মারিবার তরে
...পাখা ওড়ে
রাত ৯টা। আপ হাওড়া-পাঁশকুড়া লোকাল সবে সাঁতরাগাছি ছেড়ে মৌড়িগ্রামের দিকে রওনা দিয়েছে। হঠাৎ এক কামরায় মহিলার আর্ত চিৎকার। এক যুবতী তো চলন্ত ট্রেন থেকে লাফিয়ে নামতে পারলে যেন বেঁচে যান। আরও কিছু মহিলা এ দিক-ও দিক ছোটাছুটি শুরু করে দিয়েছেন। পুরুষ সহযাত্রীরা আস্তিন গুটিয়ে এগিয়ে এলেন। কিন্তু কয়েক মিনিটেই তাঁদের অবস্থা ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি!
খলনায়কগুলি যে আরশোলা!
প্রায় ১৫টি খলনায়কের দল এ ভাবেই মিনিট তিনেকের তাণ্ডবে আতঙ্ক ছড়িয়ে পাখা উড়িয়ে চলে গেল। যাত্রীদের অভিযোগ, এ ঘটনা প্রায়ই ঘটে। রাতের ট্রেন তো বটেই, দিনের লোকালেও মাঝেমধ্যে আরশোলার এই ভয়ঙ্কর উৎপাত দেখা যায়। কখনও কোনও যাত্রীর জামার ভিতর, আবার কখনও খাবারে আরশোলা এসে বসে। বাউড়িয়ার বাসিন্দা নিত্যযাত্রী সুমনা মণ্ডল বলেন, “আমি আমার বাচ্চাকে কোলে নিয়ে বসে থাকার সময়ে হঠাৎই আমার গায়ে কিছু একটা এসে বসেছে বুঝতে পারি। কিন্তু পরেই যখন বুঝি আরশোলা, আমি এমন চমকে উঠি যে বাচ্চাটা পড়ে যাচ্ছিল। ট্রেনেও এ ভাবে আরশোলার উৎপাত হতে পারে!”
অলংকরণ: দেবাশীষ দেব
আর এক যাত্রী রাজেশ্বর মিত্রের কথায়: “১৭ জুলাইয়ের রাতের আপ খড়্গপুর লোকালে (হাওড়া থেকে ছাড়ে রাত ৯টা ৪৫ নাগাদ) আরশোলার উৎপাত হয়েছিল। বেশ কয়েকটি গায়েমুখে এসেও বসছিল। বাধ্য হয়ে রামরাজাতলায় নেমে অন্য কামরায় উঠি।” সকালেও এই সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন নলপুরের বাসিন্দা প্রসেনজিৎ দাস। বললেন, “সকালের ডাউন হাওড়া-মেদিনীপুর লোকালে প্রায়ই আরশোলা দেখতে পাওয়া যায়। ট্রেনে খাবার খেলে সজাগ থাকতে হয়।” সমস্যায় পড়েছেন খাবার বিক্রি করার হকারেরা। এক হকার তাপস নাথ বলেন, “আমি ঘুগনি বিক্রি করি। মাঝেমধ্যেই যে ভাবে আরশোলা উড়ে বেড়ায় তা খাবারে পড়লে আর বিক্রি করা যাবে না। তাই সব সময় খদ্দেরের দিকে লক্ষ্য দেওয়ার থেকে আরশোলার দিকে লক্ষ্য বেশি রাখতে হয়।” যাত্রীরা জানিয়েছেন, লোকাল ট্রেনগুলিতে বসার জায়গার নীচে জঞ্জাল জমে থাকে। ফলে আরশোলার উৎপাত বাড়ছে।
জিআরপি-আরপিএফ তো লাগে না, স্রেফ ঝাড়ু মেরে ঝেঁটিয়ে বিদেয় করার লোক হলেই তো হয়। তবু কেন বাগে আনা যায় না এই আদিমতম খলনায়কদের? রেলসূত্রের খবর, দিনে দু’বার প্রতিটি ট্রেন পরিষ্কার করার কথা। কিন্তু সব ক্ষেত্রে তা করা হয় না। এ ছাড়া, অনেক ক্ষেত্রে ট্রেনের কামরায় বিভিন্ন ভাঙা অংশে আরশোলা বাসা বাঁধে। সেখানে নিয়মিত কীটনাশকও স্প্রে করা হয় না।
দক্ষিণ-পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সৌমিত্র মজুমদার বলেন, “প্রতি দিন কত বার লোকাল ট্রেন পরিষ্কার করতে হবে সে ব্যাপারে নির্দিষ্ট কোনও নিয়ম নেই। তবে যাই হোক ট্রেন পরিষ্কার থাকাটা জরুরি। আমি এই বিষয়টা জানতাম না। খোঁজ নিয়ে দেখে দ্রুত সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছি।”




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.