জামাইয়ের জমি-রিপোর্টে ফের অস্বস্তি সনিয়ার
নিয়া গাঁধীর জামাই রবার্ট বঢড়ার বিরুদ্ধে জমি কেলেঙ্কারির অভিযোগের ভূত ফের চেপে বসল কংগ্রেসের ঘাড়ে। এমনিতেই এখন সংসদের বাদল অধিবেশন চলছে। যেখানে পাকিস্তান-তেলঙ্গানা-সহ একাধিক বিষয়ে বিরোধীদের তোপের মুখে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে কংগ্রেসের। তার মধ্যেই সনিয়ার জামাইয়ের বিরুদ্ধে জমি কেলেঙ্কারির অভিযোগ নিয়ে হরিয়ানার আইএএস অফিসার অশোক খেমকার একটি রিপোর্ট ফাঁস হয়ে গিয়েছে। রিপোর্টে ওই আমলা অভিযোগ করেছেন, ভুয়ো নথি দেখিয়ে রবার্টের সংস্থা গুড়গাঁওয়ের শিকোহপুরে প্রথমে সাড়ে তিন একর জমি অধিগ্রহণ করে। পরে সেই জমি ডিএলএফ-কে হস্তান্তর করে রাতারাতি ৫৮ কোটি টাকা মুনাফা করেন রবার্ট।
গত বছর অক্টোবরে রবার্ট বঢড়া ও ডিএলএফের মধ্যে একটি জমি বিক্রির মিউটেশন খারিজ করে দিয়েছিলেন হরিয়ানার এই আমলা। তখন হরিয়ানার ভূমি রাজস্ব দফতরের ইনস্পেক্টর জেনারেল ছিলেন খেমকা। মিউটেশন খারিজ করা ছাড়াও রাজ্য জুড়ে গত কয়েক বছরে রবার্ট বঢড়া যে সব জমি কেনা-বেচা করেছেন, সে সব নিয়ে তদন্তেরও নির্দেশ তিনি। স্বাভাবিক ভাবেই ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয়ে যায়। এবং ঘটনার তিন দিনের মধ্যে ভূমি রাজস্ব দফতর থেকে খেমকাকে সরিয়ে দেয় ভূপেন্দ্র সিংহ হুডা-র সরকার। একই সঙ্গে তারা একটি পৃথক তদন্তেরও নির্দেশ দেয়।
রাজ্যের ওই তদন্তে ক্লিন চিট দেওয়া হয়েছে রবার্টকে। কিন্তু সেই তদন্ত কমিটির কাছে অশোক খেমকা যে একশো পৃষ্ঠার রিপোর্ট পেশ করেছিলেন, সেটিই এখন ফাঁস হয়ে গিয়েছে। তাতে দেখা গিয়েছে, বিভিন্ন জমি চুক্তি ধরে ধরে রবার্ট বঢড়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়েছেন তিনি। রিপোর্টে এ-ও বলেছেন, সনিয়া গাঁধীর জামাই হওয়ার দৌলতেই হরিয়ানায় বাণিজ্যিক ‘লাইসেন্স’ হস্তান্তর করে কোটি কোটি টাকা কামিয়েছেন রবার্ট। ওই আমলার আরও অভিযোগ, ২০০৫ থেকে ২০১২, এই আট বছরে হুডা সরকারের আমলে হরিয়ানায় জমির ‘লাইসেন্স’ বাবদ প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ কোটি টাকার কেলেঙ্কারি হয়েছে।
খেমকার এ সব অভিযোগ অবশ্য মানতে চাননি হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী তথা কংগ্রেস নেতা ভূপেন্দ্র সিংহ হুডা। তাঁর কথায়, “সব নিয়ম মেনেই জমি ও লাইসেন্স হস্তান্তর হয়েছে। এ জন্য সরকারের কোনও আর্থিক ক্ষতিও হয়নি।” বিষয়টি নিয়ে আজ প্রায় সারা দিনই মুখে কুলুপ এঁটেছিলেন কংগ্রেস মুখপাত্ররা। তাঁদের বক্তব্য, এ ব্যাপারে রবার্ট ও তাঁর আইনজীবীরাই জবাব দেবেন। মিম আফজল আবার জানান, এই বিতর্কে বিজেপির হাত রয়েছে।
মুখপাত্ররা যা-ই বলুন, রবার্টের জমি-প্রশ্ন ফের সামনে উঠে আসায় নতুন করে দুশ্চিন্তায় কংগ্রেস। সোমবার সংসদের অধিবেশনে এ নিয়ে বিরোধীরা কতটা সরব হবেন, তা নিয়ে চিন্তায় তাঁরা। বিরোধীরা বিষয়টি নিয়ে মাঠে নামলে শুধু যে সরকারের বিভিন্ন বিল পাশে সমস্যা হবে, তা নয়। প্রবল অস্বস্তিতে পড়বেন সনিয়া গাঁধীও।
বিজেপি অবশ্য এখনও বিষয়টি নিয়ে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে সে ভাবে মাঠে নামেনি। দলের নেতা প্রকাশ জাভরেকর কেবল বিষয়টি নিয়ে যথাযথ তদন্তের দাবি করেছেন। বিজেপি সূত্রে বলা হয়েছে, সোমবার সংসদীয় দলের বৈঠকে এ ব্যাপারে ভবিষ্যৎ কৌশল স্থির হবে। বিজেপি মুখপাত্র বলবীর পুঞ্জ বলেন, “এটা সনিয়া গাঁধীরও পরীক্ষা।” তাঁর বক্তব্য, দুর্গাশক্তি নাগপাল প্রশ্নে সনিয়া যে ভাবে রুখে দাঁড়িয়েছেন, সে ভাবেই অশোক খেমকার পাশেও তিনি দাঁড়াবেন বলে আশা করে বিজেপি।
হরিয়ানার তদন্ত কমিটির কাছে অশোক খেমকা যে রিপোর্ট দিয়েছেন, তাতে জানিয়েছেন, রবার্ট বঢড়ার সংস্থা ‘স্কাইলাইট হসপিটালিটি’ প্রথমে সাড়ে তিন একর জমি কেনে। হরিয়ানা সরকার সেই জমি বাণিজ্যিক ভাবে ব্যবহারের জন্য ‘বিদ্যুৎগতিতে’ লাইসেন্স পাইয়ে দেয় রবার্টকে। পরে সেই লাইসেন্স ডিএলএফ-কে হস্তান্তরের জন্যও সরকার অনুমতি দেয়। সেই বাণিজ্যিক লাইসেন্স হস্তান্তর করেই রবার্টের সংস্থা ৫৮ কোটি টাকা পেয়েছে বলে দাবি তাঁর। রাজস্থানেও বঢড়ার বিরুদ্ধে জমি কেলেঙ্কারির অভিযোগ উঠেছে। সেখানেও রাজ্যে কংগ্রেস সরকারের উপর প্রভাব খাটিয়ে বহু জমি অধিগ্রহণ করার অভিযোগ রবার্টের সংস্থার বিরুদ্ধে।
খেমকার রিপোর্ট ফাঁস যে রবার্ট ও গাঁধী পরিবারের সমস্যা আরও বাড়াবে, সন্দেহ নেই। একই সঙ্গে সমস্যা বাড়ল ভূপেন্দ্র সিংহ হুডারও। কেন না হরিয়ানার রাজনীতিতে বিষয়টি বড় আকার নেবে বলেই মনে করছেন অনেকে। ইতিমধ্যেই এ নিয়ে আন্দোলনে নামার প্রস্তুতি নিয়েছে রাজ্যে বিরোধী দল আইএনএলডি নেতা অজয় চৌটালা। অন্য বিরোধী দলগুলিও বিষয়টি নিয়ে কংগ্রেসকে চাপে ফেলার প্রস্তুতি নিচ্ছে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.