পাকড়াও তিন জন
ফোনের ভুলে অপহরণের শিকার বদল
কটা ফোনই কাল হল!
খবরের কাগজে একটি বিজ্ঞাপন দেখে বিজ্ঞাপনদাতা ধনী এক ব্যক্তিকে অপহরণ করার জবরদস্ত ছক কষেছিল তিন অপহরণকারী। কথা ছিল, ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাঁকে ফোন করা হবে। ফোন ধরলেই তাঁকে চিনে ফেলবে তারা। সেই ফোনও করা হয়েছিল। কিন্তু ঠিক সেই সময়েই ফোন বেজে উঠল অন্য এক জনের। তাঁকেই ওই ধনী ব্যক্তি ভেবে গাড়িতে তুলে নিয়ে গেল অপহরণকারীরা।
কমেডি সিনেমার দৃশ্য নয়। ঘোর বাস্তব। রবিবার বাইপাসে ঠিক এ ভাবেই অপহরণকারীদের কবলে পড়েছিলেন এক যুবক। সিনেমার মতো মজাদার সমাপ্তি ঘটেনি অবশ্য। শিয়ালদহ এলাকার একটি হোটেল থেকে গ্রেফতারের পরে তিন অপহরণকারী সৌগত ঘোষ, সনাতন হালদার এবং সৌরভ দে এখন শ্রীঘরে। উদ্ধার করা হয়েছে অপহৃত যুবককেও। উত্তরপাড়ার বাসিন্দা ওই যুবকের নাম মানস বিশ্বাস। পুলিশ সূত্রের খবর, দিন কয়েক আগে সংবাদপত্রে ‘কিডনি চাই’ আবেদন করে একটি বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছিল। বিজ্ঞাপনদাতার একটি ফোন নম্বর দেওয়া ছিল তাতে। ওই বিজ্ঞাপন দেখে অপহরণকারীদের মনে হয়, বিজ্ঞাপনদাতা যথেষ্ট ধনী। এর পরেই ছক কষে বিজ্ঞাপনে দেওয়া নম্বরে ফোন করে তাঁকে কিডনি জোগাড় করে দেওয়ার টোপ দেয় অপহরণকারীরা। বলা হয়, রবিবার রাত ন’টা নাগাদ ই এম বাইপাস সংলগ্ন হাইল্যান্ড পার্কের সামনে আসতে। কিন্তু কী করে বিজ্ঞাপনদাতাকে চিনবে অপহরণকারীরা? বলা হয়, ঘটনাস্থলে পৌঁছে বিজ্ঞাপনে দেওয়া নম্বরে ফোন করা হবে। ফোন বেজে উঠলেই চেনা যাবে বিজ্ঞাপনদাতাকে।
এ পর্যন্ত সব কিছু পরিকল্পনা ঠিকঠাকই ছিল। কিন্তু বিপত্তি বাধল ওই ফোন করা নিয়েই। তদন্তকারীদের দাবি, অপহরণকারীরা সময়মতোই হাইল্যান্ড পার্কে পৌঁছয়। জায়গাটা একটু ফাঁকা হতেই ফোন করা হয় বিজ্ঞাপনদাতা সেই ব্যক্তির নম্বরে। লালবাজারের এক কর্তা বলেন, “টানটান থ্রিলার গল্পটা কমেডিতে বদলে যায় ওই সময়েই।”
কী রকম?
পুলিশের দাবি, যে সময়ে বিজ্ঞাপনদাতাকে ফোন করা হয়, ঠিক তখনই ওখানে হাজির থাকা অন্য এক যুবকের ফোনও বেজে ওঠে। সেই যুবককেই বিজ্ঞাপনদাতা ধনী ব্যক্তি বলে ভেবে নেয় অপহরণকারীরা। কিছু বোঝার আগেই জোর করে তাঁকে ট্যাক্সিতে তুলে নেওয়া হয়!
ট্যাক্সিতে তোলার সময়ে অভিযুক্তেরা নিজেদের পুলিশ বলে পরিচয় দিয়েছিল বলে তদন্তকারীদের জানিয়েছেন মানস। তাঁর অভিযোগ, কিছু বোঝার আগেই তাঁকে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া হয় বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিটের একটি লজে। সেখানেই মানস নিজের পরিচয় জানান অপহরণকারীদের। তারা বুঝতে পারে ভুল লোককে তুলে আনা হয়েছে।
অভিযুক্তদের জেরা করে পুলিশ জেনেছে, মানস নিতান্তই ছাপোষা মানুষ। এক আইনজীবীর দফতরে কাজ করেন তিনি। মোটা অঙ্কের মুক্তিপণ দেওয়ার মতো আর্থিক অবস্থা নেই তাঁর পরিবারের। কিন্তু একেবারে খালি হাতে না ফিরে মানসের পরিবারের কাছ থেকেই সামান্য পরিমাণ টাকা হাতানোর পরিকল্পনা করে দুষ্কৃতীরা। পুলিশ জানিয়েছে, দুষ্কৃতীদের নির্দেশ মেনেই মানস মুক্তিপণের কথা জানিয়ে সোমবার সকালে ফোন করেন তাঁর নিয়োগকর্তা আইনজীবীকে। মুক্তিপণ বাবদ ৩০ হাজার টাকা অপহরণকারীদের দিতে বলেন তিনি। ওই আইনজীবী এর পরে বিষয়টি জানান পুলিশকে।
পুলিশ সূত্রের খবর, আইনজীবীর কাছ থেকে ফোন নম্বর নিয়ে তার টাওয়ারের অবস্থান বার করেন গোয়েন্দারা। তা খতিয়ে দেখে লজটি চিহ্নিত করা হয়। সেখানেই হানা দিয়ে ধরা হয় অপহরণকারীদের। সোমবার ধৃতদের আদালতে হাজির করানো হলে বিচারক তাদের ১৭ অগস্ট পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.