উত্তর কলকাতা: পাইকপাড়া, ব্যারাকপুর
কামারহাটি
বেদখল আবাসন
রকারি আবাসন। নিয়ম মেনে আবেদন করলে ফ্ল্যাট ভাড়া মেলে। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে, এই আবাসনের আবাসিকদের একাংশ সে নিয়ম মানেননি। আবাসন দফতরকে না জানিয়ে প্রকৃত ভাড়াটেকে চড়া ভাড়া বা এককালীন মোটা টাকা দিয়ে তাঁরা এ সব ফ্ল্যাটে বাস করছেন। ফলে নিয়ম মেনে আবেদন করেও অনেকে এই আবাসনে ফ্ল্যাট পাচ্ছেন না। এই অবস্থা কামারহাটি পুর এলাকায় চারটি সরকারি শিল্প আবাসনের।
কামারহাটি পুরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ডের রথতলায় শিল্প আবাসনের ১০টি ব্লকে রয়েছে ৮০টি ফ্ল্যাট। ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের ৯ নম্বর বিটি রোডে সরস্বতী প্রেস লাগোয়া ৪৭টি ব্লকে টাইপ-১ ও টাইপ-২ মিলিয়ে রয়েছে ৬৪০টি ফ্ল্যাট। ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের নন্দননগরে ২২টি ব্লকে ১৭৬টি ফ্ল্যাট এবং এই ওয়ার্ডেরই বাদামতলায় ২০টি ব্লকে রয়েছে মোট ১৬০টি ফ্ল্যাট।
বিধান রায় মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময়ে মোহিনী মিল, টেক্সম্যাকো, সরস্বতী প্রেস, বেনী ইঞ্জিনিয়ারিং, সিএসটিসি-র মতো নানা সরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিল্প শ্রমিকদের অল্প ভাড়ায় থাকার সুবিধার্থে আবাসনগুলি তৈরি হয়েছিল। এখন অবশ্য শিল্প শ্রমিক ছাড়া সাধারণ মানুষও নিয়ম মেনে আবেদন করলে এখানে ফ্ল্যাট ভাড়া পেতে পারেন।
ফ্ল্যাট বরাদ্দ করেন আবাসন দফতরের এস্টেট ম্যানেজার। ভাড়া ১২০ থেকে ৩৫৬ টাকার মধ্যে। ভাড়া সরকারকেই দিতে হয়। রক্ষণাবেক্ষণ সরকারই করে। কোনও কারণে ফ্ল্যাট ছেড়ে দিলে তা আবাসন দফতরকে জানাতে হয়। আবাসিকদের একাংশের অভিযোগ, কেউ কেউ ফ্ল্যাট ছাড়ার সময়ে তা আবাসন দফতরকে না জানিয়ে বাজার দরে ভাড়া দিয়ে দিয়েছেন। কেউ আবার এককালীন মোটা টাকার বিনিময়ে তা হস্তান্তর করেছেন বলেও অভিযোগ। কয়েক জন আবার এ ভাবে একাধিক ফ্ল্যাট দখল করে রেখেছেন। দীর্ঘ দিন ধরে এই অবৈধ হস্তান্তর চলছে।
অভিযোগ উঠেছে, এই আবাসনগুলির বহু বাসিন্দার পরিচয় এবং পেশা সম্পর্কে সরকারের কাছে তথ্য নেই। এখানকার আবাসিকদের বিভিন্ন সংগঠনের কর্তাব্যক্তিরাও এ ব্যাপারে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে নারাজ। আবাসনমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস অবশ্য বলেন, “এ ব্যাপারে অভিযোগ পেয়েছি। আমরা শীঘ্রই কঠোর ব্যবস্থা নেব।”
দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থার কর্মী বিকাশ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “শিল্প আবাসনে ফ্ল্যাটের জন্য বেশ কয়েক বার আবেদন করেছি। এখনও পাইনি। ভাড়া বাড়িতে থাকি। স্বল্প ভাড়ার এই ফ্ল্যাট পেলে সুবিধা হয়।” আবাসন দফতর সূত্রে খবর, এ ধরনের কম ভাড়ার আবাসনগুলি নিয়ে এ রকমের সমস্যা অন্যত্রও রয়েছে। ভাড়া বাকি থাকলে ফ্ল্যাটে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু এই আবাসনগুলিতে ভাড়া বাকির অভিযোগ নেই। আবাসন দফতরের এস্টেট ম্যানেজার দিলীপকুমার হালদার বলেন, “সরকারের এই মুহূর্তে উচ্ছেদের পরিকল্পনা নেই। সরকারি নির্দেশ ছাড়া উচ্ছেদ করা যায় না। অভিযোগ পেলে নোটিস পাঠানো হবে।” স্থানীয় বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী মদন মিত্রের কথায়: “এ ভাবে যাঁরা ওই সব ফ্ল্যাটে থাকছেন এবং যাঁরা সেগুলি রাখছেন, উভয়েই বেআইনি কাজ করছেন। অভিযোগ পেলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.