খারাপ রাস্তায় কমছে উত্তরের বাস, নাকাল যাত্রীরা
ছর পাঁচেকের ছেলেকে নিয়ে মুর্শিদাবাদের ফরাক্কা থেকে দুর্গাপুরে বাপের বাড়ি এসেছিলেন সুচেতা হালদার। ফেরার দিন বাস ধরার জন্য যান দুর্গাপুর সিটি সেন্টার বাসস্ট্যান্ডে। সময়সূচি অনুযায়ী, ফরাক্কা যাওয়ার বাস পাওয়ার কথা সকাল ১০টায়। সাড়ে ৯টায় স্ট্যান্ডে পৌঁছেও দেখা মেলেনি সেই বাসের। অনুসন্ধান কেন্দ্র থেকে জানতে পারেন, পরের বাস রয়েছে বেলা ১১টা নাগাদ। কিন্তু সেই বাসও আসেনি। শেষে দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ লালগোলাগামী বাসে চড়েন তিনি। ওমরপুরে নেমে আবার গন্তব্যস্থলের বাস ধরতে হয়।
রাজ্যের দুই অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শহর দুর্গাপুর ও আসানসোল থেকে অন্য জেলার সংযোগকারী সরকারি বাস পরিষেবার এমন হালের জন্য বিপাকে পড়তে হচ্ছে অনেককেই। মালদহ, শিলিগুড়ি, কোচবিহার-সহ উত্তরের নানা এলাকায় যাওয়ার বাস মিলছে না বলে অভিযোগ তাঁদের। শুধু তাই নয়, এই দুই শহর থেকে মুর্শিদাবাদ ও বীরভূমের নানা এলাকার বাস পেতেও নাকাল হতে হচ্ছে বলে যাত্রীদের দাবি। অনেক সময়েই তাঁদের বর্ধমান হয়ে ঘুরে যেতে হচ্ছে।
দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থা (এসবিএসটিসি) সূত্রে জানা গিয়েছে, আগে এই দুই শহর থেকে বিকেলে উত্তরবঙ্গের বেশ কিছু বাস ছাড়ত। কিন্তু বছর দেড়েক আগে দুর্গাপুর থেকে মালদহ ও শিলিগুড়ি যাওয়ার বাস একেবারে বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ফরাক্কার বাস রয়েছে তিনটি। তার মধ্যে দু’টি অনিয়মিত। বালুরঘাটগামী দু’টি বাসের মধ্যে একটি অনিয়মিত।
আসানসোল বাসস্ট্যান্ডে পড়ে রয়েছে অচল বাস। ছবি: শৈলেন সরকার।
সরকারি বাস বেশি না চললেও দুর্গাপুর-শিলিগুড়ি বেসরকারি বাস চলে। কিন্তু তাতে ভাড়া অনেকটা বেশি। সরকারি বাসে যেখানে দুর্গাপুর থেকে শিলিগুড়ি যাওয়ার ভাড়া ১৮০ থেকে ২০০ টাকার মধ্যে, বেসরকারি বাসে সেই ভাড়া ৩২০ থেকে ৩৫০ টাকা। আসানসোলের বাসিন্দা নবকুমার বর্মণের কথায়, “ব্যবসার কাজে মালদহ ও শিলিগুড়ি যেতে হয় মাঝেমধ্যেই। সরকারি বাস না থাকার ফলে বেসরকারি বাসই ভরসা। কিন্তু তাতে খরচ অনেক বেড়ে যায়।”
দুর্গাপুর ও আসানসোল থেকে সরকারি বাস উপযুক্ত সংখ্যায় চালানো হচ্ছে না কেন? এসবিএসটিসি-র চেয়ারম্যান তমোনাশ ঘোষ বলেন, “আগের তুলনায় এই দু’জায়গা থেকে উত্তরবঙ্গের বাস কম চলছে, এটা ঘটনা। শিলিগুড়ির বাস বছর দেড়েক আগে বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কারণ, রাস্তা খারাপ। এ ছাড়াও কয়েকটি বাস পুরনো হয়ে যাওয়ায় তা চালানোর মতো অবস্থায় নেই।” সংস্থার কর্তারা জানান, অনেক বাসই পুরনো হওয়ায় খারাপ রাস্তায় সেগুলি বেশি সমস্যায় পড়ছিল। ভেঙে যাচ্ছিল বাসের যন্ত্রাংশ। তার জেরেই বেশ কিছু বাস বসে গিয়েছে। বেসরকারি বাস তুলনায় নতুন ও আধুনিক হওয়ায় খারাপ রাস্তায় তুলনায় কম সমস্যা হয় বলে দাবি একাংশের।
উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থা (এনবিএসটিসি) সূত্রেও এই রুটে বাস না চালানোর পিছনে রাস্তা খারাপের সমস্যাই বড় কারণ বলে জানানো হয়েছে। সংস্থার দুর্গাপুরের এজেন্ট শেখর দে-র কথায়, “চার মাস ধরে আমাদের বাস বন্ধ রয়েছে। কারণ, রাস্তা খারাপ। বিশেষ করে গাজল থেকে ডালখোলা পর্যন্ত খুব খারাপ রাস্তায় বাস চালাতে বেশ অসুবিধায় পড়তে হয়।” তবে তিনি বলেন, “আমরা শীঘ্রই দু’টি বাস চালাব, একটি বাঁকুড়া-শিলিগুড়ি, অন্যটি আসানসোল-শিলিগুড়ি।” অনেক সময়ে বাস চালানো লাভজনক হচ্ছিল না বলেও জানিয়েছেন এসবিএসটিসি-র দুর্গাপুরের ডিভিশনাল ম্যানেজার প্রণবকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “বাস চালাতে দু’জন চালক ও এক জন কন্ডাক্টর প্রয়োজন। কিন্তু পয়সা না ওঠায় তাঁদের বেতন দিতে সমস্যা হচ্ছিল।”
এসবিএসটিসি-র ম্যানেজিং ডিরেক্টর নবকুমার বর্মণ আবার বলেন, “বাস্তা খারাপের সমস্যা তো রয়েছেই। তা ছাড়া আমাদের সংস্থাকে দক্ষিণবঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থার বিষয়টিকে বেশি গুরুত্ব দিতে হয়।” কিন্তু, দক্ষিণবঙ্গের বহু মানুষজনকে নিয়মিত নানা কাজে উত্তরবঙ্গ যেতে হয়, সে ব্যাপারে এসবিএসটিসি কর্তৃপক্ষ কী ভাবছেন? নবকুমারবাবুর জবাব, “কিছু দিনের মধ্যেই আমরা উপযুক্ত সংখ্যায় বাস চালাব।”

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.