চুরির টাকায় সমাজসেবা, চোখ কপালে পুলিশেরও
ছরে দু’বার বস্ত্র বিতরণ। তার উপরে টুকটাক দরিদ্র নারায়ণ সেবা তো লেগেই আছে। কেউ চিকিৎসার জন্য, কেউ আবার মেয়ের বিয়ের খরচ চেয়ে দরজায় দাঁড়ালে খালি হাতে ফিরতে হয়নি কখনও। গত কয়েক বছরে পাড়ার দুর্গাপুজোয় ‘চার চাঁদ’ লেগে গিয়েছিল শরৎবাবুর দিলখোলা দানধ্যানে। এলাকায় কান পাতলেই তাঁর সম্পর্কে শোনা যায়, ‘উনি তো আমাদের গৌরী সেন।’
এ হেন মানুষটির বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগ ওঠায় তাই পুলিশকেও যথেষ্ট সতর্ক ভাবে এগোতে হয়েছে। শেষমেশ তদন্তকারী অফিসারেরা নিশ্চিত হন, কল্যাণী এবং সংলগ্ন এলাকার বেশ কিছু ব্যাঙ্ক এবং বাড়িতে চুরির ঘটনায় জড়িত বছর চল্লিশের শরৎ মণ্ডল ও তার দলবল। শুক্রবার জাল টাকা-সহ তাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
ধৃত শরৎ মণ্ডল
তদন্তকারী অফিসারদের দাবি, গত কয়েক বছর ধরে ব্যাঙ্ক-সহ অসংখ্য বাড়িতে চুরির কথা স্বীকার করেছে শরৎ। সেই টাকাতেই দানধ্যান করতেন বলে সে জানিয়েছে পুলিশকে। যদিও শুধুমাত্র চুরির টাকায় এই বিপুল খরচ সামলানো সম্ভব কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে পুলিশের একাংশের মধ্যে। জাল টাকা-সহ আরও কোনও বেআইনি কারবার আছে কিনা ওই ব্যক্তির তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। শনিবার কল্যাণী আদালতের বিচারক তাকে ১২ দিন পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।
গত কয়েক বছর ধরেই চোরের জ্বালায় অতিষ্ঠ কল্যাণী পুরসভা ও সংলগ্ন এলাকার মানুষ। কখনও বাড়ির আলমারি সাফ করে দিচ্ছে চোরের দল। কখনও ব্যাঙ্কের ভল্টটাই খুলে নিয়ে চলে যাচ্ছে। ব্যাঙ্কে চুরি করতে এসে কর্তব্যরত নিরাপত্তা রক্ষীর অসতর্কতার সুযোগে তাঁর বন্দুকটিও বগলদাবা করেছে চোরেরা, এমন ঘটনাও ঘটেছে। সব মিলিয়ে ব্যতিব্যস্ত পুলিশ। সিসি টিভির ফুটেজ থেকেও রহস্য ভেদ হয়নি। কারণ, পুলিশের সন্দেহের তালিকায় থাকা দুষ্কৃতীদের কারও সঙ্গে মুখের মিল পাওয়া যায়নি চোরেদের।
তদন্তকারী অফিসারদের কাছে একটাই সূত্র ছিল। বিভিন্ন ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হওয়া স্ক্রু ড্রাইভার। যা থেকে পুলিশ অনুমান করে, সমস্ত ঘটনার পিছনে কাজ করছে একটাই মাথা। সেই মাথার সন্ধানেই মাথা ঘামাতে শুরু করে পুলিশ।
ইঙ্গিতটা এক রকম আকাশ থেকেই পড়ে।
মাস দেড়েক আগে অন্য একটি ঘটনায় এক দুষ্কৃতীকে জেরা করতে গিয়ে পুলিশ জানতে পারে শরতের নাম। যদিও বিশেষ কিছু তথ্য মেলেনি। তবু তারই ভরসায় শরতের হাল-হকিকত খোঁজ করতে গিয়ে পুলিশের মাথায় হাত। অফিসারদের কারও কারও মনে হয়েছিল, নিশ্চয়ই কোনও ভুল হচ্ছে। কারণ, কল্যাণী শহরের দক্ষিণ চাঁদামারি এলাকায় শরতের প্রচুর নামডাক। প্রশংসায় পঞ্চমুখ সকলে। তার দান-খয়রাতির কথা ফিরছে লোকের মুখে মুখে। জানা যায়, বছর পাঁচেক ধরে এলাকায় দুর্গাপুজোর জাঁক বেড়েছে শরতের টাকাতেই।
এত টাকা আসছে কোথা থেকে? এলাকার লোকে বলে, মুম্বইয়ে কাপড়ের ব্যবসা আছে শরতের। গত কয়েক বছরে সেই ব্যবসাই ফুলেফেঁপে উঠেছে। দক্ষিণ চাঁদামারিতে প্রাসাদোপম বাড়িও বানিয়েছে শরৎ। তবে থাকা আর হয় কই। ব্যস্ত ব্যবসায়ী কাজের তাগিদে বেশির ভাগ সময়টাই কাটায় মুম্বইয়ে। পুজোর চার দিন অবশ্য পাড়া ছেড়ে নড়ে না। স্ত্রী, শ্যালিকা ও পেল্লায় অ্যালসেসিয়ান কুকুর নিয়ে তখন তার ভরা সংসার।
“শরৎ এলাকায় যে ভাবে পরিচিত, তাতে তাকে চোর হিসাবে ভাবাটা পুলিশের পক্ষে প্রথম দিকে কার্যত অসম্ভব ছিল’’ বলছেন কল্যাণীর এসডিপিও চন্দ্রশেখর বর্ধনও। তিনি জানান, শুধুমাত্র সন্দেহেরবশেই লাগাতার নজরদারি শুরু করা হয়। পুলিশ জানায়, শুক্রবার রাতে কল্যাণী ২ নম্বর বাজারের কাছে শরৎকে জাল নোট-সহ হাতেনাতে ধরা হয়। পরে সিসি টিভির ফুটেজ মিলিয়ে দেখা যায়, চোরের দলের পাণ্ডা সে-ই।
কিন্তু স্ক্রু ড্রাইভার রহস্য কী ভেদ হল? পুলিশের দাবি, জিনিসপত্র হাতানোর পরে স্ক্রু ড্রাইভার ফেলে যাওয়াটা নিছকই ভুলবশত ঘটেছিল বলে জেরায় জানিয়েছে শরৎ।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.