চিত্রকলা ও ভাস্কর্য ১...
বাস্তবকে সঙ্গী করেই যেন ফুটে ওঠে সংলাপ
ম্প্রতি ‘মায়া আর্ট স্পেস’ গ্যালারির দ্বিতীয় সম্মেলক প্রদর্শনীটি অনুষ্ঠিত হল আলোকচিত্র নিয়ে। আলোকচিত্র চিত্রকলারই সমান্তরালে দৃশ্যকলার স্বতন্ত্র একটি মাধ্যম হিসেবে মর্যাদাময় হয়ে উঠেছে ইদানীং। চিত্রকলার তুলনায় অনেক নবীন এই মাধ্যমটির নির্ভর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উপর। এর সঙ্গেই ব্যক্তিশিল্পীর অন্তর্দৃষ্টির খেলা চলে। দৃশ্য ও দৃশ্যাতীতের পারস্পরিক সংলাপ আলোকচিত্রের কেন্দ্রীয় বৈশিষ্ট্য। সে কারণেই হয়তো আলোচ্য প্রদর্শনীর শিরোনাম ‘সিন-আনসিন’। বাংলা করে বলা যায় ‘দৃশ্য ও দৃশ্যাতীত’। ৩৮ জন আলোকচিত্রীর ছবি নিয়ে এই প্রদর্শনী। এর মধ্যে সত্যজিৎ রায়ও রয়েছেন। কয়েক জন প্রখ্যাত আলোকচিত্রীর পাশে সন্নিবিষ্ট হয়েছেন নবীন ও উদীয়মান শিল্পীরাও।
সত্যজিতের দু’টি ছবির মধ্যে একটি তোলা হয়েছিল ১৯৬৭ সালে। সাদা-কালো ফিল্মে সাধারণ ক্যামেরায় তোলা পুরীর সমুদ্রতীরের নিসর্গ। সমুদ্রসৈকত ছবিটির বিষয়। বেলাভূমি ছড়িয়ে আছে। দূরে সমুদ্রের জলরাশি তুলনায় অস্পষ্ট। সৈকতে বালির উপর একটি নৌকার অল্প কিছু অংশমাত্র দৃশ্যমান। তলায় ঘুমিয়ে আছে এক জন মানুষ। নৌকার শীর্ষ থেকে মোটা দড়ি নেমে এসে ভূমি স্পর্শ করেছে। তৈরি হয়েছে অসামান্য এক ত্রিকোণ। দূরে সমুদ্রের অনেকটা কাছে আর একটি নৌকা। আর সবটাই সাদা-কালোয় বিভাজিত শূন্য পরিসর। দ্বিতীয় ছবিটি রঙিন। ১৯৭৩-এ তোলা ‘সোনার কেল্লা’ শ্যুটিং-এর সময়। রাজস্থানের স্থাপত্য। সিঁড়ি উঠে গেছে। পাশে দাঁড়িয়ে ছোট্ট একটি বালিকা। বাস্তবের ভিতরের দৃশ্যাতীত মায়াটুকু দু’টি ছবিরই প্রাণ।
জ্যোতিষ চক্রবর্তীর ১৯৮০-তে তোলা একটি সাদা-কালো ছবিতে হেনরি কার্তিয়ের ব্রেসোঁ ও বসন্ত চৌধুরীকে দেখা যাচ্ছে। বাঁ পাশে ব্রেসোঁ স্থাপত্যসম অটলতার প্রতীক। ঘনীভূত অন্ধকারে গড়ে ওঠে ত্রিকোণে সন্নিবিষ্ট তাঁর শরীর। ডান পাশে বসন্ত চৌধুরীর মুখ অনেকটা আলোকিত। মধ্যবর্তী অংশে আলোকিত শূন্য পরিসরের ব্যঞ্জনা। নিমাই ঘোষের ১৯৭২-এ তোলা একটি ছবিতেও সত্যজিতের উপস্থিতি। তিনি তখন বিনোদবিহারীকে নিয়ে ‘ইনার আই’ তৈরির কাজে ব্যস্ত। বিনোদবিহারীর একটি ফ্রেমে বাঁধানো ছবি দেওয়ালে ঠিক করছেন। পিছন থেকে দেখা যাচ্ছে তাঁকে। তাঁর দু’টি ছায়া পড়েছে দেওয়ালে। এই ছায়াদু’টির নির্মাণেই আলোকচিত্রীর মুনশিয়ানা। সত্যজিৎকে বিষয় করে আর একটি ছবি আছে হীরক সেনের ১৯৭৩-এ তোলা। শিরোনাম ‘এডিটিং ফর সোনার কেল্লা।’ দৃশ্যই স্বয়ম্ভর এখানে। এই দৃশ্যাতীতের অসামান্য ব্যঞ্জনায় সমৃদ্ধ অতনু পালের ‘ব্লোইং অ্যারো’ শীর্ষক ছবিটি। ক্যানভাসে ছাপা সাদা-কালো ছবি। দৃশ্যত ‘অ্যারো’ বা তির কোথাও নেই ছবিটিতে। জলের উপর দিয়ে যাচ্ছে একটি গ্রামীণ বালক। ছায়াময় মূর্তি। জলে তাঁর ছায়া কাঁপছে। তাঁর চলমানতা জলকে কৌণিক ভাবে আন্দোলিত করছে। তিরের গতি ব্যঞ্জিত হয়েছে তাতে। অসামান্য ঋদ্ধতায় জলের শূন্য পরিসরের আলোকে খেলিয়েছেন অতনু।
শিল্পী: সত্যজিৎ রায়
উৎপল সরকারের ‘ফ্লাইং হাই’ শীর্ষক ছবিটিতেও রয়েছে জল। হরিণটি লাফ দিয়ে ছুটছে জল ছিটিয়ে। এখানে বরং জলবিচ্ছুরণ থেকে তৈরি হচ্ছে একটি তির। বনের ছায়াময়তার মধ্যে আলোর ব্যঞ্জনা। বনের চাপা ছায়া এখানে দৃশ্যাতীতকে যেন একটু আড়ষ্ট করছে। বন্যপ্রাণী নিয়ে তোলা সলিল বেরার ছবিটি ভয়াবহ। একটি চিতাবাঘ এক জন মানুষের ঘাড় কামড়ে ধরেছে। সবটাই ‘দৃশ্য’ এখানে। নীলাঞ্জন রায়ের ‘হোলি’ শীর্ষক ছবিতে আবার বাস্তবতাকে বিমূর্তায়িত করার প্রয়াস। নানা রঙের আবির উড়ে রঙিন করেছে বাতাস। মুগ্ধ হওয়ার মতো একটি ছবি সন্তোষ বাজগাড়িয়ার ‘শরৎ’। ২০০৬-এ তোলা পুরুলিয়ার নিসর্গ। বিস্তীর্ণ পরিসরে দিগন্ত বিস্তৃত কাশফুল ফুটে আছে। মাঝখানে বাউল নেচে নেচে গান গাইছে। তাঁদের ঘিরে বৃত্তাকারে দাঁড়িয়ে আছে গ্রামীণ মানুষ। কাজি নাসির সুপরিচিত চিত্রশিল্পী। স্বাভাবিকতার আঙ্গিকে অত্যন্ত দক্ষ। ‘অন দ্য এজ’ শিরোনামে তাঁর ছবিটিতে পাহাড়ি নিসর্গে একটি হরিণের উপস্থিতি। প্রকৃতিই পূর্ণ আধিপত্যে বিরাজমান এখানে। প্রকৃতি নিজেই তৈরি করে যে রহস্য, তাকে ক্যামেরাবন্দি করেছেন মধুছন্দা সেন। একটি গাছের ভাঙা ডাল তৈরি করেছে রহস্যময় এক পশুমুখ। মূর্তকে বিমূর্ততায় ব্যঞ্জিত করেছেন আঁন্দ্রে ওয়েইসার, জি.এম.বি আকাশ, দেবল সেন, কাজি অনির্বাণ, মালা মুখোপাধ্যায়, প্রকাশ দুবে, শঙ্খ কর, সৌমিত্র দত্ত, সুচেতা দাস প্রমুখ শিল্পী।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.