মাঝ বর্ষাতেও দামোদরে মাছ নেই,
সংসার চালানো দায় মৎস্যজীবীদের
মাছগুলো সব গেল কোথায়?
টাটকা মাছের খোঁজে রণডিহাতে এসেছিলেন পানাগড়ের এক রেঁস্তোরার মালিক গৌতম ধীবর। কিন্তু সারা মাছের বাজার ঘুরেও মনের মতো মাছ পেলেন না তিনি। জানালেন, ভাল মাছ না মেলায় দুপুরের মেনুতে মাছের পদে কাটছাঁট করতে হচ্ছে। ফলে কমছে খদ্দেরের সংখ্যা। গৌতমবাবুর মতোই দামোদর তীরবর্তী বুদবুদের রণডিহার কাছে একটি গ্রাম সতীডাঙার বাসিন্দাদেরও এখন মাথায় হাত। কারণ, ভরা বর্ষাতে জাল নিয়ে দামোদরের বুক চিরে ফেললেও মনের মতো মাছ উঠছে না। গ্রামবাসীরাই জানান, রোজগার না হওয়ায় বাধ্য হয়ে মাছ ধরার পেশাও ছেড়ে দিচ্ছেন অনেকে।
খাতায় কলমে বর্ষাকাল হলেও এ বছর জেলায় বৃষ্টির তেমন দেখা নেই। ফলে শুধু যে চাষের ক্ষতি হচ্ছে তাই নয়, রোজগারে টান পড়ছে মৎস্যজীবীদের। সতীডাঙার ৬০ ঘর বাসিন্দাদের প্রায় সকলেই মৎস্যজীবী। দামোদর থেকে মাছ ধরেই তাঁদের দিন গুজরান হয়। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দামোদর নদে সাধারণত আশ্বিন মাস পর্যন্ত ভালো মাছ পাওয়া যায়। কিন্তু এ বছর শ্রাবণের মাঝামাঝিতেও মাছের দেখা নেই। গ্রামবাসীরাই জানান, আগে বর্ষার সময় রণডিহাতে বেশ সুস্বাদু ইলিশ মাছ উঠত। কিন্তু বেশ কয়েকবছর ধরে ইলিশও সেভাবে আসছে না। সতীডাঙা গ্রামের এক প্রৌঢ় মৎস্যজীবী বদন বাগদি বলেন, “বাবার হাত ধরেই এই পেশায় আসি। আগে প্রচুর মাছ পাওয়া যেত। কিন্তু বৃষ্টি প্রায় না হওয়ায় এই বছর এখনও পর্যন্ত মাছের দেখা পাওয়া যায়নি।”

জলের ধারে জাল গুটিয়ে বেঁধে রেখেছেন জেলেরা।
বুদবুদের সতীডাঙায় বিকাশ মশানের তোলা ছবি।
তাঁর আপেক্ষ, “মাছ ধরা ছাড়া আমাদের উপাজর্নের কোনও পথ নেই।” বদনবাবুর স্ত্রী চিন্তাদেবীর কথায়, “একটি ভালো নৌকা বানাতে গেলে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা খরচ হয়। এরপরে যদি মাছ না পাওয়া যায় তাহলে আমাদের দিন গুজরান করাই মুশকিল হয়ে যায়।”
গ্রামের অন্যান্য মৎস্যজীবী রতন রাজবংশী, মণীন্দ্র রাজবংশী, মদন বাগদিরা জানান, তাঁদের সকলের মৎসজীবী কার্ড থাকলেও সরকার থেকে তাঁরা কোনও সাহায্য পাননি। নিজেরাই খরচ করে জাল তৈরি করেন। আর যাঁদের জাল তৈরির টাকা নেই, তাঁরা মহাজনের থেকে ধার করে জাল কেনেন। একে এত সমস্যা তার উপর রোজগারও সেরকম নয়, ফলে নতুন প্রজন্মের বেশিরভাগই এই পেশায় আসতে চাইছেন না। পুরনো মৎস্যজীবীরাও অনেকে বাধ্য হয়ে পেশা পরিবর্তন করছেন।
মাছের অভাবে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে স্থানীয় আড়তদারদেরও। স্থানীয় এক আড়তের মালিক সনাতন পাল বলেন, “মাছ বেশি না ওঠায় বাজারে মাছ পাঠাতে পারছি না। ব্যবসা মার খাচ্ছে। সমস্যার কথা জানে প্রশাসনও। গলসি ১ ব্লকের বিডিও ব্রততী মিত্র বলেন, “মৎস্যজীবীদের সমস্যা নিয়ে সংশ্লিষ্ট দফতরের সঙ্গে কথা বলব।” মৎস্যজীবীরা যাতে সরকারি সাহায্য পান সে বিষয়ে নজর দেওয়ার আশ্বাসও দিয়েছেন তিনি।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.