গ্যাস ভরতে লম্বা লাইন, সমস্যায় অটো চালকেরা
ক সময়ে শহরে চলত সিএনজি গ্যাস চালিত প্রায় আশিটি অটো। গ্যাস ভরা যেত দু’জায়গা থেকে। বর্তমানে অটোর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় সাড়ে সাতশো। সঙ্গে শহরের রাস্তায় চলছে শ’পাঁচেক সিএনজি চালিত গাড়ি। কিন্তু গ্যাস ভরার জায়গা সেই দু’টিই। ফলে, গাড়ির জ্বালানি সংগ্রহে গিয়ে দীর্ঘ অপেক্ষা করতে হচ্ছে বলে অভিযোগ অটো ও গাড়ি চালকদের। সব সময় অটোর লম্বা লাইনের জেরে তাঁদেরও সমস্যায় পড়তে হচ্ছে বলে দাবি পাম্প মালিকদেরও।
২০০৮ সালে দুর্গাপুর শহরে সিএনজি গ্যাসের অটো চালানোর সিদ্ধান্ত নেয় প্রশাসন। পেট্রোল, ডিজেল, এলপিজি-র বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হয় এই সিএনজি, যা মূলত উচ্চচাপে রাখা মিথেন। এই জ্বালানি পুড়লে দূষণ কম হয়। দামও কম। ফলে, এক দিকে যেমন পরিবেশের উপকার, তেমনই লাভ অটো চালকদেরও। প্রথম দফায় চালু হয় ৮০টি সিএনজি চালিত অটো।
দীর্ঘ অপেক্ষা। সিটি সেন্টার এলাকায় বিশ্বনাথ মশানের তোলা ছবি।
দুর্গাপুরে সিএনজি গ্যাস সরবরাহের দায়িত্ব নেয় কোল বেড মিথেন (সিবিএম) উত্তোলক একটি বেসরকারি সংস্থা। সিবিএম তুলে তা সিএনজি-তে রূপান্তর করে রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থার পাম্পে পয়েন্ট খুলে সেখানে ট্যাঙ্কে করে সরবরাহ করে সংস্থাটি। রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থাগুলির সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে এই কাজ করে তারা। বিনিময়ে তেল সংস্থা এবং পাম্পের মালিক ‘কমিশন’ পান। ২০০৮ সালের নভেম্বরে সিটি সেন্টারের একটি পেট্রোল পাম্পে সিএনজি ভর্তির পয়েন্ট খোলা হয়। ৮০টি অটোর সবগুলিই সেখান থেকে গ্যাস নিত।
কিন্তু পরে পরে সিএনজি গ্যাস চালিত অটোর সংখ্যা বাড়তে থাকে। সিএনজি চালিত অন্য গাড়ির সংখ্যাও বাড়ে। গ্যাস ভরার জন্য দীর্ঘ লাইন পড়তে থাকে ওই পেট্রোল পাম্পে। শেষে মেন গেট এলাকায় ২ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে আরও একটি পেট্রোল পাম্পে সিএনজি গ্যাসের পয়েন্ট খোলা হয়। কিন্তু অটো চালক এবং সিএনজি চালিত গাড়ি মালিকদের অভিযোগ, নতুন পয়েন্টটি মাঝে-মাঝেই বিকল হয়ে যায়। তা ছাড়া এই গ্যাস চালিত অটো ও গাড়ি গত কয়েক বছরে যে হারে বেড়েছে, তাতে মাত্র দু’টি পয়েন্ট যথেষ্ট নয়।
পরিবহণ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, দুর্গাপুরে বর্তমানে অটোর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় সাড়ে সাতশোয়। অটো চালকেরা জানান, ট্যাঙ্কে চার কেজি সিএনজি গ্যাস ভরা যায়। তাতে গড়ে একশো কিলোমিটার চলাচল করা যায়। চালকদের দাবি, দিনে গড়ে অটো চলে প্রায় দু’শো কিলোমিটার। অর্থাৎ, রোজ গড়ে দু’বার গ্যাস ভরতে যেতে হয়। ফলে, লম্বা লাইন পড়ে পেট্রোল পাম্পে। মেন গেটের পয়েন্টটি কখনও বন্ধ থাকলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়। মাঝে মাঝে পেট্রোল পাম্প ছাড়িয়ে সে লাইন পৌঁছে যায় রাস্তায়। দীর্ঘ অপেক্ষায় অধৈর্য অটোচালকদের মধ্যে বচসাও বেধে যায় মাঝে-মধ্যে। অটোচালক সুজিত প্রসাদ বলেন, “এক বার গ্যাস ভরতে গিয়ে ঘণ্টাখানেক লেগে যায়। তত ক্ষণ অটো চালাতে পারি না। যাত্রীরাও পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হন।”
সিটি সেন্টারের ওই পেট্রোল পাম্পের মালিক বিশ্বদীপ রায়চৌধুরীর আবার দাবি, “অটোর ভিড়ে পেট্রোল, ডিজেলের গ্রাহক কমে যাচ্ছে। বড় লরি বা ট্রাক অনেক সময়ে ঢুকতেই পারছে না। অথচ সিএনজি থেকে সামান্য কমিশন মেলে। সব মিলিয়ে বেশ লোকসান হচ্ছে।” সিএনজি আছে কি না, কখন মিলবে সেই সব খবর জানাতে গিয়েও পাম্পের কর্মীদের হিমসিম দশা হয় বলে দাবি বিশ্বদীপবাবুর। তাঁর কথায়, “গভীর রাতেও অটোচালকেরা ফোন করে জানতে চান, ভোরে সিএনজি আসবে কি না!”
অটো চালকদের আইএনটিটিইউসি অনুমোদিত সংগঠন ‘দুর্গাপুর সিএনজি অপারেটরস ইউনিয়ন’-এর সভাপতি প্রভাত চট্টোপাধ্যায়, সহ-সভাপতি শান্তনু সোমেরা জানান, বিষয়টি নিয়ে তাঁরা গ্যাস সরবরাহকারী সংস্থার আসানসোল অফিসে কয়েক বার স্মারকলিপি দিয়েছেন। ওই গ্যাস সংস্থার এক আধিকারিক জানান, দুর্গাপুর স্টেশনের কাছে নতুন একটি পয়েন্ট খোলার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁদের। সরাসরি পাইপ লাইনের মাধ্যমে সিএনজি সরবরাহের কথাও ভাবা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে গাড়ির অপেক্ষায় বসে থাকতে হবে না, সব সময় হাতের কাছে সিএনজি মিলবে বলে আশ্বাস তাঁর।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.