যুদ্ধাপরাধ নিয়ে প্রশ্ন তুলবেন কলম্বোতেই, বার্তা ক্যামেরনের
শ্রীলঙ্কাকে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ নিয়ে চাপ দিতেই কলম্বো যাচ্ছেন বলে নয়াদিল্লিকে বার্তা দিলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন। ওই একই অভিযোগ নিয়ে ভারতের তামিল সম্প্রদায়ের আবেগকে গুরুত্ব দিয়ে মনমোহনের না যাওয়ার সিদ্ধান্তকেও ক্যামেরন সমর্থন করেছেন বলে বিদেশ মন্ত্রক সূত্রে খবর।
শ্রীলঙ্কায় কমনওয়েলথ শীর্ষ বৈঠকে যাওয়ার পথে আজ ভারতে এসেছেন ক্যামেরন। প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের সঙ্গে বৈঠকে শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তান, ইউরো সঙ্কট-সহ বেশ কিছু আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন তিনি। সন্ত্রাস দমনে দুই দেশের হাত মিলিয়ে কাজ করা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন বৈঠকের পরে।
তবে কূটনৈতিক সূত্রে খবর, প্রত্যাশিত ভাবেই বৈঠকের অনেকটা জুড়েই ছিল শ্রীলঙ্কা প্রসঙ্গ। এলটিটিই-র সঙ্গে লড়াইয়ের সময়ে তামিলদের বিরুদ্ধে নানা যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ উঠেছে শ্রীলঙ্কা সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে। তাই প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপক্ষের কমনওয়েলথ শীর্ষ বৈঠকের আয়োজক হওয়ার অধিকার নেই বলে মনে করে নানা দেশের তামিল সংগঠন।
এই বৈঠকে মনমোহনের যাওয়ার প্রবল বিরোধিতা করেছে তামিলনাড়ুর সব রাজনৈতিক দল ও সংগঠন। রাজনৈতিক সূত্রে খবর, কংগ্রেস কোর গ্রুপের বৈঠকেও মনমোহনকে না যেতে পরামর্শ দেন কয়েক জন কংগ্রেস নেতা। ফলে, শেষ পর্যন্ত না যাওয়ারই সিদ্ধান্ত নেন মনমোহন। প্রকাশ্যে অবশ্য বিদেশ মন্ত্রক জানায়, কমনওয়েলথ শীর্ষ বৈঠক বহু রাষ্ট্রের সম্মিলিত বিষয়। তাতে প্রধানমন্ত্রী না যাওয়ার সঙ্গে ভারত-শ্রীলঙ্কা সম্পর্কের কোনও যোগ নেই। প্রধানমন্ত্রী ব্যস্ততার জন্য যেতে পারেননি।
কমনওয়েলথ বৈঠকে না যাওয়ার জন্য চাপ ছিল ক্যামেরনের উপরেও। ব্রিটেনে বসবাসকারী তামিল সম্প্রদায় বিষয়টি নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে। আবার কানাডা, মরিশাসের মতো দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা কলম্বোয় যান নি। শ্রীলঙ্কা যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ নিয়ে উপযুক্ত পদক্ষেপ করেনি বলে সাফ জানিয়েছে ওই দেশগুলি। এই পরিস্থিতিতে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর কলম্বো যাওয়া উচিত কি না তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছিল নানা শিবিরে।
ওই প্রশ্নের সরাসরি জবাব দিতে সংবাদপত্রে একটি নিবন্ধ লিখেছেন ক্যামেরন। তাতে তিনি জানিয়েছেন, কলম্বো যাওয়া উচিত নয় বলে মনে করেন অনেকে। কিন্তু তিনি সেখানে গিয়ে যুদ্ধাপরাধ ও তামিলদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি নিয়ে রাজাপক্ষে সরকারের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা করতে চান। ওই অভিযোগ নিয়ে আন্তর্জাতিক উদ্বেগের কথা সাফ জানাতে চান রাজাপক্ষেকে।
নিবন্ধে ক্যামেরন জানিয়েছেন, চার বছর শ্রীলঙ্কায় গৃহযুদ্ধ শেষ হয়েছে। কিন্তু পরিস্থিতির এখনও বিশেষ উন্নতি হয়নি। শ্রীলঙ্কায় সংবাদমাধ্যমকে আরও স্বাধীনতা দেওয়া প্রয়োজন। সাংবাদিকদের ভয় দেখানো বন্ধ করতে হবে। তামিল-অধ্যুষিত উত্তর শ্রীলঙ্কার সেনাবাহিনীর উপস্থিতি কমানো প্রয়োজন। বাড়ানো উচিত তামিলদের সঙ্গে অন্য সম্প্রদায়ের মেলামেশা। যুদ্ধাপরাধ নিয়ে শ্রীলঙ্কা সরকার নিরপেক্ষ তদন্ত না করলে আন্তর্জাতিক তদন্ত করতে হবে বলেও মনে করেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। কলম্বোয় কমনওয়েলথ বৈঠকে এই কথাগুলিই তিনি বলতে চান বলে দাবি ক্যামেরনের।
মনমোহনের শ্রীলঙ্কা না যাওয়ার সিদ্ধান্তকে সম্মান করলেও শ্রীলঙ্কাকে বার্তা দেওয়ার বিষয়ে ভারত-সহ কমনওয়েলথের অন্য দেশগুলিকে পাশে চেয়েছেন ক্যামেরন।
ভারতও সেই বিষয়ে সচেতন বলেই ইঙ্গিত দিয়েছে নয়াদিল্লি। প্রধানমন্ত্রী না গেলেও কলম্বোয় গিয়েছেন বিদেশমন্ত্রী সলমন খুরশিদ ও বিদেশসচিব সুজাতা সিংহ।
উত্তর শ্রীলঙ্কায় তামিলদের সাহায্য করতে বিভিন্ন প্রকল্পে ভারতের জড়িত থাকার বিষয়টি তুলে ধরে গত কালই খুরশিদ জানিয়ে দেন, তাঁরা তামিলদের পাশে রয়েছেন। শ্রীলঙ্কার সঙ্গে ভারত সম্পর্ক রাখবে না, এমন শর্তে কাজ চলতে পারে না। বরং কমনওয়েলথ শীর্ষ বৈঠকের সময়েই যুদ্ধাপরাধ ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ নিয়ে নিজেদের বক্তব্য রাজাপক্ষে সরকারকে জানাবে নয়াদিল্লি। বিদেশমন্ত্রীর মতে, শ্রীলঙ্কা সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ না রাখলে তামিলদের সাহায্য করা সম্ভব নয়।
আজ যুদ্ধাপরাধ ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রশ্নে কলম্বোয় সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের মুখে পড়েন বিদেশসচিবও। তাঁর বক্তব্য, “সব দেশের কূটনীতির নিজস্ব কৌশল আছে। আমাদের উদ্বেগের কথা কলম্বোকে জানানো হয়েছে। ”
যুদ্ধাপরাধ নিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধের তদন্ত নিয়ে ক্যামেরনের মন্তব্যের অবশ্য কড়া সমালোচনা করেছে শ্রীলঙ্কা। শ্রীলঙ্কা সরকারের বক্তব্য, “ক্যামেরন ঔপনিবেশিক যুগের ভাষায় কথা বলছেন। শ্রীলঙ্কা পরাধীন নয়, স্বাধীন রাষ্ট্র। কমনওয়েলথে একটি রাষ্ট্রের বিচার করার অধিকার অন্য রাষ্ট্রের নেই।”
ব্রিটেন, ভারত-সহ কমনওয়েলথের দেশগুলির বার্তাকে শ্রীলঙ্কা কতটা গুরুত্ব দেবে তা নিয়ে আশঙ্কা তা-ই থেকেই যাচ্ছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.