টানা বৃষ্টি আর ব্যারাজের জলে ভাসল দুই জেলা
টানা বৃষ্টিতে সুবর্ণরেখা ও কংসাবতী নদীর জল বাড়তে শুরু করেছে। এই অবস্থায় ব্যারাজ থেকে বেশি পরিমাণে জল ছাড়া হলে কিছু এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিতে পারে। ইতিমধ্যে ভৈরববাঁকি, তারাফেনি এবং মুকুটমণিপুর ব্যারাজ থেকে মোট ২২ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে। সেই জল নদীতে এসে মিশছে। পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুরের বেশ কিছু এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। জেলা প্রশাসন অবশ্য জানিয়েছে, উদ্বেগের কিছু নেই। নদীর জল বিপদসীমার নীচেই রয়েছে। পরিস্থিতির উপর নজর রাখা হচ্ছে। ব্লকগুলিতে পর্যাপ্ত ত্রাণ মজুত রয়েছে।
জল-স্থল একাকার। তমলুক শহরের রূপনারায়ণের তীরবর্তী এলাকার ছবি তুলেছেন পার্থপ্রতিম দাস।
রবিবার থেকে বৃষ্টি শুরু হয়েছিল। সোমবারের পর মঙ্গলবারও দিনভর বৃষ্টি হল দুই মেদিনীপুরে। টানা বৃষ্টির জেরে স্বাভাবিক জনজীবন ব্যাহত হয়েছে। প্রশাসন সূত্রে খবর, সোমবার সকাল ৮টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৮টা পর্যন্ত মেদিনীপুরে বৃষ্টি হয়েছে ৫০ মিলিমিটার, ঘাটালে ১২১ মিলিমিটার, ঝাড়গ্রামে ১৭০ মিলিমিটার। খড়্গপুর মহকুমার মধ্যে সবথেকে বেশি বৃষ্টি হয়েছে সবংয়ে, ১৯৬ মিলিমিটার, মোহনপুরে ৩৭ মিলিমিটার। পূর্ব মেদিনীপুরের পটাশপুরে বৃষ্টির পরিমাণ ১৫৬ মিলিমিটার, পাঁশকুড়ায় ৮৪ মিলিমিটার, তমলুকে ৮১ মিলিমিটার, কাঁথিতে ৮৮ মিলিমিটার, দিঘায় ৭৭ মিলিমিটার। পূর্ব মেদিনীপুর কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার বিকেল থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত জেলায় গড়ে বৃষ্টি হয়েছিল ৬৯.৯ মিলিমিটার। আর সোমবার সকাল থেকে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত গড়ে বৃষ্টি হয়েছে ৯৬ মিলিমিটার। অর্থাৎ মাত্র দু’দিনে জেলায় মোট বৃষ্টি হয়েছে ১৬৬ মিলিমিটার। জেলার উপ-কৃষি অধিকর্তা প্রণবেশ বেরা বলেন, “প্রবল বৃষ্টির জেরে জেলার ২০টি ব্লকের মোট প্রায় ৫৪ হাজার হেক্টর জমির আমন ও আউশ চাষের জমি জলমগ্ন হয়েছে। ফলে বেশ কিছু এলাকায় ধানের ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।”
অঝোর ধারায়: মেদিনীপুর শহরে সারাদিন বৃষ্টি।
এগরা মহকুমা কৃষি দফতরের হিসাবে মহকুমার মোট ৪৫৩টি মৌজার কৃষি জমি জলমগ্ন হয়েছে। এগরার সহ-কৃষি অধিকর্তা (প্রশাসন) কল্লোলকুমার পাল জানান, “মহকুমায় এ বার আমন চারা রোপণ হয়েছে ৫২ হাজার হেক্টর জমিতে। জলে ডুবে থাকায় প্রায় ৯৭৫০ হেক্টর জমির চারা নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এর মধ্যে শুধু ভগবানপুর ১ ব্লকেই রয়েছে ৬২৫০ হেক্টর জমি রয়েছে।”
গত তিন দিনে ভগবানপুরে বৃষ্টি হয়েছে ৩০২.৭ মিলিলিটার। এই সময়ে আউশ ধান কাটার কাজ চলছে। কিন্তু টানা বৃষ্টির জেরে ডুবে গিয়েছে সেই সদ্য কাটা আউশ ধান। দু’এক দিনের মধ্যে জল না নামলে নষ্ট হয়ে ওই সব ধান নষ্ট হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা কল্লোলবাবুর।
প্রবল বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত হয়েছে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার জনজীবনও। কোলাঘাট, পাঁশকুড়া, তমলুক, শহিদ মাতঙ্গিনী, চণ্ডীপুর, নন্দীগ্রামের বহু গ্রামের রাস্তা জলমগ্ন হয়েছে। ধসে গিয়েছে বহু মাটির বাড়ি। তবে সেচ দফতরের কাঁথি বিভাগের ইঞ্জিনিয়র স্বপনকুমার পণ্ডিত জানান, কেলেঘাই ও বাগুই নদীর জল বিপদসীমার নীচেই রেয়েছে। পটাশপুর ১ ব্লকের উত্তর সেলমাবাদে কেলেঘাই নদীর বাঁধে ফাটল দেখা দিয়েছে। সেচ দফতরের পক্ষ থেকে নদী বাঁধ মেরামতির জন্য দশ হাজার বস্তা দেওয়া হয়েছে। এগরার মহকুমাশাসক অসীমকুমার বিশ্বাস জানান, “পঞ্চায়েত এলাকাগুলিতে ত্রিপল সরবারহ করা হয়েছে। বন্যাপ্রবণ এলাকায় নৌকার বন্দোবস্ত রাখা হয়েছে।”
শুধু গ্রামাঞ্চল নয়, টানা বৃষ্টিতে শহরাঞ্চলেও স্বাভাবিক জনজীবন ব্যাহত হয়েছে। মেদিনীপুর-খড়্গপুর, দুই শহরের কিছু এলাকায় জল দাঁড়িয়েছে। নিকাশি নালার জল উঠে এসেছে রাস্তায়। বৃষ্টি না-কমলে পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে বলে আশঙ্কা। চিন্তিত পুর-কর্তৃপক্ষও। খড়্গপুর পুরসভার উপ-পুরপ্রধান চিত্তরঞ্জন মণ্ডলের বক্তব্য, “নিকাশি নালাগুলো পরিষ্কার করা হচ্ছে। আর জল জমবে না। কিছু মাটির বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পুরসভায় প্রায় ১৫০টি ত্রিপল রয়েছে। আরও প্রায় ৫০০টি ত্রিপল চেয়ে আবেদন করা হবে।” মেদিনীপুর পুরসভায় ২৫০টি ত্রিপল মজুত রয়েছে। পুরসভা সূত্রে খবর, প্রয়োজনে আরও ত্রিপল চেয়ে আবেদন করা হবে। জেলায় রিক্যুইজিশন পাঠানো হবে।
কোতয়ালি থানার প্রবেশ পথে জমেছে জল। —নিজস্ব চিত্র।
টানা বৃষ্টির জলে যতটা না ভয়, তার চেয়ে অনেক বেশি চিন্তা ব্যারাজে ছাড়া জল নিয়ে। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, মঙ্গলবার ভোরে ভৈরববাঁকি এবং তারাফেনি ব্যারাজ থেকে জল ছাড়া হয়। নদীতে জল বাড়ে। তারাফেনি থেকে প্রায় ১১ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে। ভৈরববাঁকি থেকে প্রায় ১ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে। অন্য দিকে, এদিন বিকেলে মুকুটমণিপুর ব্যারাজ থেকে প্রায় ১০ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হয়। এই জল এসে কংসাবতীতে মিশবে। টানা বৃষ্টির জেরে নদীর জলের স্রোত আগের থেকে বেড়েছে। জল আরও বাড়লে নদী ছাপিয়ে তা কিছু গ্রামে ঢুকে পড়তে পারে। তবে, পশ্চিম মেদিনীপুরে নতুন করে বাঁধ ভাঙার কোনও খবর নেই।

পশ্চিমে অতিবৃষ্টির জের
• রবিবার সকাল ৮টা থেকে সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত গড় বৃষ্টি ৯৮ মিলিমিটার
• সোমবার সকাল ৮টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৮টা পর্যন্ত গড় বৃষ্টি ১২৪ মিলিমিটার
• ক্ষতিগ্রস্ত ব্লক ১০টি। মেদিনীপুর সদর, কেশপুর, গড়বেতা- ১ ও ৩, দাসপুর- ১, চন্দ্রকোনা- ১, সাঁকরাইল, গোপীবল্লভপুর- ১, খড়্গপুর- ২ এবং সবং।
• ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাম ১০৩০টি।
• ক্ষতিগ্রস্ত পুরসভা ৬টি। ঘাটাল, রামজীবনপুর, ক্ষীরপাই, চন্দ্রকোনা, খড়ার এবং ঝাড়গ্রাম।
• ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ ১ লক্ষ ৮৯ হাজার ১০২ জন।
• ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি ৮ হাজার ৭০৩টি। সম্পূর্ণ ৯৬৯টি। আংশিক ৭ হাজার ৭৩৪টি।

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.