অবসরের বছর পার, তবু স্কুলে আসেন স্যর
স্কুলের বারান্দায় জড়ো হয়ে স্থানীয় বাসিন্দারাই প্রধান শিক্ষকের বিদায়ী সংবর্ধনার আয়োজন করেছিলেন। ‘স্যরের’ জন্য নিজেরাই ফুল তুলে তোড়া গেঁথে তৈরি করে আনে পড়ুয়ারা। ফুলের তোড়া হাতে তুলে দিয়ে পড়ুয়ারা জানতে চায়, “স্যর, কাল থেকে তবে আমাদের পড়াবে কে?” চোখের কোনায় ছলকে ওঠা জল মুছে ‘স্যর’ আশ্বস্ত করে বলেন, “কাল থেকেও আমিই স্কুলে আসব।” কুমারগ্রামের তুরতুরি চা বাগান প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ভিনসেন্ট লাকড়া গত ৩০ সেপ্টেম্বর অবসর গ্রহণ করেন। তিনি ছাড়া স্কুলে শিক্ষক বলতে একজন মাত্র পার্শ্ব শিক্ষক। তাই তাঁর অবসরের পরে ১৭৬ জন পড়ুয়ার স্কুলে পঠনপাঠন নিয়েই অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। তবে তুরতুরি বাগানের ‘স্যার’ ভিনসেন্টবাবু ব্যতিক্রমীই। গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসের পর থেকে রোজই তিনি সাইকেল চেপে প্রায় ৯ কিলোমিটার জঙ্গলপথ পার হয়ে পৌনে দশটার মধ্যে স্কুলে আসছেন। আবসরের পরেও টানা ১১ মাস ধরে প্রতিদিন তাঁর এই স্কুলে আসার খবর পৌঁছেছে জেলা স্কুল পরিদর্শকের দফতরেও। তবে তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, অবসরের পরে স্কুলে এসে ক্লাস নেওয়ার জন্য তিনি কোনও পারিশ্রমিক নেবেন না।
ভিনসেন্টবাবুর কথায়, “১৯৭১ সালে নিজের হাতে এই স্কুল গড়েছি। তার পর থেকে এই স্কুলেই পড়িয়ে চলেছি। এই স্কুল, ছাত্র-ছাত্রী ছাড়া আমার জীবন অসম্পূর্ণ। তাছাড়া আমি না এলে একজন মাত্র শিক্ষক নিয়ে স্কুল চলবে না। এই ভেবেই প্রতিদিন স্কুলে আসছি। এটা খুব একটা বড় বিষয় নয়।” বাসিন্দারা জানিয়েছেন, স্কুলে মোট চার জন শিক্ষক থাকলেও বছরদুয়েক আগে কেউ বদলি হয়ে যান, কেউ বা চাকরি ছেড়ে দেন। স্কুলের একমাত্র পার্শ্বশিক্ষিকা লক্ষী গুরুং বলেন, “আমি নিজেও এই স্কুলেরই ছাত্রী। স্যার অবসর নেওয়ার পরে আমি একা পড়াশোনা চালাতে পারতাম না। অবসরের পরেও এভাবে ভাবে কাজ না করলে স্কুলই চলত না।” ভিনসেন্টবাবুর স্কুলে আসার পথ খুব সহজ নয়। লোকনাথপুর এলাকার বাসিন্দা ভিনসেন্টবাবুর সাইকেল পথের বেশির ভাগটাই জঙ্গল। কার্তিক, রায়ডাকের বন্ধুর পথে সাইকেল চালিয়ে সঠিক সময়ে স্কুলে পৌঁছোতে সকাল ৯টার সময়ে বাড়ই থেকে রওনা দেন তিনি। তাঁর কথায়, “বাড়িতে স্ত্রী, দুই ছেলে রয়েছে। ওঁরাও আমাকে খুবই উৎসাহ যোগায়।” কুমারগ্রামের দুয়ার মণ্ডলের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক মনোজ কুমার মণ্ডল বলেন, “হিন্দি মাধ্যমের স্কুল হওয়ায় সমস্যা দেখা দিয়েছে। ভিনসেন্ট বাবু অবসর নেওয়ার পর কাজ চালিয়ে না গেলে পঠন পাঠনে সমস্যা হত। তবে কিছুদিন আগে অন্য একটি স্কুল থেকে একজন শিক্ষক পাঠানো হয়েছে। আর ভিনসেন্ট বাবুর বিষয়টি জেলাতে জানিয়েছি। তাঁর এই কাজের স্বীকৃতি দিতে তাঁকে সন্মান জানানো যায় কিনা সে বিষয়ে আলোচনা করব।” ওই এলাকার শিক্ষাবন্ধু পদে কাজে করা শ্যামলী দাস বলেন, “আগে তিনি যে ভাবে কাজ করতেন অবসর নেওয়ার পরেও একই ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।” কুমারগ্রামের বিডিও শিলাদিত্য চক্রবর্তী বলেন, “ব্লকে একমাত্র শিক্ষক যিনি অবসর নেওয়ার পরেও বিনা পারিশ্রমিকে শিক্ষকতার কাজ করে যাচ্ছেন। এমন ঘটনা বিরল। আমি নিজে স্কুলে যাব।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.