ভৌমিকের আসল শক্তি সাহস
আর ম্যান ম্যানেজমেন্ট
সেটা ১৯৬৮ সাল। জব্বলপুরে ভারতসেরা হয়েছিল আমাদের জুনিয়র বেঙ্গল। সেখানে দলের একটা ছেলেকে দেখতাম ম্যাচের পর কোথায় কী ভুল হয়েছে, কী করা উচিত ছিল, পরের ম্যাচে কী করতে হবে এ রকম সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম সব বিশ্লেষণ করত আমাদের সঙ্গে। এক কথায় জমিয়ে দিত।
বছর কয়েক পর আমার সমবয়সি সেই ছেলেটাই কলকাতা ফুটবলের ক্রাউড পুলার হয়ে যায়। আমার পাশে জুনিয়র বাংলা থেকে খেলা সেই ছেলেটাই আজকের সুভাষ ভৌমিক।
মঙ্গলবার সন্ধেয় রাজ্য ক্রীড়া পর্ষদের ফুটবল অ্যাকাডেমির টিডি হিসেবে কিছু ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করার সময়ই পেলাম খবরটা। এ বারের সন্তোষ ট্রফির টেকনিক্যাল ডিরেক্টর (টিডি) সুভাষ ভৌমিক। কোচ শিশির ঘোষ।
শেষ দু’বছর সন্তোষ ট্রফি আসেনি বাংলায়। এই পরিস্থিতিতে ভৌমিকের কাঁধে দলকে ছেড়ে দেওয়াটা আইএফএ-র বিচক্ষণতার পরিচয়।
কেন? আমরা যখন সন্তোষ ট্রফি খেলতাম তখন বাংলা চ্যাম্পিয়ন না হওয়াটাই ছিল খবর। কিন্তু এখন দিনকাল বদলে গিয়েছে। জাতীয় স্তরে বাংলার সেই সম্ভ্রম আর নেই। সেটা আরও কমেছে যখন থেকে ভূমিপুত্রদের নিয়ে রাজ্য দল গড়া শুরু হয়েছে। প্রায় এক যুগ পার করে সাব্বির আলি বাংলাকে পরপর দু’বার চ্যাম্পিয়ন করেছিল। তার পর ফের আশাভঙ্গের বেদনা বইতে হচ্ছে। এ রকম পরিস্থিতি মোকাবিলা করে সাফল্য আনতে সুভাষই যে যোগ্য লোক সেটা আমার জমানার সব ফুটবলার বন্ধুই হয়তো জানে।
সাফল্য? ইস্টবেঙ্গল কোচ হিসাবে আসিয়ান কাপ কিংবা দু’বার জাতীয় লিগ জয়টা বাদ দিন। বাংলার বাইরে গিয়েও কোনও ক্লাবকে ভারতসেরা করার রেকর্ড আছে। হাতের কাছেই এ রকম একজন কোচ থাকলে তাকে হাতছাড়া করা যায় না কি? ফুটবল কোচ হিসাবে সুভাষ হচ্ছে সেই লোক যে অতীতের ফুটবলকে শ্রদ্ধা করে। বর্তমানকে বুঝতে পারে আর ভবিষ্যৎকে আগাম পড়ে ফেলার ক্ষমতা রাখে। অদম্য ইচ্ছেশক্তি। সঙ্গে দুর্জয় সাহস আর হার না মানা মনোভাব। যখন খেলত তখন বেশি বল না পেলেই আমাদের মেঠো গালমন্দ শুরু করত। আসলে ভৌমিক মস্তান ফুটবলার। সেটা কোচিং জীবনেও ওকে অন্যদের চেয়ে এগিয়ে রাখে।
ওর আরও একটা গুণ হল ফুটবলারদের সঙ্গে বন্ধুর মতো মিশে যাওয়া। ছাত্রদের মানসিক ভাবে পড়ে ফেলতে ভৌমিকের জুড়ি নেই। কারও বাবা, কারও ড্যাডি, কারও সুভাষদা। অর্থাৎ ম্যান ম্যানেজমেন্টে তুখোড়।
এখন তো সন্তোষ ট্রফিতে আই লিগের ফুটবলাররা খেলে না। তাই অনেকেই বলতে পারেন, সুভাষের কাজটা কঠিন। তাঁদের মনে করিয়ে দেব, চার্চিলে গত মরসুমে বেটো শেষের দিকে অনেক ম্যাচ খেলেনি। দুই লেবানিজ ফুটবলারও চলে গিয়েছিল। সুভাষ কিন্তু মাথা ঠোকেনি। জুনিয়রদের নিয়ে কাজ করতে ওর মধ্যে কোনও ইগো দেখিনি। আসলে সাহস, সূক্ষ্ম বিশ্লেষণ আর ইম্প্রোভাইজেশন ওর কোচিংয়ের ইউএসপি। যা ফুটবলারদের স্বপ্ন দেখায়। বড় কিছু করার ইচ্ছে বাড়ায়। যা এ বার বাংলার কাজে লাগবে।
অনেকে এ-ও ভাবতে পারেন, সুভাষ-শিশির, দুই প্রজন্মের দুই সেরা বাঙালি ফরোয়ার্ডের টিডি-কোচের দায়িত্বে ইগোর লড়াই লাগবে। আমি বলছি লাগবে না। শিশিরের বরং নতুন কিছু করে দেখানোর তাগিদ থাকবে। পুলিশ দলে ও ভালই কোচিং করিয়েছে। ভৌমিকের ফুটবল থেকে পাওয়ার কিছু নেই। বরং দেওয়ার আছে। শিশিররা সুভাষের সঙ্গে কাজ করলে আগামী দিনে কোচ হিসাবে এগিয়ে যাওয়ার আরও রসদ পাবে।
তা হলে কি জুটির সামনে কোনও নেগেটিভ ফ্যাক্টর নেই? আছে। সেটা হল, একঝাঁক নবীন ফুটবলার। এদের নিয়ে যুদ্ধ জিততে হবে। ভৌমিককে একটা কথাই বলব, টুর্নামেন্ট শুরুর আগে অন্তত ১০-১২ সপ্তাহ ট্রেনিং করিও। যদিও অন্য টুর্নামেন্টের ফাঁসে আটকে এখন তা হয়ে ওঠে না। কিন্তু ভৌমিককে চেষ্টা করতেই হবে। প্র্যাক্টিসের কোনও বিকল্প নেই। ঠিক ভাবে তৈরি হতে পারলে বাংলা জাতীয় ফুটবলে ফের মস্তানি করবে।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.