ক্ষোভ সামলাতে কর্মীদের খিচুড়ি খাওয়াচ্ছে মোর্চা

সারা দিন মিছিল তো হল। রাতে বাড়ি ফিরে পেটে কী পড়বে? চালডাল-আনাজপাতি সবই বাড়ন্ত। দিনে-রাতে শুধু স্কোয়াশের সব্জি। বড়জোর বাঁধাকপির তরকারি। আটা জুটলে রুটি, না হলে মোটা চালের ভাত।
দার্জিলিঙের আমজনতার দুর্দশার কথা ছেড়ে দিন, আন্দোলন করতে গিয়ে পেটে টান পড়ায় গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সমর্থকেরাও ক্রমশ অধৈর্য হয়ে উঠছেন। দলের অন্দরের খবর অন্তত তেমনই। দিনভর গলা ফাটিয়ে রাতে বাড়ি ফিরে ভরপেট খাওয়া না হলে পরের দিন বিক্ষোভ-মিছিলের উদ্যম কোথা থেকে আসবে, সেই প্রশ্ন তুলছেন তাঁরা। কার্শিয়াঙের একাধিক মোর্চা নেতা নাম গোপন রাখার শর্তে জানালেন, হেঁশেলের রসদ জোগাতে না পারলে দলের মধ্যেই বিক্ষোভের আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন না তাঁরা।
পুলিশের একটি সূত্রের দাবি, বুধবার রাতে দার্জিলিং সদর থানার কাছে একটি বাড়িতে লুঠ করতে গিয়ে এক রাউন্ড গুলি চালায় তিন যুবক। সঙ্গে-সঙ্গেই তাদের গ্রেফতার করা হয়। গুলিতে অবশ্য কেউ হতাহত হননি। সূত্রটির দাবি, ওই তিন জন মাদকাসক্ত। তবে পুলিশের কাছে তারা বলেছে, বন্ধের জন্য তাদের ঘরে টাকা-খাবার কিছুই নেই। তাই তারা লুঠ করতে এসেছিল। দার্জিলিঙের পুলিশ সুপার কুণাল অগ্রবাল বলেন, “তিন জনকে ধরেছি। বড় কিছু হয়নি। তদন্ত চলছে।”
এই অবস্থায় বুধবার দার্জিলিঙে দলীয় অফিসে বসে মোর্চা সভাপতি বিমল গুরুঙ্গকে বলতে হয়েছে, “পাহাড়ের কারও ঘরে খাবার ফুরিয়ে গেলে আমাকে জানান। যে করেই হোক রসদের ব্যবস্থা করে দেব।” কিন্তু শুধু আশ্বাসে যে কাজ হবে না, সেটা বুঝেই পাহাড়ের তিন মহকুমার নানা এলাকায় অন্তত ১০টি যৌথ রান্নাঘর চালু করেছে মোর্চা। সেখানে দু’বেলা খিচুড়ি রান্না হচ্ছে। তার মধ্যেই দেওয়া থাকছে আলু, বাঁধাকপি, স্কোয়াশ। কোথাও আবার আচার, পাঁপড়, চাটনির ব্যবস্থাও হচ্ছে। দার্জিলিং সদরের চকবাজার, এইচ ডি লামা রোড, জজবাজার এলাকায় বন্ধ শুরুর দিন থেকেই খিচুড়ি রান্না শুরু হয়েছে। দলীয় কর্মীদের দাবি, যাঁরা রোজ বন্ধের সমর্থনে রাস্তায় নামছেন, তাঁদের খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে ওই সব জায়গায়।
মোর্চা স্বেচ্ছাসেবকদের জন্য যৌথ রান্নাঘর। বুধবার দার্জিলিঙের চকবাজারে রবিন রাইয়ের তোলা ছবি।
এইচ ডি লামা রোডের যৌথ রান্নাঘরের দায়িত্বে থাকা যুব মোর্চার নেতা নীতেশ ডার্নাল বললেন, “সকাল ৯টা থেকে রান্না শুরু। দুপুর ১টা থেকে খাওয়া। প্রতিদিন ৩০-৩৫ কেজি খিচুড়ি রান্না হচ্ছে, প্রায় তিনশো বাসিন্দাকে খাওয়ানো হচ্ছে।” যুব মোর্চার নেতা তিলক ছেত্রীর দাবি, আগে থেকে বেশি পরিমাণে চাল মজুত থাকায় এখনও সমস্যা হয়নি। যদিও নারী মোর্চারই এক নেত্রী জানালেন, ক’দিন বন্ধ হবে, সেটা আঁচ করতে না-পেরে মাত্র সাত দিনের চাল-ডাল-সব্জি কিনে রেখেছিলেন। এখন বুঝছেন, হিসেবে ভুল হয়েছিল। তবে দলের নেতারা রসদ জোগাড়ের আশ্বাস দিয়েছেন বলে জানান তিনি।
মোর্চার খিচুড়ি বাদ দিলে পাহাড়ের সারাদিনের খাদ্যতালিকা মোটামুটি এক করে দিয়েছে দু’দফায় আট দিনের বন্ধ। শীর্ষ সরকারি কর্তা থেকে নিচুতলার অস্থায়ী কর্মী, প্রায় সকলেরই রোজকার মেনু সকালে চা-বিস্কুট অথবা রুটি-স্কোয়াশের সব্জি। দুপুরে ভাত, কোনও দিন আলুর সব্জি, ডিমের ঝোল। রাতে আবার সেই রুটি আর স্কোয়াশ বা বাঁধাকপির তরকারি।
একটি সরকারি বাংলোর এক রাঁধুনির কথায়, “ডিএম-এসপি সাহেব এসেছিলেন। ভাত-ডাল-বাঁধাকপি ছাড়া কিছু দিতে পারিনি। আমরা যা খাচ্ছি, ওঁরাও তা-ই খাচ্ছেন।” এর ওপর আবার থানায় ধৃতদের সংখ্যাও বাড়ছে নিয়মিত। কাজেই তাঁদের খাবারের ব্যবস্থা রাখতে হচ্ছে। সে জন্য অনেক থানা চত্বরেও হয়েছে যৌথ রান্নাঘর। মহিলা হোমগার্ড বা অন্য পুলিশকর্মীরা চড়া দামে আনাজপাতি কিনে আনছেন। দার্জিলিঙের হরদাসহাট্টার এক প্রবীণ জানালেন, যে সব পাড়ার দোকান লুকিয়ে-চুরিয়ে খোলা হচ্ছে, সেখানেও গত তিন দিন আটা নেই। তাই ডাক্তারের পরামর্শ উপেক্ষা করে দু’বেলাই ভাত-আলুর ঝোল খাচ্ছেন।
এই রসদও তো ফুরোবে। তার পরেও যদি বন্ধ প্রত্যাহার না হয়? আর ১৫ অগস্ট যদি এক দিনের জন্য বন্ধ শিথিল হয়, তাতেও কি পর্যাপ্ত খাবারদাবার মজুত করা যাবে? প্রশ্ন জমছে পাহাড়ের আকাশে। জমছে ক্ষোভ, উদ্বেগও।

বনধে ফারাক
দার্জিলিং   শিলিগুড়ি
৫০ মোটা চাল ২৮-৩০
৬০* মুগ ডাল ৯৬
১৪০* মুসুর ডাল ৭০
৩৫ আলু ১৬
৫০ পেঁয়াজ ৩৫-৪০
১০০ টোম্যাটো ৪০
৪০ আটা ২৫
৬০* ময়দা ৩২
২০ স্কোয়াশ ১০
৬-৭ ডিম ৪.৫০
টাকা পিস
(দর প্রতি কেজি টাকায়)
* খুব কম মিলছে।
তথ্যসূত্র: পুলিশ-প্রশাসন, খুচরো ব্যবসায়ী সংগঠন



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.