সল্টলেকের খালপাড়
ফেলে দেওয়া সদ্যোজাতকে খেল কুকুর
কুকুরের হানায় একটু একটু করে প্রাণশক্তি হারিয়ে ফেলছে এক সদ্যোজাত। কিন্তু কারও চোখেই পড়ল না সেই দৃশ্য। যত ক্ষণে পুলিশের কাছে খবর গেল, কেটে গিয়েছে প্রায় ঘণ্টা দেড়েক। শেষ সময়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করে। পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে।
সোমবার ভোরে ঘটনাটি ঘটে সল্টলেকের পূর্ব থানা এলাকায়। পুলিশ সূত্রে খবর, সল্টলেকের ২০৬ বাসস্ট্যান্ড এলাকায় কেষ্টপুর খালপাড়ে এ দিন ভোর ছ’টা থেকে সাড়ে ছ’টার মধ্যে ঘটনাটি ঘটেছে। সল্টলেকে ২০৬ বাসস্ট্যান্ড ধরে কিছুটা এগোলেই কেষ্টপুর যাওয়ার খেয়াঘাট। ভোর থেকেই বহু লোকে যাতায়াত করে ওই এলাকা দিয়ে। খালপাড়ে কেষ্টপুরের দিকেই সকালে কাপড়ে মুড়ে কেউ ওই সদ্যোজাতকে ফেলে যায়। এক প্রাতর্ভ্রমণকারী জানান, একটি কুকুর হয়তো শিশুটিকে মুখে করে খেয়াঘাট ধরে সল্টলেকের দিকে নিয়ে আসে। সেখানে আরও কয়েকটি কুকুর শিশুটিকে ঘিরে ধরে ক্ষত বিক্ষত করতে থাকে। তার পরে সে অবস্থাতেই দীর্ঘ ক্ষণ শিশুটি পড়ে থাকে বলে স্থানীয়দের ধারণা।
খালপাড় এলাকায় বসবাসকারীদের মধ্যে কয়েক জন জানান, দীর্ঘ ক্ষণ পড়েছিল শিশুটি। যখন তাঁদের নজরে পড়ে ঘটনাটি, তত ক্ষণে শিশুটির সারা শরীর পিঁপড়ের দল ছেঁকে ধরেছিল। কোনও মতে একটি কাপড় শিশুটির গায়ে জড়িয়ে দেওয়া হয়।
এত কাণ্ড হয়ে গেল অথচ ঘটনাস্থল থেকে দু-তিন মিনিটের হাঁটা পথে সল্টলেক পূর্ব থানায় খবর দেওয়ার কথা কারও মনে হয়নি। খবর কেন দেওয়া হয়নি, সে বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের তরফে কোনও জবাব মেলেনি। সূত্রের খবর, ঘটনাটি জানতে পেরে এক সাংবাদিক খবর দেন থানায়। তার পরেই পুলিশ ঘটনাস্থলে যায় বলে সূত্রের খবর। যদিও তত ক্ষণে পেরিয়ে গিয়েছে ঘণ্টা দেড়েক। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে শিশুটিকে বিধাননগর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা মৃত বলে ঘোষণা করেন। হাসপাতাল সূত্রে খবর, শিশুটি হাসপাতালে আনার আগেই মারা গিয়েছিল। কুকুরের কামড়ে শিশুটির একটি পা, বুক ও পেটের এক দিকের অংশ পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
যদিও এক পুলিশকর্তা জানান, ভোরেও টহলদারি ছিল। সকালের দিকে পুলিশের শিফ্ট বদল হয়। ফলে সে সময়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ ছিল না। শিশুটিকে প্লাস্টিক জাতীয় কিছুতে জড়িয়ে ফেলে যায় কেউ। তার পরে কুকুরে টানাটানি করেছে। অনেকেই ঘটনাস্থল দিয়ে যাতায়াত করেন। হয়তো কেউ খেয়াল করেননি।
কেউ খেয়াল করলে যে এমনটা ঘটত না, মনে করেন স্থানীয় ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তথা বিধাননগর পুরসভার চেয়ারপার্সন কৃষ্ণা চক্রবর্তীও। তিনি বলেন, “ঘটনাটি দুঃখজনক। কেউ দেখে থাকলে শিশুটিকে তার বাঁচানো উচিত ছিল। আমি হলে তা-ই করতাম। তবে মনে হয় কেউ খেয়াল করেননি। খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে আমাদের ওয়ার্ডের ছেলেরা যায়। পুলিশও ব্যবস্থা নেয়।”
সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। তবে ওই খেয়াঘাটে সিসিটিভি না থাকায় কে বা কারা ওই শিশুটিকে ফেলে গেল, সে বিষয়ে এখনও কিছু জানতে পারেনি পুলিশ। স্থানীয়দের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
আগেও সল্টলেকে শিশু ফেলে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। তবে তাদের বাঁচানো গিয়েছিল। এ দিনের ঘটনা নিয়ে সল্টলেক ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক কুমারশঙ্কর সাধু বলেন, “কিছু বলার নেই। মানুষ নৈতিকতা ভুলে যাচ্ছে।”
সমাজতত্ত্বের শিক্ষক অভিজিৎ মিত্র বলেন, “দিন দিন সামাজিক দায়িত্ব নেওয়ার প্রবণতাই কমে যাচ্ছে সার্বিক ভাবে। নিজেকে দায়মুক্ত রাখাই অভ্যাস করছে মানুষ। সময়, শ্রম সবই তো বাঁচানো যায় তাতে।”
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.