকার করা বাঘের চামড়া সে কালে অভিজাতদের বৈঠকখানার সজ্জা ছিল। অনেক মূল্য দিয়া মানুষ অবশেষে প্রাণিহত্যা ও অরণ্য ধ্বংসের কুফল বুঝিয়াছে। তাহার প্রায়শ্চিত্ত করিতেই বন ও বনের প্রাণী সংরক্ষণের আন্দোলন, তাহাতে সরকারি সিলমোহর দিয়া নিয়মিত মন্ত্রক গঠন, বরাদ্দ ধার্য, সিভিল সার্ভিসের ধাঁচে ফরেস্ট সার্ভিস গঠন। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ এখন কোনও শখের আন্দোলন নয়, যেমন নয় দূষণমুক্ত পরিবেশ গড়ার প্রয়াস। হাতিরা বিশেষত একটি বনের বিস্তার, বৈচিত্র্য ও সমৃদ্ধির সূচকের মতো। হাতি-হত্যা অরণ্য-হত্যার প্রতীক। হাতিদের সুরক্ষায় তাই কঠোর ব্যবস্থা জরুরি। প্রয়োজনে ট্রেনের গমনপথ ঘুরাইয়া দেওয়া হউক (এই পথে তো চির কাল ট্রেন চলিত না), কিংবা রেলপথ নাই এমন প্রত্যন্ত অরণ্যে হাতিদের সরাইয়া দেওয়া হউক, যেখানে তাহারা তুলনায় নিরাপদ।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.