ট্রেনের ধাক্কা, এ বার মৃত অন্তত সাতটি হাতি
ংখ্যাটা ক্রমেই বাড়ছিল। চার,পাঁচ, ছয়...। উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জঙ্গলের বুক চিরে যাওয়া রেলপথে হাতি-হত্যার ঘটনার বিরাম ছিল না। বুধবার চাপড়ামারির জঙ্গলে চালসা ও নাগরাকাটা স্টেশনের মাঝে জলঢাকা সেতুর কাছে এমনই এক দুর্ঘটনায় এ যাবৎ কালের মধ্যে সর্বাধিক সংখ্যক হাতি-মৃত্যুর ঘটনাটি ঘটল।
বন দফতরের কর্মীরা জানান, এ দিন বিকেল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ ডিব্রুগড়গামী কবিগুরু এক্সপ্রেসের ধাক্কায় ঘটনাস্থলেই মারা গিয়েছে অন্তত সাতটি হাতি। গুরুতর জখম আরও দশ থেকে বারোটি হাতি আশপাশের জঙ্গলেই পড়ে রয়েছে বলে বনকর্মীদের অনুমান। তাঁরা জানান, আহত হাতিগুলির মধ্যে বেশ কয়েকটির প্রাণে বাঁচা প্রায় অসম্ভব। ট্রেন দুর্ঘটনায় এতগুলি হাতির এক সঙ্গে প্রাণহানির ঘটনা যে নজিরবিহীন তা মেনে নিয়েছে দেশের পরিবেশ ও বনমন্ত্রকও। রেল ও রাজ্যের বন দফতরের ‘সমন্বয়ের অভাব’কেই এ ব্যাপারে কাঠগড়ায় তুলছেন দেশের প্রোজেক্ট এলিফ্যান্টের অধিকর্তা এ এন প্রসাদ। তিনি বলেন, “জানি না শেষ পর্যন্ত কতগুলি হাতির মৃত্যুর খবর আসবে। তবে, এ ভাবে হাতির মৃত্যু-মিছিল চললে ওই এলাকায় আর হাতিই খুঁজে পাওয়া যাবে না।”
উদ্বিগ্ন রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরীও। তিনি বলেন, “অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। উত্তরবঙ্গের যে সব জায়গায় হাতিরা রেল লাইন পারাপার করে সেগুলি বন দফতর আগে নির্দিষ্ট করে দিয়েছিল। সে সব জায়গায় ট্রেনের গতি কমিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু এই জায়গাটি বোধহয় ‘এলিফ্যান্ট করিডর’ হিসেবে চিহ্নিত নয়। তাই ট্রেনের গতিও ছিল যথেষ্ট।” এ দিন বিকেলে তারই শিকার হল হস্তিযূথ।
জলঢাকা সেতু থেকে ঝুলছে হাতির মৃতদেহ। ছবি: দীপঙ্কর ঘটক।
বনকর্মীরা জানান, এ দিন বিকেল ৫টা ৪০ মিনিট নাগাদ প্রায় ৩৫টি হাতির একটি দল লাইন পার হচ্ছিল। সেই সময় প্রবল বেগে ছুটে আসছিল জয়পুর থেকে ডিব্রুগড়গামী কবিগুরু এক্সপ্রেস। রেলের পিলার ৭৮/৭ ও ৭৮/৮ এর মধ্যে তীব্র বেগে আসা ট্রেনটি দলটিকে ধাক্কা মারে। জঙ্গলের প্রান্তে জলঢাকা সেতুর উপরেই বেশ কয়েকটি হাতির দেহ নিয়ে ট্রেনটি সেতুতে উঠে আসে। চারটে হাতি ট্রেনের ধাক্কায় ছিটকে পড়ে লাইনের পাশে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দ্রুত আলো পড়ে আসছিল। তাই আপাত ভাবে ৫টি পূর্ণবয়স্ক এবং ২টি শাবককে চিহ্নিত করা গেলেও আরও বেশ কয়েকটি হাতি যে মারা যাবে এ ব্যাপারে তাঁরা নিঃসংশয়।
এই ঘটনা দেখে দলের অন্য হাতিগুলি চিৎকার করা শুরু করে। সংঘর্ষে ট্রেনটির ইঞ্জিনের সঙ্গে অন্য কামরার সংযোগকারী ব্রেকের প্রেশার পাইপ ফেটে যায়। ফলে ট্রেনটিও আটকে পড়ে সেতুর মুখে। নাগরাকাটা স্টেশনে খবর দেন চালক। সেখান থেকে খবর যায় আলিপুরদুয়ারে রেলের কন্ট্রোল রুমে। খবর পেয়ে খুনিয়া রেঞ্জের বনকর্মীরা সওয়া ৬টা নাগাদ ঘটনাস্থলে পৌঁছন। প্রথমে তাঁরা ভেবেছিলেন একটি হাতি চাপা পড়েছে। কিছুক্ষণ পরে তাঁরা বুঝতে পারেন ঘটনাটি কতটা ভয়াবহ। তড়িঘড়ি আসেন ডিএফও বিদ্যুৎ সরকার। ফোনে খোঁজ নিতে থাকেন বনমন্ত্রী হিতেন বর্মন। এই সময়ই জানা যায় আলিপুরদুয়ারের প্রাক্তন সাংসদ তথা বর্তমান তৃণমূলের নেতা জোয়াকিম বাক্সলা ওই ট্রেনে রয়েছেন। হিতেনবাবুর সঙ্গে তাঁর কথা হয়। হিতেনবাবু বলেন, “৭০-৮০ কিলোমিটার বেগে চলছিল ট্রেনটি। সে জন্যই এত বড় দুর্ঘটনা।” বনমন্ত্রী বলেন, “আমরা আগেও বলেছি যে সব ট্রেনের ডুয়ার্সে স্টপ নেই সেগুলিকে এই করিডর দিয়ে না চালাতে। এই ট্রেনটিও সে রকমই ছিল। আমাদের চেষ্টা সত্ত্বেও রেলের অসহযোগিতার জন্যই বারবার এই ধরনের ঘটনা ঘটছে।”
রেলের আলিপুরদুয়ার ডিভিশনের এডিআরএম বনিশেস লাকড়া বলেন, “এই ঘটনা দুর্ভাগ্যজনক। ট্রেনটি মারাত্মভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সেটিকে চালানো যাচ্ছে না। শিলিগুড়ি ও আলিপুরদুয়ার দুই প্রান্ত থেকে দু’টি ইঞ্জিনকে জরুরি ভিত্তিতে এনে ট্রেনটি চালানোর চেষ্টা হচ্ছে।” তবে গতি সংক্রান্ত অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, “ট্রেনের গতি কত ছিল তা তদন্ত করে দেখা হবে। তবে তা ৭০-৮০ কিলোমিটার ছিল না।” রাজ্যের প্রধান মুখ্য বনপাল (বন্যপ্রাণ) নবীনচন্দ্র বহুগুণা ঘটনাচক্রে আজ, বৃহস্পতিবার দিল্লি যাচ্ছেন। তিনি বলেন, “আজ দিল্লি গিয়েই এ ব্যাপারে রেল মন্ত্রকের সঙ্গে কথা বলব। আলিপুরদুয়ার-শিলিগুড়ি রুটে বারবার ট্রেনের ধাক্কায় হাতি মৃত্যু হচ্ছে। কিন্তু, রেলের সঙ্গে বৈঠক করে কোনও ফল হচ্ছে না।” তিনি জানান, রেল কর্তৃপক্ষ ওই রুটে রাতের সময় ঘণ্টায় ৪০ কিমি গতিবেগে ট্রেন চালানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। তবে, এ দিনের ঘটনায় ফের স্পষ্ট, ট্রেনের গতিবেগ তার চেয়ে বেশিই ছিল।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.