মাদক খাইয়ে লুঠ, উদ্ধার ৩ ট্রেনযাত্রী
দূর রাজ্যে গিয়ে রক্তজল ঝরিয়ে টাকা আয় করে বাড়ি ফিরছিলেন তাঁরা। মাঝপথে তাঁদের সঙ্গে আলাপ জমিয়ে মাদক মেশানো খাবার খাইয়ে সর্বস্ব লুঠ করে নিয়ে পালাল অপরিচিত এক যুবক। ফের রামপুরহাট স্টেশনে এমন ঘটনায় আক্রান্ত তিন অচৈতন্য যাত্রী উদ্ধার হলেন। তবে একদিনে নয়, পরপর দু’ দিন কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই এমনটাই ঘটতে দেখা গেল রামপুরহাট স্টেশনে। সোমবার সন্ধ্যায় অচৈতন্য অবস্থায় দু’জন যুবককে উদ্ধার করার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ভোরের দিকে আরও এক মাঝবয়সী যাত্রীকে একই অবস্থায় দেখতে পান রেল পুলিশকর্মীরা। তিনজনকেই রেলের তরফে রামপুরহাট মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।
গত বছরই একই রকম ঘটনায় চিকিৎসাধীন থাকার পরে হাওড়ার এক বাসিন্দার প্রাণহানিও ঘটে। ওই ঘটনার পরে স্টেশনগুলিতে এ ধরনের ঘটনা নিয়ে যাত্রী সচেতনতা বাড়ানো হলেও কেপমারদের দৌরাত্ম্য কমাতে পারেনি রেল পুলিশ।
রেল পুলিশ সূত্রের খবর, সোমবার সন্ধ্যায় রামপুরহাট স্টেশনে ঢুকলে শিয়ালদহ-রামপুরহাট গয়া প্যাসেঞ্জার ট্রেন থেকে দু’জন যুবক অচৈতন্য অবস্থায় উদ্ধার হন। তাঁদের রামপুরহাট হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। প্রাথমিক ভাবে পুলিশ দুই যুবকের নাম ঠিকানা কিছুই জানতে পারেনি। তাঁদের কাছ থেকে কোনও ব্যাগ বা অন্য কিছু সামগ্রীও উদ্ধার হয়নি বলে রেল পুলিশ জানিয়েছে। পরে এক যুবকের প্যান্টের পকেট থেকে একটি ডায়েরি পেয়ে তাতে থাকা টেলিফোন নম্বর দেখে যুবকটির বাড়ির সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। রাতেই যুবকটির বাড়ির লোকজন হাসপাতালে পৌঁছন। এরপরে পুলিশ অন্য জনেরও নাম-ঠিকানা জানতে পারে। রেল পুলিশ জানিয়েছে, বিষ্ণু মাল ও সুরেশ মাল নামে ওই দুই যুবকের বাড়ি নলহাটির পাইকপাড়া গ্রামে। রাতের দিকে জ্ঞান না থাকলেও মঙ্গলবার সকালে অসংলগ্ন কথাবার্তায় বছর পঁচিশের যুবক সুরেশ বললেন, “আমরা দু’জনে মুম্বইয়ে রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ করে তিন মাস পরে বাড়ি ফিরছিলাম। সোমবার দুপুরে বর্ধমান থেকে শিয়ালদহ-রামপুরহাট ট্রেনে চেপেছিলাম। কামরায় এক অপরিচিত যুবক আলাপ জমিয়ে জোর জবরদস্তি করে ট্রেন ছাড়ার কয়েক মিনিট আগে বিস্কুট ও জল খাওয়ায়। এরপরে ট্রেন চলতে শুরু করার পরে কী হয়েছে, কিছুই জানি না।” সুরেশ আরও জানায়, তাঁর কাছে থাকা ব্যাগে কাজ করে জমানো ৫ হাজার টাকা ছিল। সেই ব্যাগের আর কোনও হদিশ নেই। হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে থাকা বিষ্ণুর জ্ঞান ফিরলেও সে কোনও কথা বলতে পারেনি। তাঁকে দেখতে আসা স্ত্রী তুলাবতী মাল বলেন, “সোমবার দুপুরে ট্রেনে চাপার আগেই ওর সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছিল। তারপরে আর যোগাযোগ করতে পারছিলাম না। এখন দেখে নিশ্চিন্ত লাগছে।” তবে এলাকায় তিন বছর ভাল বৃষ্টি না হওয়ায় চাষের অবস্থা খারাপ ছিল। “বিষ্ণু সংসার চালাতে মুম্বই গিয়ে কষ্ট করে টাকা রোজগার করেছিল। সেই রোজগারের টাকা দুষ্কৃতীরা এ ভাবে লুঠ করে নিল!”— দুঃখ ঘুঁচছে না তুলাবতীর।
এ দিকে এই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই সোমবার ভোরে রামপুরহাট স্টেশনে ডাউন কাঞ্চনকন্যা এক্সপ্রেস থেকে বর্ধমানের বাসিন্দা রাজেশ্বর দুবে নামে এক প্রৌঢ়কে অচৈতন্য অবস্থায় উদ্ধার করে রেল পুলিশ। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে রামপুরহাট হাসপাতালে ভর্তি করনো হয়। বেলার দিকে অবশ্য তাঁকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করতে হয়। এ দিনই সন্ধ্যায় রেল পুলিশের হাওড়া বিভাগের সুপার মিলনকান্ত দাস বলেন, “ঘটনার কথা জেনেছি। আমরা কেসও শুরু করেছি। বহু ক্ষেত্রেই এই ধরনের অপরাধের ক্ষেত্রে জড়িত দুষ্কৃতীরা ধরা পড়েছে। তবে ছাড়া পেলেই তারা ফের একই কাজ শুরু করে।” রামপুরহাটের দু’টি ঘটনার ক্ষেত্রে এমনই কেউ যুক্ত কিনা তা খতিয়ে দেখছে রেল পুলিশ।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.