শর্ট স্ট্রিট কাণ্ডে এ বার ধৃত আর এক জমি কারবারি
র্ট স্ট্রিট-কাণ্ডে পুলিশ বৃহস্পতিবার পিনাকেশ দত্ত নামে এক জমি-ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করল। তদন্তকারীদের দাবি, আইনজীবী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে পিনাকেশ সোমবার ভোরে ৯এ শর্ট স্ট্রিটে হাজির ছিলেন, যদিও বাড়ির ভিতরে ঢোকেননি। বুধবার কলকাতা বিমানবন্দর থেকে ধরা পড়া আর এক সম্পত্তি-কারবারি পরাগ মজমুদার শর্ট স্ট্রিটের জমিটি খালি করার বরাত পিনাকেশকেই দিয়েছিলেন বলে গোয়েন্দাদের দাবি।
পুলিশের ধারণা, পরাগ মজমুদার ও পিনাকেশের লেনদেনের মধ্যে আরও এক জন জমি-কারবারি রয়েছেন। পিনাকেশকে জেরা করে সেই ব্যক্তির কাছে পৌঁছাতে চাইছেন লালবাজারের গোয়েন্দারা। তাঁদের আশা, ওই ‘লিঙ্কম্যান’কে ধরা সম্ভব হলেই শর্ট স্ট্রিট-কাণ্ডের জট পুরোপুরি খুলবে। পুলিশ-সূত্রের খবর, এ দিন সন্ধ্যায় পাটুলির বাসিন্দা পিনাকেশ ব্যাঙ্কশাল কোর্টে তাঁর কৌঁসুলির সঙ্গে কথা বলতে এসেছিলেন। সেখান থেকে বেরোতেই পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে।
গত সোমবার ভোররাতে মধ্য কলকাতার শেক্সপিয়র সরণি থানা-এলাকায় ৯এ শর্ট স্ট্রিটে ১৭ কাঠা জমি সমেত একটি বাড়ির দখল নিতে হামলা চালানো হয়। বাড়ির ভিতর থেকে গুলি চলে, তাতে নিহত হন বহিরাগত দু’জন, আহত একাধিক। ঘটনায় এ পর্যন্ত মোট ১৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃতদের মধ্যে দখলদার বাহিনীর লোকজন যেমন আছেন, তেমন রয়েছেন ঘটনার সময়ে ওই বাড়িতে থাকা এক মহিলাও। মমতা অগ্রবাল নামে সেই মহিলার বিরুদ্ধে অভিযোগ, সঙ্গীদের নিয়ে তিনিই গুলি চালিয়েছিলেন। গ্রেফতারি-তালিকায় সর্বশেষ সংযোজন পিনাকেশ দত্ত।
এবং খাস মহানগরের কেন্দ্রস্থলে জমি ঘিরে এ হেন প্রাণঘাতী লড়াইয়ের উৎস খুঁজতে গিয়ে গোয়েন্দাদের সামনে নিত্যনতুন তথ্য বেরিয়ে আসছে। কী রকম?
যেমন, পিনাকেশের ভূমিকা। পুলিশের দাবি, পরাগ ও ধৃত আইনজীবী পার্থবাবুকে জেরা করে তাঁর নাম মিলেছে। উপরন্তু জানা গিয়েছে আরও এক জনের কথা, যিনি খাতায়-কলমে হার্টলাইন সংস্থার অন্যতম ডিরেক্টর, পাশাপাশি জবরদস্তি জমি বা সম্পত্তি দখলে ওস্তাদ। তিনিই পিনাকেশকে শর্ট স্ট্রিট অভিযানের পরিকল্পনা ছকার দায়িত্ব দিয়েছিলেন বলে পুলিশের দাবি। তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, বাড়িটির বাসিন্দা রতনলাল নাহাটা টাকার বিনিময়ে সম্পত্তি ছাড়তে রাজি থাকলেও মমতা রাজি ছিলেন না। তাই উচ্ছেদে পটু কাউকে খুজছিলেন পরাগ। পুলিশ জানাচ্ছে, ক’বছর আগে ক্যানাল ইস্ট রোডে একটি প্রোমোটিংয়ের সময় পিনাকেশের সঙ্গে পরাগের পরিচয় হয়েছিল।
পুলিশ-সূত্র জানাচ্ছে, অভিযান চালানোর আগে পিনাকেশই পার্থবাবু এবং বেসরকারি নিরাপত্তাসংস্থার কর্ণধার অরূপ দেবনাথের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ওই কাজের জন্য পিনাকেশেরই মারফত অরূপকে পঞ্চাশ হাজার টাকা অগ্রিম দেওয়া হয়। সঙ্গে দেওয়া হয়েছিল আশ্বাস: কাজ শেষ হলে বাকি টাকা মিলবে। শর্ট স্ট্রিট-কাণ্ডের তদন্তে নিয়োজিত কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দাদের দাবি, পার্থ-অরূপের মোবাইল ফোনের কল ডিটেলস পরীক্ষা করে জানা গিয়েছে, ঘটনার আগের দিন পিনাকেশের সঙ্গে পার্থ ও অরূপের কথা হয়েছে। মোবাইলে কথা হয়েছে পরাগ ও পিনাকেশের। শুধু তা-ই নয়, অরূপ ও পিনাকেশের সঙ্গে গত
সাত দিন ধরে দফায় দফায় মোবাইলে কথা বলেছেন পরাগ। এমনকী, নিজাম প্যালেসে বসে শাসকদলের এক তরুণ নেতার সঙ্গেও পরাগ একাধিক বার মুখোমুখি কথা বলেছেন। ওই নেতা সম্পর্কে আরও তথ্য সংগ্রহ করছে পুলিশ। শর্ট স্ট্রিটের ঘটনায় তাঁর কোনও ভূমিকা আছে কিনা, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে লালবাজারের খবর।
পরাগ-সহ ধৃতদের জেরা করে তদন্তকারীদের অনুমান, জমির দখলদারি নিয়ে রতনলাল নাহাটার সঙ্গে পরাগের একটা রফা-সূত্র তৈরি হয়েছিল। তা বাস্তবায়নের পথে কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন মমতা অগ্রবাল। মমতাকে বড় অঙ্কের টাকা ও বালিগঞ্জে ফ্ল্যাট দেওয়ারও টোপ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পরাগের সে প্রস্তাবে মহিলা রাজি হয়নি। উল্টে তিনি আঁচ করেছিলেন, তাঁকে উচ্ছেদ করতে যে কোনও সময় হামলা হতে পারে। সেই কারণেই মমতার ছায়াসঙ্গী পাপ্পু ওরফে সফিক আহমেদ ও প্রমোদকে চব্বিশ ঘণ্টা শর্ট স্ট্রিটের বাড়িতে মোতায়েন রাখতেন মমতা। পুলিশের অভিযোগ, সুরক্ষার তাগিদে পাপ্পুর মাধ্যমে স্থানীয় কিছু দুষ্কৃতীর সঙ্গেও তিনি যোগাযোগ রাখা শুরু করেছিলেন। বাড়ির মধ্যে মমতার মন্তেসরি স্কুলঘরে স্থানীয় কিছু ছেলে নিয়মিত রাত কাটাত। বস্তুত সোমবার ভোরের হামলার সময়ে মমতা-পাপ্পু-প্রমোদ ছাড়া আরও কিছু লোক বাড়ির চত্বরে ছিল বলে পুলিশ মোটামুটি নিশ্চিত।
প্রাথমিক ভাবে পুলিশের অনুমান, মমতার মতো রতনলালও হামলার আঁচ পেয়েছিলেন। কিন্তু বৈরিতা চরমে ওঠায় দু’জনের মধ্যে এ ব্যাপারে কথা হয়ে ওঠেনি। গোয়েন্দা-কর্তাদের ধারণা, রতনলালের কাছ থেকে সাহায্য না-পাওয়ায় মমতা কিছুটা বেপরোয়া হয়ে উঠেছিলেন। পুলিশ-প্রশাসনের কাছে তিনি একাধিক বার নানা অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। পাশাপাশি অসুস্থ রতনলালের সব ক’টি আগ্নেয়াস্ত্র রেখেছিলেন নিজের হেফাজতে। অর্থাৎ, আক্রমণ হলে নিজেই যাতে লড়তে পারেন, তার প্রস্তুতি সেরে রেখেছিলেন। পাপ্পুকে জেরা করে পুলিশ জেনেছে, মমতা পণ করেছিলেন, জমি তিনি কিছুতেই ছাড়বেন না। বলেছিলেন, শেষ দেখে ছাড়ব।
এ দিন পরাগ মজমুদারকে আদালতে তোলা হয়। পরাগের আইনজীবীরা আদালতে দাবি করেন, অভিযুক্তের তালিকায় নাম না-থাকা সত্ত্বেও নিছক সন্দেহের বশে গোয়েন্দারা ওঁকে গ্রেফতার করেছেন। তাঁর দুই আইনজীবী সুদীপ্ত মিত্র ও অনির্বাণ গুহঠাকুরতা সওয়ালে বলেন, পরাগ মজমুদার শহরের নামী স্থপতি। বিদেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে তাঁকে সম্মানিত করা হয়েছে। পরে তাঁরা আবেদন করে বলেন, তাঁদের মক্কেল সোমবার ঘটনার সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন না। তাই তাঁর জামিন মঞ্জুর হোক।
বিচারক অবশ্য পরাগের জামিনের আবেদন খারিজ করে দিয়ে তাঁকে সাত দিনের জন্য পুলিশি হেফাজতে পাঠিয়েছেন।

পুরনো খবর:
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.