সম্পাদকীয় ২...
কষ্ট করার পরামর্শ
বাস-মিনিবাসের ভাড়ায় স্থিতাবস্থা বজায় রাখার আবেদন লইয়া পশ্চিমবঙ্গ সরকার পুনরায় পরিবহণ মালিকদের মুখোমুখি। ভাড়া না-বাড়াইতে দেওয়ার ফলে রাজ্যের অন্তত পঞ্চাশ শতাংশ বেসরকারি বাস ‘বসিয়া গিয়াছে’। যাঁহাদের বাসে চড়িতে হয়, বাসে চড়িয়াই কর্মস্থলে বা গন্তব্যে যাইতে হয়, তাঁহারা নিজ অভিজ্ঞতায় ইহা জানেন। তবু রাজ্য সরকারের জেদ, কিছুতেই ভাড়া বাড়াইতে দিবেন না। মাসে মাসে বাস চালাইবার জ্বালানির দাম বাড়িবে, বাসের যন্ত্রাংশের দাম বাড়িবে, এমনকী বাস-কর্মীদের মাহিনাও মাঝে-মধ্যেই বাড়াইতে হইবে। অর্থাৎ বাস চালাইবার যাবতীয় খরচ নিয়মিত বাড়িয়া চলিবে, সেই বৃদ্ধিতে রাজ্য সরকার কোনও নিয়ন্ত্রণ আরোপ করিতে আগ্রহী নয়। কিন্তু তবু এক পয়সাও ভাড়া সরকার বাড়াইতে দিবে না।
কেন? না, তাহা হইলে যাত্রিসাধারণের ভীষণ কষ্ট হইবে। মা-মাটি-মানুষের সরকার মানুষের কষ্ট দেখিতে পারিবে না। মানুষ চল্লিশ টাকা কিলো দরে পেঁয়াজ কিনিতেছে, পনেরো টাকা দরে আলু, অন্যান্য সব্জিও অগ্নিমূল্য, মাছের কথা ছাড়িয়াই দেওয়া গেল। মাদার ডেয়ারি সহ দুধের দাম সরকার বাড়াইতে দিয়াছে, সিইএসসিকে বিদ্যুতের দামও বিনা বাক্যব্যয়ে বাড়াইতে দিয়াছে, বাড়াইয়াছে ভোজ্য তেল এবং পাঁউরুটির দামও। এই সকল অত্যাবশ্যক নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর দর বাড়িতে না দিবার জন্য সরকারের কোনও মাথাব্যথা জনসাধারণ দেখেন নাই। (মাঝেমধ্যে পুরসভার বিপণি হইতে মুরগির মাংস বিক্রয়ের সরকারি তামাশা হইতেছে বটে। মহাকরণে কিংবা পুরসভায় মৎস্যপ্রিয় বঙ্গীয় সরকারি করণিকদের জন্য ‘ন্যায্য মূল্যে’ পোনা মাছ বিক্রির রঙ্গও প্রত্যক্ষ করা যাইতেছে।) সকল সামগ্রীর দরই মা-মাটি-মানুষের সরকার বাড়াইতে দিতেছেন। কেবল বাসের ভাড়া বৃদ্ধিতে তাঁহাদের যত আপত্তি। কারণ বর্ধিত দুই-চারি টাকা ভাড়া দিতে মানুষের বিষম কষ্ট হইবে, যাহা দুধ, পাঁউরুটি, আলু-পেঁয়াজ, মাছ-মাংস, বিদ্যুৎ কিনিবার বাড়তি দাম দিতে গেলে হইবে না! অথচ মজার ব্যাপার হইল, জনসাধারণ বর্ধিত ভাড়া দিতে রাজি। কিছু কিছু রুটে তাঁহারা নিজেরাই বাস চালু রাখিবার তাগিদে স্বতঃপ্রণোদিত হইয়া বর্ধিত ভাড়া দিতেছেন। তাঁহাদের নিত্য কর্মস্থলে যাইতে হইবে, ছেলেমেয়েদের স্কুল-কলেজে পৌঁছাইতে হইবে। পরিবহণ মন্ত্রী কিংবা তাঁহার নেত্রীর জেদ তাঁহাদের কোন কাজে আসিবে?
এই সরকারি জেদের পরিণামে কলিকাতা ও রাজ্যের জন-পরিবহণ প্রায় উঠিয়া যাইবার পথে। ‘ন্যাশনাল আর্বান রিনিউয়াল মিশন’-এর কেন্দ্রীয় প্রকল্পে নূতন বাস আসিয়া বসিয়া আছে, বাস-মালিকরা কিনিতে আগ্রহী নহেন। কারণ এই শহরের পথে লোকসানে বাস চালাইবার অভিপ্রায় তাঁহাদের নাই। মরিয়া যাত্রীরা বাসের অভাবে অটো-রিকশর যথেচ্ছাচার শিরোধার্য করিতেছেন। পরিবহণ মন্ত্রী বেআইনি অটোর রমরমা দেখিয়াও চোখ বুজিয়া থাকিতে মনস্থ করিয়াছেন। মন্ত্রী-মহোদয় বাস-মালিকদের ‘কষ্ট করিয়া’ বাস চালাইতে বলিয়াছেন, কারণ সরকারি ঋণের বিপুল বোঝা বহিতে গিয়া তাঁহারা নিজেরাও নাকি ভয়ানক কষ্ট করিতেছেন। মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন। অচিরেই হয়তো মা-মাটি-মানুষের জন্য কে কত কষ্ট করিতে পারেন, তাহার সরকারি প্রতিযোগিতা আয়োজিত হইবে, মুখ্যমন্ত্রী বিজয়ী বাস-মালিকদের ‘কষ্ট-শিরোমণি’ পুরস্কারে ভূষিত করিবেন। বাস-মালিকরা কি ইহাতেও প্রলুব্ধ হইবেন না?


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.